রুগ্ন শিশুর লেখাপড়ার সহায়তা করছে রোবট


অনলাইন ডেক্স প্রকাশের সময় : জুলাই ১১, ২০২৪, ৩:২৫ অপরাহ্ন
রুগ্ন শিশুর লেখাপড়ার সহায়তা করছে রোবট

শিশু বয়সে দীর্ঘ রোগব্যাধী স্বাভাবিক জীবন দুর্বিসহ করে তুলতে পারে। জার্মানির এক স্কুলপড়ুয়ার সেই সমস্যা মেটাতে প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে সুফল পাওয়া যাচ্ছে। কিছুটা হলেও স্বাভাবিক জীবনের স্বাদ পাচ্ছে সে। ‘হ্যালো লিনুস, ভালো হয়েছে যে তুমি যোগ দিয়েছো। আমরা তোমার জন্য ওয়ার্কিং গ্রুপ স্থির করেছি। এবার শুরু করা যাক।’

বার্লিন শহরের স্কুল পড়ুয়া লিনুস হার্ডুং-এর চোখ, কান ও মুখ হয়ে উঠেছে এক মিনি রোবট। সেই রোবট সপ্তম শ্রেণির অসুস্থ শিশুটিকে বাসা থেকে ক্লাসে অংশ নেওয়া সম্ভব করছে। প্রায় ছয় মাস ধরে সেই ব্যবস্থা চলছে। সেই অভিজ্ঞতা সম্পর্কে লিনুস বলে, ‘‘শুরুর দিকে সবসময়ে এমন হতো। কিছু একটা বলার জন্য হাত তুললেই অ্যাড্রিনালিনের স্রোত বয়ে যেত। মনে ভয় ছিল, কিছু ভুল কথা বলে ফেললে কী হবে। আমার কাছে বিষয়টা নতুন ছিল। সংযোগ খারাপ হওয়ার ভয়ও ছিল। আর এখন সেই রুটিন দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে।”

বায়োলজি ক্লাসে আজ গ্রুপ ওয়ার্ক রয়েছে। শুরুতে কিছু সমস্যা দেখা যাচ্ছে। বাসায় বসেই ক্লাসে কী হচ্ছে, তা জানার জন্য লিনুস টাচপ্যাডের মাধ্যমে ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সব সময় প্রযুক্তি ঠিকমতো কাজ করে না। স্কুলের ইন্টারনেট সংযোগও তেমন শক্তিশালী নয়। ফলে ট্রান্সমিশন সব সময়ে ভালো হয় না।

মাঝে মধ্যে সমস্যা হলেও অবতার আসার আগে ১৩ বছরের এই স্কুল পড়ুয়ার জন্য হোমস্কুলিং অনেক কঠিন ছিল। লিনুসের মা সুসানে হার্ডুং বলেন, ‘‘আগে ছেলে কোনো কিছু করার তাগিদ অনুভব করতো না। বুঝতোও না, এখন কেন সব কিছু এমন হতে হবে। শিক্ষক বা শিক্ষিকা যখন বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলেন বা তাদের সঙ্গে গ্রুপ ওয়ার্ক করেন, সেটা একেবারে ভিন্ন অভিজ্ঞতা। একা বইয়ের সামনে বসে থাকার তুলনায় সেখানে অনেক বেশি আনন্দ পাওয়া যায়।”

জন্মের সময়ে হৃদযন্ত্রের ত্রুটি এবং পালমোনারি হাইপারটেনশন তো ছিলই। তার উপর করোনা মহামারির সময় তাকে প্রায় দেড় বছর বাসায় কাটাতে হয়েছে। অর্থাৎ সে ক্লাসে যেতে পারে নি। গত বছরের হেমন্তকালে হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুদের কেন্দ্রীয় সংগঠন তার অবতার সৃষ্টির জন্য অর্থ দিয়েছে। কারণ লিনুসের পক্ষে স্কুলে যাওয়া অত্যন্ত কঠিন কাজ। সুসানে হার্ডুং বলেন, ‘‘সমতল জায়গায় সে ধীরে ধীরে হাঁটতে পারে, সেটা কোনো সমস্যা নয়। সিঁড়ি চড়া তার জন্য কঠিন। স্কুলে লিফট না থাকায় তাকে অতি ধীরে চলতে হতো।”

লিনুস হার্ডুং নিজের অবস্থার বর্ণনা দিয়ে বলে, ‘‘দৌড়ানোও বড় এক সমস্যা। শুধু ক্লাসরুম বদলানোও স্ট্রেসের কারণ। সিঁড়ি বেয়ে উপরতলার ঘরে যাওয়ার কথা ভাবলেই চিন্তা হয়। এই অবতার তাই সত্যি অসাধারণ। আমাকে আর ক্লাসরুম বদলানোর স্ট্রেস নিতে হচ্ছে না।”

লিনুসের বন্ধুরা যে বিশেষ ধরনের ব্যাকপ্যাক পিঠে নেওয়া রোবটটিকে ব্রেকের সময়েও সঙ্গে নিয়ে যায়, এমনটাই কাম্য। অবতার শুধু দীর্ঘকাল অসুস্থ শিশুদের পড়াশোনাই নিশ্চিত করে না, তাদের সামাজিক যোগাযোগ অটুট রাখাও জরুরি। লিনুস বলে, ‘‘সত্যি মনে হয়, আমি যেন সেখানেই রয়েছি। জুম মিটিং-এর মাধ্যমে সেটা সম্ভব হতো না। অথবা তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগই থাকতো না। সত্যি স্কুলে যাওয়ার মতো অনুভূতি পাচ্ছি।”

গ্রীষ্মের ছুটির পর লিনুস সত্যি সেই খাঁটি অনুভূতি পেতে পারে। ওষুধে এত ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে, যে সে দ্রুত আবার ক্লাসে উপস্থিত থাকতে পারবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। তখন অবতার বরং ছুটিতে যেতে পারবে।

সূত্র: ডয়চে ভেলে।

ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন: