


কাজী গোলাম মুস্তাফা (কে. জি. মুস্তাফা):
মাতা মরহুমা রাহাতুন্নেছা, পিতা মরহুম কাজী আব্দুর রশিদ। জন্মঃ ১৯৪৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর, ফরিদপুর জেলার মাদারীপুর মহকুমার (বর্তমানে জেলা) শিবচর থানার বাঁশকান্দি ইউনিয়নের শেখপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত কাজী বংশের রক্ষণশীল একটি সাধারণ পরিবারে।
ভাই-বোন:- বর্তমানে এক ছোট ভাই ভাই কাজী কিবরিয়া, ২ ছোট বোন মাকসুদা বেগম, রুহিতাস বেগম
স্ত্রী-সন্তান:
স্ত্রীর নাম শামীমুন নাহার, বড় ছেলে: কাজী মোস্তফা মাহমুদ, মেজ ছেলে: কাজী আসিফ মোস্তফা, কনিষ্ঠ পুত্র : মরহুম কাজী আশিক মোস্তফা (মৃত্যু ২০১১)।
একমাত্র কন্যাঃ মুনা মোস্তফা । অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী মেয়ে মুনা মুস্তাফাই শিল্পীর কাজগুলো গুছিয়ে রেখেছিলেন।
শিক্ষা জীবণ:
ইস্ট পাকিস্তান কলেজ অব আর্টস এন্ড ক্রাফট্স, ঢাকা (বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউট) থেকে কমার্শিয়াল আর্টসে স্নাতক (১৯৬৪)। তাঁর শিক্ষা জীবনের শুরু মাতৃভূমি প্রত্যন্ত গ্রাম শেখপুরে। তিনি শেখপুর ফ্রি প্রাইমারি স্কুল, লক্ষীপুর ফ্রি প্রাইমারি স্কুল, ভান্ডারীকান্দি আছালত খাঁ মেমোরিয়াল হাইস্কুল (এ. কে. এম হাই স্কুল) এবং বরিশাল ব্রজমোহন ইন্সটিটিউটের (বি.এম.স্কুল) শিক্ষার্থী ছিলেন।
কর্মজীবন:
এই পর্বটা ছিল ঘটনাবহুল যার শুরু ১৯৬৪ সালে। এ জীবনে তিনি বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি ও প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে ডিজাইনার এবং ডিজাইন অ্যাডভাইজার পদে চাকরি করেছেন। আত্মকর্মসংস্থান হিসেবে একাধিক প্রতিষ্ঠানও গড়েছিলেন। এক সময় চলচিত্র জগতেও কাজ করেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কর্মস্থলের মধ্যে পাকিস্তান সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন, এশিয়াটিক অ্যাডভার্টাইজিং ফার্ম, এসোসিয়েটেড প্রিন্টার্স, ফাইজার ল্যাবরেটরিজ, পররাষ্ট মন্ত্রণালয়, কালার ডট্স গ্রাফিক্স এসোসিয়েটস অন্যতম।
শিল্পকর্ম:
নানা ধরণের বৈচিত্রময় ও নান্দনিক ডিজাইনের অসংখ্য কাজ করেছেন তিনি, যার অধিকাংশ ছিল দেশের জন্য নিবেদিত। এর মধ্যে তাঁর উল্লেখযোগ্য ও তাৎপর্যপূর্ণ শিল্পকর্ম হচ্ছে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের নিজস্ব মুদ্রা ও ডাকটিকিটের কতিপয় নকশা প্রণয়ন করে ইতিহাসের অংশীদার হয়ে থাকা। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ডাক বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিজাইন অ্যাডভাইজরি কমিটির একজন সম্মানিত সদস্য এবং COLLECTOR পত্রিকার একজন উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
রচিয়িত গ্রন্থ:
দেশকে নিবেদিত শিল্পকর্ম ও আমার স্মৃতিকথা, যার স্মৃতি সারাক্ষণ বয়ে বেড়াচ্ছি ।
মুক্তি যুদ্ধ পরবর্তী মুদ্রা প্রচলন:
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলেও নিজস্ব মুদ্রা না থাকার কারণে সার্বিক অর্থব্যবস্থা সংকটে পড়ে। ১৯৭২ সালে প্রথম ভারতের সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেসের নকশা ও মুদ্রণে ১, ৫, ১০ ও ১০০ টাকার চার ধরনের নোট বাজারে ছাড়া হয়। তবে জাল নোটও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে তখনকার আওয়ামী লীগ সরকার দ্রুত নিজস্ব নকশায় টাকা প্রচলনের উদ্যোগ নেয়। এর নকশা করার দায়িত্ব পান চারুকলা থেকে পাস করা তরুণ শিল্পী কে জি মুস্তাফা।
স্বীকৃতি:
রং তুলির আচঁড়ে সৃষ্ট শিল্প দ্বারা যে দেশ সেবা করা যায়, শিল্পী কে. জি. মুস্তাফা তার উজ্জল দৃষ্টান্ত। তাঁকে দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান সম্মাননা প্রদান করেছে। আমাদের প্রত্যাশা দেশাত্ববোধে উজ্জীবিত বরেণ্য এই কৃতী চিত্রশিল্পীকে স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশ পুনর্গঠনে তাঁর অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ অচিরেই সরকার তাঁকে রাষ্ট্রীয় পুরষ্কারে ভূষিত করে জাতিকে ঋণমুক্ত করবেন ইনশাল্লাহ্।
অবদান:
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক তথা বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত প্রথম কাগুজে নোট সমুহের নকশা করেন কে. জি. মুস্তাফা। তার মধ্যে আছে এক টাকা, পাঁচ টাকা, দশ টাকার নোট দুটি করে এবং একশত টাকার একটি নোট। তিনি এসকল নোটের মুদ্রণ তদারকির জন্য সরকারের পক্ষ থেকে লন্ডন ও পূর্ব বার্লিন গিয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশের প্রথম কয়েন এক পয়সা থেকে পঞ্চাশ পয়সার নকশা করেন।
ক্রিকেট বিশ্বকাপ বাংলাদেশ-২০১১, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫০তম জন্ম জয়ন্তী ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতার ৯০ বছর পূর্তি উপলক্ষে মুদ্রিত তিনটি রূপার স্মারক মুদ্রার নকশা করেন কে. জি. মুস্তাফা। বাংলাদেশের বিজয়ের ৪০ বছর উপলক্ষে মুদ্রিত স্মারক নোটটিরও নকশা তাঁর করা।
এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ ডাক বিভাগের প্রায় ১০০টি উপরে স্মারক ডাকটিকেট নকশা করেন। করেছেন অনেক ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, কোট ফি, সংযুক্তি স্ট্যাম্প, রেভিনিউ স্ট্যাম্প, সঞ্চয় সনদপত্র, প্রাইজবন্ড, শেয়ার সার্টিফিকেট এবং নিরাপত্তা নমুনাসহ সরকারি ও বেসরকারি অনেক বন্ডের নকশা করেছেন তিনি।
মৃত্যু:
রোজ শুক্রবার (৭ জুলাই ২০২৩) ভোর ৩টার দিকে রাজধানীর হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।






























