।।শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক, ২৭শে নভেম্বর ২০২৩।। বাংলাদেশের মানুষ ভোট দেয়ার গ্যারান্টি চায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এবার নির্বাচনটি হবে প্রতিদ্ধন্দিতাপূর্ণ, কেউ বিনা-প্রতিদ্ধন্দিতায় নির্বাচিত হতে পারবেন না, প্রয়োজনে ‘ডামি প্রার্থী’ রাখতে হবে। একজন নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, এবার দিনের ভোট দিনে হবে। ড: মাহবুব হাসান দৈনিক ভোরের কাগজে পিটার হাসকে নিয়ে একটি শক্তিশালী কলাম লিখেছেন, তাকে ধন্যবাদ। ক’দিন আগে আবেদ খান একটু সাহস দেখাতে গিয়ে চাকুরী হারিয়েছেন। ষাটের দশকে সাংবাদিকদের সংগ্রামী ভূমিকার কথা আমরা জানি। আশীর দশকে সাংবাদিকদের স্বৈরাচার-বিরোধী ভূমিকায় আমিও অংশীদার। গত এক দশকে সাংবাদিকদের ভূমিকায় জাতি হতাশ। সুযোগ সুবিধা হয়তো অনেকে নিয়েছেন, অনেকের নির্লজ্জ্ব ভূমিকা চোখ এড়ায়নি, কিন্তু ডিএসএ/ সিএসএ মিডিয়ার মুখ বন্ধ করে দিয়েছে।
দেশে মানুষ ভয়ভীতির মধ্যে বাস করছে, কথা বলতে পারছে না! প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কথা বলে কেউ কেউ জেলে আছেন, কিন্তু পিটার হাসকে পেটানোর হুমকি দিয়ে আওয়ামী নেতা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। দেশে উন্নয়ন হয়েছে, তবু সরকার জনবিচ্ছিন্ন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হচ্ছেনা, তাই ‘ডামি প্রার্থী’ দরকার। আমেরিকা বা পিটার হাস আসলে কি বলেছিলেন, বা কি চেয়েছিলেন? তাঁরা তো শুধুমাত্র একটি গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠূ নির্বাচন চেয়েছিলেন, যা এ সময়ে বাংলাদেশের জন্যে একান্তভাবে দরকার। পিটার হাস বাংলাদেশ ছেড়েছেন। তাঁকে নিয়ে সরকারি দল, মন্ত্রী, নেতারা কত বাহাস করেছেন। শুনছি, তিনি নাকি ফিরে আসছেন! এটি ভাল সংবাদ। অবশ্য হটাৎ করে বিদেশমন্ত্রী বললেন, ‘সুপার পাওয়ার যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাখ্যান করতে পারিনা।
ঢাকায় বিদেশিরা যে তৎপরতা চালিয়েছেন, যত কথা তারা বলেছেন, সবই তো নির্বাচন নিয়ে! লোকে তো কথা বলবেই। পরপর দু’টো নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ছিলোনা, জনগণ ভোট দিতে পারেনি। ৫২ বছরে কোন সরকার একটি কার্যকর নির্বাচনী ব্যবস্থা গড়ে উঠতে দেয়নি! কারণ যাঁরা যখন ক্ষমতায় ছিলেন, তারাই স্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছেন। জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়া ক্ষমতা ছাড়তে চাননি, শেখ হাসিনাও ক্ষমতাকে একটু বেশিই ভালবেসে ফেলেছেন। ২০১৪ ও ২০১৮’র নির্বাচন দেশের মুখে কালি লেপে দিয়েছে। ২০২৪-এ তা শুধরানোর সুযোগ ছিলো, তা আর হচ্ছে কৈ? বিএনপি নির্বাচনে নেই, জাপায় ভাঙ্গনের সুর, কিংস পার্টি মুখ থুবড়ে পড়ছে। জনগণ এসব বুঝে, সোজাসুজি নির্বাচনী প্লেয়িং ফিল্ড তৈরী না করে, অপচেষ্টা চালিয়ে সরকার আবারো বেকায়দায় পরতে যাচ্ছেন?
নির্মল সেন লিখেছিলেন, ‘স্বাভাবিক মৃত্যু’র গ্যারান্টি চাই’! বাংলাদেশের মানুষ ভোট দেয়ার গ্যারান্টি চায়। এজন্যেই হয়তো নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, ‘এবার দিনের ভোট দিনেই হবে’। তা ভোটার এলেও তো ভোট দেবে। নির্বাচন উৎসবমুখর হচ্ছে কৈ? গ্রহণযোগ্য হবে কিভাবে? যারা আওয়ামী লীগের নমিনেশন পেয়েছেন তারা তো ধরেই নিয়েছেন, তাঁরা সংসদে যাচ্ছেন। তাদের ঠেকায় কে? বিনা ভোটে জয়ী হবার যে প্রবণতা গড়ে উঠেছে, এবারো হয়তো এ থেকে বের হয়ে আসা যাবেনা। আওয়ামী লীগ সাধ্যমত চেষ্টা করেছে বিএনপি যাতে নির্বাচনে না আসে, বিএনপি আসছে না, সরকারি দল জয়ী। এই জয় নুতন সমস্যা সৃষ্টি করবে, যা দেশের জন্যে মোটেও সুখকর হবেনা। সরকার যত চেষ্টাই করুক, কিচ্ছুতে কাজ হচ্ছেনা। মানুষ আসলে সরকারের প্রতি আস্থা রাখতে পারছে না!
টিআইবি বলেছে, রাজনৈতিক অস্থিরতায় অগণতান্ত্রিক শক্তি লাভবান হবে! পরপর তিনবার প্রহসনের নির্বাচন দেশে বিপদজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের চরিত্র অনেকটা ‘স্বৈরাচারী’, মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই, বিচার বিভাগ পরাধীন, নির্বাচন কমিশন আজ্ঞাবহ, পার্লামেন্ট রাবারস্ট্যাম্প। এজন্যে কি নূর হোসেন পিঠে ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ লিখে জীবন দিয়েছিলো? সমস্যা হচ্ছে, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি উভয় দল বিরোধী দলে থাকলে গণতান্ত্রিক, সরকারে গেলে স্বৈরাচারী! অথচ আওয়ামী লীগের একটি গণতান্ত্রিক চরিত্র ছিলো? ক্ষমতার মোহ দলটিকে তা থেকে বিচ্যুত করেছে। বাংলাদেশে এখন চীনের মত গণতন্ত্র, বা রাশিয়ার মত উদার-উন্মুক্ত শাসন-ব্যবস্থা! পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘জানোয়ারের সাথে আলোচনা নয়’-ভাবা যায়? গল্পে আছে, “রাজা কহিলেন, নিশ্চয় তোমার কথা বলার অধিকার আছে; তবে তুমি তাহাই বলিবে যাহা আমি শুনতে চাই”।
আওয়ামী লীগ আসলে বিএনপি’র বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করে, সবক’টি দোষে তারাও দোষী। সত্যিকার অর্থে, বিএনপি আর আওয়ামী লীগে এখন আর তেমন তফাৎ নেই? বিএনপি ভোটচোর, আওয়ামী লীগ ভোট চোর। বিএনপি সন্ত্রাসীদের লালন-পালন করে; আওয়ামী লীগ দেশকে আফগানিস্তান বানিয়ে দিয়েছে। বিএনপি সংখ্যালঘু নির্যাতন করেছে, আওয়ামী লীগ রামু থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত সংখ্যালঘু’র বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। বিএনপি’র আমলে গণতন্ত্র ছিলোনা, এখনো নেই। বিএনপি গুম করেছে, আওয়ামী লীগ গুম করেছে, ৱ্যাবের নিষেদ্ধাজ্ঞার পর কমেছে। বিএনপি চোর, আওয়ামী লীগ চোর। বিএনপি ক্ষমতা ছাড়তে চায়নি, আওয়ামী লীগও চায়না। আর বাকি থাকলো কি? বিএনপি’র প্রধান বিচারপতির বাড়ীতে হামলা করেছে, আওয়ামী লীগ একজন প্রধান বিচারপতিকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছনা করে দেশ থেকে বের করে দিয়েছে। বিএনপি খারাপ, আর আমাদের আওয়ামী লীগ ভাল?
ইতিহাস বড় নির্মম, কাউকে ছাড় দেয়না। সময় হয়তো এখনো শেষ হয়ে যায়নি।
আপনার মতামত লিখুন :