ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম – বিংশ শতাব্দীতে সংঘটিত বাঙালির সকল রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামের এক অবিসংবাদিত নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।
আজ গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ৬০তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ১৯৬৩ সালের ৫ ডিসেম্বর লেবাননের রাজধানী বৈরুতে মারা যান। তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আজ সকাল ৯টায় সুপ্রিম কোর্ট সংলগ্ন মরহুমের কবরে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ১৮৯২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতা হাইকোর্টের ছিলেন বিচারপতি স্যার জাহিদ সোহরাওয়ার্দি ও নামকরা উর্দু সাহিত্যিক খুজাস্তা আখতার বানুর কনিষ্ঠ সন্তান ছিলেন সোহরাওয়ার্দী। সফল রাজনীতিবিদ সোহরাওয়ার্দী কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা, সেন্ট জাভিয়ার্স কলেজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণ করেন।
বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে চিত্তরঞ্জন দাসের স্বরাজ পার্টিতে। যোগদানের মাধ্যমে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। তখন থেকেই সর্বভারতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপুর্ণ অবদান রাখতে শুরু করেন তিনি। ১৯২৩ এর বেঙ্গল প্যাক্ট স্বাক্ষরে যথেষ্ট ভূমিকা ছিল সোহরাওয়ার্দীর। এরপর ১৯২৪ সালে তিনি কলকাতা পৌরসভার ডেপুটি মেয়র নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তান গঠিত হলে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশেমের নেতৃত্বাধীন তৎকালীন বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের একাংশের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলীর কেএম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে `পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ` প্রতিষ্ঠিত হয়। পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন শামসুল হক। কারাবন্দী অবস্থায় আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর পুরো পাকিস্তানের ক্ষেত্রে সংগঠনটির নাম রাখা হয় নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ যার সভাপতি হন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী একজন বিচক্ষণ ও জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ ছিলেন। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান প্রণয়নে তাঁর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলীম লীগকে পরাজিত করা যুক্তফ্রন্ট গঠনে অন্যতম বড় ভূমিকা ছিল সোহরাওয়ার্দীর। এছাড়া পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন গণতন্ত্রের মানসপুত্র। ১৯৫৬ সালে চৌধুরি মোহাম্মদ আলির পদত্যাগের পর তিনি ১৯৫৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৫৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। পূর্ব বাংলার উন্নয়ন, সংখ্যা-সাম্যের ভিত্তিতে প্রণয়ন, উর্দুর সঙ্গে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের মতো গুরুত্বপুর্ণ বিষয়ে ভূমিকা রাখেন সোহরাওয়ার্দী।
শারীরিক সমস্যার কারণে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ১৯৬৩ সালে দেশের বাইরে যান এবং লেবাননের রাজধানী বৈরুতে অবস্থানকালে ১৯৬৩ সালের ৫ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যু বরণ করেন।
আরও পড়ুনঃ সু- সাহিত্যিক কাজী ইমদাদুল হকের ১৪২তম জন্মদিনের শুভেচ্ছা
আপনার মতামত লিখুন :