তার পিঠে রক্তজবার মত ক্ষত ছিল – আদীল এ হোসেন


অনলাইন ডেক্স প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ৩০, ২০২১, ৬:২৯ পূর্বাহ্ন
তার পিঠে রক্তজবার মত ক্ষত ছিল – আদীল এ হোসেন

অর্থী।
তাকে নিয়ে কেন এতো লুতুপুতু তুলুতুলু কেন? কেবল অর্থী ভালবাসে তার পোষা প্রাণীকে? আর কেউ ভালবাসে না? নাকি অর্থী হাল ফ্যাশনের কুত্তা ওয়ালীদের কোন বাচ্চা নয় বলেই, এতো এতো কথা?

করোনা কালে দীর্ঘ সময় লক-ডাউনের পর বেওয়ারিশ কুকুরগুলো – শহরের পাড়া মল্লার রাস্তায় মানুষ দেখলে ঘিরে ধরত। হাতের পোটলায় থাবা দিত। মানুষের চলার পথ আগলে গড়াগড়ি খেত, ক্ষুধার তাড়নায়।

অর্থীকে নিয়ে যে সময়টায় কথা হচ্ছে, ঠিক সেই সময়ে হাজারে হাজার অর্থীর বাবারা দিশেহারা। করোনা দিনে বন্যা আক্রান্ত শনিবারের কোরবানী ঈদের ঠিক আগের বৃহস্পতিবারে একটি হাটে যে পরিমাণ গরু, তাতে কেন জানি ভেসে উঠেছিল বিমর্ষ হতাশ শক্ত সুঠাম পুরুষের মুখ। হাটে গরু বিক্রি করতে নিয়েছে কিন্তু বিক্রি না হওয়ায়, গরু নিয়ে বাড়ি ফিরেছে। এমন মানুষকে গ্রামের মানুষ সহানুভূতি দেখাত কেন জানি! দু চার জন যে ফাজলামো করতনা তা নয়। বৃহস্পতিবারে ঠিক পরের দিন শুক্রবার সকালে – গরু শূন্য হাট। কোথায় গেল এতো গরু? চব্বিশ ঘণ্টার কম সময়ে সব গরু বিক্রি হয়ে গেল!?

মোহাম্মদপুরে আবাসিক নাকি কোন একটা এলাকায় গরুর হাট বসেছিল। পুলিশ পিটায়ে হাট তুলে দিল। গরু গুলো টেনে নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতা তার ডেরায় ঢুকালো। সিন্ডিকেট, সিন্ডিকেট। শত শত অর্থী অভুক্ত, দিশেহারা।

মানুষ প্রয়োজনেই তারই পোষা প্রাণী বিক্রি করে। আমাদের খাদ্য শৃঙ্খল নির্ভর করে এই প্রাণীদের উপর। বিকল্প নাই তা নয়, আছে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্থলচর প্রাণী -হাতি বেঁচে থাকে তৃণ ভোজী হয়ে। তবে কি সমাধান সেখানেই?

পশু ও গরু প্রেমীর ছবি দিয়ে যদি বলি – মানুষ পারে কি করে! তবে তা ইতরামো হবে নাকি স্ট্যান্ডবাজি হবে সেটা ভেবে দেখার সময়। বাংলাদেশে করোনা দিনে বন্যার ছোবলে যখন এমন লাখো লাখো অর্থীরা ভাসছে প্লাবনে।

অর্থীরা আছে বলেই আমরা বসে বাবুগিরি করি। হাই তুলে মানবিকতা / অমানবিকতা ছিটাই। অর্থীদের আবেগ ঘন ছবি দেখে আমারা আবেগায়িত হই।
কর্পোরেট বাণিজ্য আমাদের সামনে তুলে ধরে ভাইব্রেট করে এমন দু চারটি অর্থীর মুখ। বিশাল জনগোষ্ঠীর অর্থীদের দুঃখ, হতাশা, অভুক্ত বা কখনও কখনও আধপেটা মুখ আড়াল করতে।

অর্থীকে নিয়ে যতই বিচলিত হই না কেন মূলতই আমরা অর্থীদের অবজ্ঞা করি, অবহেলা করি। মাঝে মাঝে তাদের নিয়ে বিচলিত হই আমরা আমাদের পরিচয় গোপন করতে। লজ্জাকে আড়াল করতে। কৃষকের সন্তান হয়ে তাদের বুকে উন্নয়নের স্টিম রোলার চাপানোই মুল উদ্দেশ্য। তার প্রথম পাঠ – আমি আমার বাবা কৃষককে চাষা বলে ছোট করার পাঠ। দ্বিতীয় পাঠ শিখিয়ে দিয়েছে, চাপিয়ে দিয়েছে আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থা – সব চেয়ে বেশী বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে বিদেশে কর্মরত শ্রমিক এবং গার্মেন্টস সেক্টর।

অর্থীদের করোনা দিনে হাঁটতে হয় শত শত মাইল। গার্মেন্টস এ কাজে যোগ দিতে। আমরা আমাদের চারিপাশ প্রকম্পিত করে বলি – ঘরে থাকুন, সুস্থ থাকুন, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলুন।

বেমালুম ভুলে যাই অর্থীরা মানুষ। ওদের ক্ষুধা তৃষ্ণা ভালবাসার অনুভুতি আছে এবং এই অনুভূতিগুলি তাদের তাড়িয়ে বেড়ায় জ্যান্ত দানবের মতই।
আদীল এ হোসেন
ঢাকা

2021-01-30 06:29:31

ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন: