কোটা: পুলিশ আর ছাত্রলীগের মাঝে স্যান্ডউইচ আন্দোলনকারীরা


নিউজ ডেক্স প্রকাশের সময় : জুলাই ১৮, ২০২৪, ১০:২৭ পূর্বাহ্ন
কোটা: পুলিশ আর ছাত্রলীগের মাঝে স্যান্ডউইচ আন্দোলনকারীরা

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে মিছিল নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকালে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীরা।

এসময় পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে তারা বাংলামোটরের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন, পরে ফের শাহবাগে অবস্থান নেন। একই সময়ে শাহবাগ থেকে আধা কিলোমিটার দূরের রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করছে ছাত্রলীগ।

ছাত্রলীগ নেতারা বলেছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক পরিবেশ অব্যাহত রাখা, জনদুর্ভোগ তৈরি না করে ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরে আসা এবং সরকারি চাকরিতে কোটার যৌক্তিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক, ইতিবাচক ও যুগোপযোগী সমাধানের দাবিতে তাদের এই কর্মসূচি।

এদিন বিকাল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন আন্দোলনকারীরা। মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে বিকাল ৫টার দিকে শাহবাগে এসে অবস্থান নেয়।

আন্দোলনকারীদের একাংশ বাংলামোটরের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। শেষ পর্যন্ত তারা শাহবাগেই অবস্থান নেন। এসময় পুলিশ ইন্টারকন্টিনেন্টালের দিকে সরে গেলেও তাদের একটি সাঁজোয়া যান (এপিসি) শিক্ষার্থীদের মাঝে পড়ে যায়। শিক্ষার্থীরা যানটির ওপর উঠে বিক্ষোভ দেখান।

সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে বিএসএমএমইউ হাসপাতালের ফটকের সামনে অবস্থান করছিলেন। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে আন্দোলনকারীরা যোগ অংশ নিয়েছেন।

কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “ছাত্রলীগ আমাদের আন্দোলনকে বিতর্কিত করতে তারা উঠেপড়ে লেগেছে। তাদের প্রতি আমাদের আহ্বান, শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে বাধা দেবেন না। অন্যাথায় কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হলে ছাত্রলীগকে এর দায় নিতে হবে।”

এ বিষয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরাও কোটার যৌক্তিক সংস্কার চাই। তবে আন্দোলনের নামে জনদুর্ভোগ তৈরি করলে- সেটা আমরা মেনে নেব না। আমরা শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার আহ্বান জানাই।”

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে সব কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার। এক রিট আবেদনের রায়ে গত ৫ জুন মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্ট।

এরপর থেকেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নতুন করে আন্দোলনে নামেন চাকরিপ্রত্যাশী তরুণরা। প্রথম কয়েক দিন মিছিল, মানববন্ধনের মত কর্মসূচি থাকলেও এ সপ্তাহের শুরু থেকে শুরু হয় তাদের অবরোধ কর্মসূচি, যার নাম তারা দিয়েছে ‘বাংলা ব্লকেড’।

‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে আন্দোলনকারীরা শুরুতে চার দফা দাবিতে বিক্ষোভ করলেও এখন তারা মাঠে রয়েছে এক দফা নিয়ে।

তাদের দাবি হল- সব গ্রেডে সব ধরনের ‘অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক’ কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ‘ন্যূনতম পর্যায়ে’ এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতিকে সংশোধন করতে হবে৷

ওই ‘ন্যূনতম পর্যায়’ বলতে প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ অনগ্রসর লোকদের জন্য ৫ শতাংশ পর্যন্ত কোটা ‘গ্রহণযোগ্য’ মনে করছে তারা।

আন্দোলনকারীরা গত রবি ও সোমবার বিকালে ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড় অবরোধ করে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করেন। এরপর বুধবার সকাল-সন্ধ্যা সারা দেশে তাদের একই কর্মসূচি চলে। তাতে যানজট এবং পরিবহন না পেয়ে দুর্ভোগে পড়ে মানুষ।

এই আন্দোলনের মধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বুধবার কোটা নিয়ে স্থিতাবস্থা জারির আদেশ দেয়।

কিছু পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনা দিয়ে সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, কোটা নিয়ে এখন কোনো কথা বলা যাবে না। হাই কোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে আপিল বিভাগ আবার বিষয়টি শুনবে।

আন্দোলন করে যে আদালতের রায় বদলানো যায় না, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যেতে বলেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।

এর প্রতিক্রিয়ায় আন্দোলনকারীদের অন্যতম সমন্বয়ক আাসিফ মাহমুদ বুধবার সন্ধ্যার এক ব্রিফিংয়ে বলেন, “আমাদের দাবি স্পষ্ট, সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে ঘোষণা আসতে হবে যে একটি কমিশন গঠন করে কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কার করা হবে। যতদিন না আমাদের এ দাবি মেনে নেওয়া না হচ্ছে, ততদিন শিক্ষার্থীরা রাজপথে থাকবে।”

এর মধ্যে বৃহস্পতিবার একটি মামলার শুনানির সময় আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্টের নেতাদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, “কোটা নিয়ে যারা আন্দোলন করছেন- তাদের পরামর্শ দিন, তারা কেন নির্বাহী বিভাগের কথা বলে? নির্বাহী বিভাগের যেকোনো সিদ্ধান্ত তো আদালতে চ্যালেঞ্জ হতে পারে।

“কোটা আন্দোলনকারীদের জন্য আদালতের দরজা সবসময় খোলা। তারা তাদের দাবিগুলো আইনজীবীদের মাধ্যমে তুলে ধরতে পারেন। আমরা সেটি গুরুত্ব সহকারে শুনব।”

বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি পুরোপুরি বাতিল না করে সংস্কার করা উচিৎ বলে মনে করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে তিনি বলেছেন, “আমার মনে হয়, কোটার সংস্কার থাকা দরকার। আলোচনার ভিত্তিতে যৌক্তিক সমাধান দরকার। কোটা কতটুকু থাকবে, সেটা ঠিক করা দরকার। এই আলোচনা, যুক্তিতর্ক কোর্টে হওয়া দরকার।

“আগে একটা পক্ষের কথা আদালত শুনেছে, কারণ তখন অন্য পক্ষ ছিল না। এখন কোটা বিরোধীদের কথা আদালত শুনলে অবশ্যই সেটা বিবেচনায় নেবে এবং খুব সহজ সমাধান হওয়া সম্ভব।”

ঢাকা সিটি কলেজের ইংরেজির সাবেক এ অধ্যাপক বলেন, “আমি একজন শিক্ষক, কোটা আন্দোলনে আমার অনেক শিক্ষার্থী আছে। এ বিষয়ে ২০১৮ সালের একটা সিদ্ধান্ত ছিল, যেটা আন্দোলনকারীদের পক্ষে গেছে।

“আমরা আদালতকে সম্মান করি, আদালতের বিষয় আদালতেই সমাধান করতে হবে। আমি একজন শিক্ষক হিসাবে বলব, রাস্তায় না থেকে আদালতের বিষয়টি আদালতেই সমাধান করতে হবে।”

#S.W

ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন: