হিট অফিসার নিয়োগ এবং আমাদের দ্বিচারিতা


নিউজ ডেক্স প্রকাশের সময় : মে ৭, ২০২৩, ৮:২৮ অপরাহ্ন
হিট অফিসার নিয়োগ এবং আমাদের দ্বিচারিতা

সম্প্রতি ঢাকা সিটি কর্পোরেশন উত্তর এর হিট অফিসার নিয়োগ ‘টক অফ দ্যা কান্ট্রি’তে পরিণত হয়েছে।

বাবা প্রতিষ্ঠানের প্রধান হলে সেই প্রতিষ্ঠানে সন্তানেরা চাকুরী পেতে পারে না, আলাপটা কি এই? নিশ্চয়ই আলাপটা সেটা নিয়ে নয়; আলাপটা দুর্নীতি নিয়ে। আলাপ টা যদি নিয়োগে দুর্নীতির বিষয়ে হয়, তবে সেই আলাপটাই সামনে আনা জরুরী। কেউ কিন্তু বলছে না বাবা দুর্নীতি করে সন্তানকে পদে বসিয়েছে কিন্তু ইঙ্গিত টা তাইই। অন্য পক্ষে নিয়োগ প্রাপ্তা সন্তান মেয়ে হওয়ায় সেখানে একধরনের সুড়সুড়ির ইংগিত চলে আসছে কোন না কোন ভাবেই। ফলশ্রুতিতে হিট অফিসার নিয়োগ সংক্রান্ত আলাপটা দাঁড়াচ্ছে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কর্তৃত্ব পরায়ণতা হিসাবে অথবা সেক্সচুয়াল হেরেসমেন্ট হিসাবে। এবং এ দুইটি অভিযোগই ঠিক।

একজন নারীর নিশ্চয় স্বাধীনতা আছে তার পছন্দ মত পোশাক, কাজ বেছে নিবার এবং করবার। অফিসে কোন না কোন পিতা অফিসের কর্তা হবেন কোন না কোন সন্তানই হবেন সেই অফিসের কর্মচারী, এ বিষয়ে নিশ্চয় কোন প্রশ্ন বা দ্বিমত থাকবার কথা নয়।

তাহা হইলে মহানগর সিটি কর্পোরেশন উত্তরে ‘হিট অফিসার নিয়োগ’ টক অফ দা কান্ট্রি হল কেন? কারণ এই – আমাদের প্রশাসনের সকল স্তরে অনিয়ম দুর্নীতি বিরাজিত। সরকার প্রধান তার একক ক্ষমতা থাকার কারণে তার আত্মীয় স্বজনকে দলিয় পদে বা সরকারি পদে নিয়োগ দিতে পারেন এবং দেন। বিরোধী দলও এই একই প্রক্রিয়ার বাহিরে নয়।

এই যে হিট অফিসার নিয়োগ নিয়ে আমরা যারা এতো এতো কথা বলছি তারাও কি সেই প্রক্রিয়ার বাহিরে? আমরা তো সকলেই ধরেই নিই, চাই এবং দাবী করি নেতার ছেলে বউ মেয়ে নেতা হবে এবং এর কোন বিকল্প নেই থাকতে পারে না।

বড় দল আওয়ামীলীগ কে টিকিয়ে রাখতে দলিয় প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনাকে দেশ এনে দলের সভাপতি করা হল। ভাগ্যিস শেখ মুজিবুর রহমানের কোন পুত্র সন্তান জীবিত ছিলনা বলেই ছেলে পাবে দলিয় সভাপতির পদ নাকি মেয়ে টানাপোড়ন আমাদের দেখতে হয় নাই।

দলিয় প্রধান জিয়া উর রহমানের জায়গা নিলো তার স্ত্রী খালেদা জিয়া এবং এর পরবর্তীতে দলের জায়গা নিশ্চিত হয়ে আছে তাদের সন্তান তারেক জিয়া এর জন্য। তারেক জিয়ার পর সে পদ কে অধিকার করবে তাও প্রায় নিশ্চিত দেশের জনগণ এবং দলিয় নেতা কর্মী মনে এবং মেনে নিয়েই এখন থেকেই সামনে আনছে তার নাম, জায়মা রহমান। তারেক জিয়ার ছেলে নাই বলেই তার মেয়ের নাম সামনে আনছে কোন দ্বিধা ছাড়া। দলিয় নেতা কর্মী সেটা মেনে নিচ্ছে একবাক্যে।

লে জে এরশাদের বেলায় যেহেতু তার অফিসিয়াল স্ত্রী দুজন সে কারণে উত্তরাধিকার আইনে একটা ঝামেলায় পড়েছে দল। দুই স্ত্রীর দলিয় প্রধানের টানাপোড়নে জিএম কাদের ভাই হিসাবে দলিয় প্রধানের লড়ায়ে নেমেছে, তার এই লড়াই কিন্তু আমাদের দেশের উত্তরাধিকার আইন দিয়েই সিদ্ধ।

দেশে পরিচালনা পদ্ধতিতেই আমরা এই প্রক্রিয়া চালু রেখে যদি ‘হিট অফিসার নিয়োগ’ সহ সকল নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ‘ফেয়ার নিয়োগ’ কল্পনা করি তবে কি সেটা দ্বিচারিতা হবে না?

আগে স্থির করুন আপনি কেমন দেশ চান এবং আপনার দেশ পরিচালিত হবে আপনার শিশুসুলভ আবেগ দিয়ে নাকি নিয়ম নীতি মেনে। তারপর তুলুন নৈতিকতার প্রশ্ন নতুবা সকল নীতি নৈতিকতা হয়ে পড়বে অনৈতিক। ঠিক যেভাবে বর্তমানের বাংলাদেশ চলছে, ঠিক সেই রকম।

রাষ্ট্র সংস্কার লাগবেই। এই রাষ্ট্র পরিচালনার পদ্ধতি ঠিক না করে, সকল ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা নিশ্চিত না করে আপনি আমি কোন “পরিচ্ছন্ন” (ফাইন এন্ড ফেয়ার) নিয়োগ প্রত্যাশাও করতে পারি না।

আদীল এ হোসেন
রাজনীতিক লেখক ও বিশ্লেষক

ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন: