তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান, রিশাদ হোসেনরা দুর্দান্ত বোলিংয়ে লক্ষ্যটা রাখলেন নাগালে। পরে শুরুর ধাক্কা সামলে দলকে কক্ষপথে পেরালেন লিটন কুমার দাস ও তাওহিদ হৃদয়। শেষ দিকে দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে গেলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করল বাংলাদেশ।
ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় শনিবার শ্রীলঙ্কাকে ২ উইকেটে হারিয়েছে টাইগাররা। ১২৫ রানের লক্ষ্য ৬ বল হাতে রেখে পূরণ করে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। ১৭ রানে ৩ উইকেট নিয়ে জয়ের নায়ক রিশাদ হোসেন।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কাকে প্রথমবার হারাল বাংলাদেশ। এর আগে দুটি ম্যাচ হেরেছিল তারা।
২৪ বলে দরকার ছিল ১৭ রান, হাতে ৫ উইকেট। এমন সহজ পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে চাপ সামলাতে না পেরে। মাহমুদউল্লাহ অবশ্য সেই স্নায়ুচাপ ধরে রাখেন। তার ১৩ বলে ১৬ রানের অপরাজিত ইনিংসটি তাই মহাগুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে শেষ পর্যন্ত।
জয়ের জন্য শেষ ২ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১১ রান। দাসুন শানাকার প্রথম বলে ছক্কা মেরেই চাপ অনেকটাই সরিয়ে দেন মাহমুদউল্লাহ। স্ট্রাইক পেয়ে সজোরে ব্যাট ঘুরান তানজিম হাসান। বল স্টাম্পের বাইরে থাকায় বিপদ ঘটেনি।
পরের বলে সিঙ্গেল নিয়ে স্ট্রাইক দেন মাহমুদউল্লাহকে। মনে হচ্ছিল ম্যাচ গড়াবে শেষ ওভারে। বাউন্সারে মাহমুদউল্লাহকে ফেরানোর আশায় শ্রীলঙ্কা রিভিউ নিয়ে ব্যর্থ হয়। উল্টো ওয়াইড থেকে বাংলাদেশ পায় এক রান। পরের বলে ২ রান দিয়ে ম্যাচ শেষ করেন অভিজ্ঞ মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান।
বাংলাদেশের টপ অর্ডার এদিনও সুবিধা করতে পারেনি। প্রথম দুই বলে দুই ওপেনার সৌম্য সরকার (২ বলে ০) ও তানজিদ হাসান (৬ বলে ৩) ফেরার পর ষষ্ঠ ওভারে দলীয় ২৮ রানে ফেরেন দলপতি শান্তও (১৩ বলে ৭)।
তবে তিনে নামা লিটন চাপ সামাল দিয়েছেন শুরুতে। হৃদয়কে নিয়ে গড়েছেন ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া ৩৮ বলে ৬৩ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি।
জুটিতে অবশ্য হৃদয়ের অবদানই বেশি। এই মিডলঅর্ডার ২০ বলে ৪ ছক্কা ও ১ চারে করেন ৪০ রান। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার করা একই ওভারে হাঁকান টানা তিন ছক্কা। পরের বলে লাইন মিস করে এলবিডব্লিউ হয়ে যান হৃদয়। হাসারাঙ্গার পরের ওভারে একই আউট হন লিটনও। সাবেক তারকা বোলার লাসিথ মালিঙ্গাকে টপকে টি-টোয়েন্টিতে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী বোলার বনে যান হাসারাঙ্গা (১০৮টি)।
বাজে সময়ের মধ্যে যাওয়া লিটনের ব্যাট থেকে এদিন আসে ৩৮ বলে গুরুত্বপূর্ণ ৩৬ রান।
এই দুজনের পর সাকিবও ফেরেন দ্রুত। রিশাদ ও তাসকিনকে টানা দুই বলে ফেরান নুয়ান থুসারা। ৩ উইকেটে ৯১ রান থেকে বাংলাদেশের স্কোর হয়ে যায় ৮ উইকেটে ১১৩ রান। এরপর মাহমুদউল্লাহর সেই স্নায়ুচাপ লড়াই জয়ের গল্প।
দারুণ বোলিংয়ে ১৮ রানে ৪ উইকেট নেন পেসার থুসারা। হাসারাঙ্গা নেন ৩২ রানে ২ উইকেট। এর আগে পাওয়ারপ্লেতে ২ উইকেট হারালেও শ্রীলঙ্কার শুরুটা মন্দ ছিল না। এরপর ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করেও পারেনি তারা। বাংলাদেশ উইকেট তুলে নেয় সময়ত। বোলিংটা দুর্দান্ত হলেও ফিল্ডিংটা একেবারে নিখুঁত ছিল না। ওভার থ্রো থেকে এসেছে ৮ রান।
বল হাতে দিনটা মন্দ গেছে কেবল সাকিব আল হাসানের। কেবল দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে সব কটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলার রেকর্ড গড়া এই অলরাউন্ডার ৩ ওভারে দেন ৩০ রান।
রিশাদের কাছে চাওয়া ছিল মাঝের সময়ে উইকেট এনে দিয়ে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলে দেওয়া। সাহসী বোলিংয়ে দুর্দান্তভাবে সেই কাজটা করেছেন তরুণ এই লেগ স্পিনার। মাঝে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও জাগান এই ২১ বছর বয়সী।
সব মিলিয়ে ৪ ওভারে ২২ রান দিয়ে রিশাদ নেন ৩ উইকেট। সময়মত উইকেট এনে দেওয়া মুস্তাফিজও ৩টি শিকার ধরেন স্রেফ ১৭ রানের খরচায়। তাসকিন নেন ২৫ রানে ২টি। প্রথম বিশ্বকাপে খেলা তানজিম হাসান সাকিবও শেষ দিকে পান উইকেটের দেখা।
পাথুম নিসাঙ্কার ২৮ বলে ৪৭ ছাড়া শ্রীলঙ্কার আর কেউই তেমন কিছু করতে পারেননি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা: ২০ ওভারে ১২৪/৯ (নিসাঙ্কা ৪৭, কুসাল ১০, কামিন্দু ৪, ধানাঞ্জয়া ২১, আসালাঙ্কা ১৯, হাসারাঙ্গা ০, ম্যাথিউস ১৬, শানাকা ৩, থিকশানা ০, পাথিরানা ০*, থুশারা ০*; তানজিম ৪-০-২৪-১, সাকিব ৩-০-৩০-০, তাসকিন ৪-০-২৫-২, মুস্তাফিজ ৪-০-১৭-৩, রিশাদ ৪-০-২২-৩, মাহমুদউল্লাহ ১-০-৪-০)
বাংলাদেশ: ১৯ ওভারে ১২৫/৮ (তানজিদ ৩, সৌম্য ০, লিটন ৩৬, শান্ত ৭, হৃদয় ৪০, সাকিব ৮, মাহমুদউল্লাহ ১৬*, রিশাদ ১, তাসকিন ০, তানজিম ১*; ধানাঞ্জয়া ২-০-১১-১, থুশারা ৪-০-১৮-৪, থিকশানা ৪-০-২৫-০ হাসারাঙ্গা ৪-০-৩২-২, পাথিরানা ৪-০-২৭-১, শানাকা ১-০-১১-০)
ফল: বাংলাদেশ ২ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: রিশাদ হোসেন
আপনার মতামত লিখুন :