৮ দশমিক ৮৬ ভোটে তো উদযাপনের কিছু নেই, আছে আত্মজিজ্ঞাসার


নিউজ ডেক্স প্রকাশের সময় : জুলাই ২২, ২০২৩, ১১:৪১ পূর্বাহ্ন
৮ দশমিক ৮৬ ভোটে তো উদযাপনের কিছু নেই, আছে আত্মজিজ্ঞাসার

নন-ভারবাল কমুনিকেশন ও বডি ল্যাঙ্গুয়েজ মানব সভ্যতার সবচেয়ে প্রাচীন যোগাযোগ ভাষা। সম্প্রতি ঢাকা-১৭ নির্বাচনে মাত্র ৮.৮৬ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হেভিওয়েট প্রার্থী আরাফাত ভোটের ফল প্রকাশের পর দুই হাতের মধ্যমা ও তর্জনী দিয়ে যে উলটো ভি দেখিয়েছেন; তা কর্কশ বা রুড হিসেবে পরিগণিত সভ্য পৃথিবীতে।
এই বাংলাদেশেই একাত্তরের মানবতা বিরোধী অপরাধী কাদের মোল্লা এমন “উলটো ভি” দেখিয়ে নিন্দিত হয়েছিলেন। নাতসি জমানায় হিটলারের অনুসারিরা ও ফ্যাসিস্ট জমানায় মুসোলিনির অনুসারীরা প্রতিপক্ষকে উলটো ভি দেখানোর খলতার জন্য ইতিহাসে নিন্দিত।

হাতের মধ্যমা ও তর্জনী দিয়ে ভি দেখানো বিজয়ের চিহ্ন। কিন্তু একে উল্টোদিকে ঘুরালে তা অপমানসূচক হিসেবে বিবেচিত ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়ায়। এরকম উলটো ভি প্রদর্শন সভ্য যোগাযোগে সবসময় এড়িয়ে চলা হয়।

ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে জয়ের সঙ্গে ছবি দিয়ে নিজেকে প্রধানমন্ত্রী পরিবারের অত্যন্ত কাছের বন্ধু হিসেবে পরিচয় করানো, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিউদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, চিত্রনায়ক ফেরদৌসসহ শোবিজের বড় তারকাদের নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর পরেও মাত্র আট দশমিক আট ছয় শতাংশ ভোট নিঃসন্দেহে মি আরাফাতকে ব্যথিত করেছে।

আওয়ামী লীগের স্থিতিশীল সমর্থন ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ বলে দাবি করা হয়। ফলে এই উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের লোকেরাই মি আরাফাতকে ভোট দেননি; এটা বিক্ষুব্ধ হবার মতোই ঘটনা। কিন্তু যেহেতু মি আরাফাত অনেকদিন ধরেই নিজেকে শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দেন; সেই পরিচয়ের স্বার্থে উলটো ভি দেখিয়ে তরুণদের অমার্জিত আঙ্গুলির কুশিক্ষা প্রচার শোভন হয়নি বলে প্রতীয়মান হয়।

বাংলাদেশের কুতসিত রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে আঙ্গুলির অন্ধকার চলছে একবিংশের আলোয়। মি আরাফাত টিভি টকশোতে সরকারের ন্যায়-অন্যায় সবকিছুর অন্ধ জাস্টিফিকেশন দিতে গিয়ে ভারবাল কমুনিকেশনে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেন। মিডিয়া নৈতিকতার আন্তর্জাতিক মান বিবেচনা করলে উনি টিভি মিডিয়ায় কথা বলার ব্যাকরণ না জেনেই কাজটা করেন। বাংলাদেশ যেহেতু সাংস্কৃতিক অবনমনের দেশ; শুধু টেকাটুকা নির্ভর অর্ধশিক্ষিতের ক্ষমতার লীলাভূমি। এইখানে সভ্য জগতের সব নিয়মই অচল। অসভ্যতাই বাহাদুরী হিসেবে স্বীকৃত।

রাজনীতি করতে হয় মানুষকে নিয়ে মানুষের জন্য। মানুষকে ভালোবাসতে হয়; তাকে ভয় দেখাতে নেই। মানুষের সঙ্গে শিষ্টাচারের সঙ্গে কথা বলতে হয়। তাকে ধমকাতে নেই। শিষ্ট আচরণ শেখার কোন বয়স নেই। ইচ্ছাশক্তি থাকলে আমরা শৈশবের পরিপার্শ্বের কারণে যা শিখিনি; সভ্যতার আলো থেকে তা শিখতে পারি বয়স এমনকী পঞ্চাশ পেরোনোর পরেও।

(Disclaimer for FB’s Artificial Intelligence: The references of Hitler and Mussolini have been used to criticize their autocratic non-verbal communication signs.)

মাসকাওয়াথ আহসান
সাংবাদিক, লেখক, বিশ্লেষক
ই-সাউথ এশিয়া।

ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন: