বাংলাদেশে শেখ হাসিনা’র যতটা বিরোধিতা, ভারতে ঠিক উল্টো, সেখানে তিনি ততটাই জনপ্রিয়। পুরো ভারতে কোন দলের কোন নেতা ‘শেখ হাসিনা’ বিরোধী নন, খুঁজে পাওয়া যাবেনা।
নরেন্দ্র মোদী, রাহুল গান্ধী বা মমতা ব্যানার্জী’র মুখে কখনো শেখ হাসিনা বিরোধী কথাবার্তা শোনা যায়না। শেখ হাসিনা যাদু জানেন, তিনি সবাইকে যাদু করে রেখেছেন। ভারত তার নিজের প্রয়োজনে শেখ হাসিনাকে পুনরায় ক্ষমতায় দেখতে চায়। এটি শুধু ‘ওপেন সিক্রেট’ তাই নয়, এলক্ষ্যে ভারত বিশ্বব্যাপী দরবার করে যাচ্ছে। জি-২০ সম্মেলনের পূর্বাহ্নে ভারত শেখ হাসিনাকে অভূতপূর্ব সম্মানে ভূষিত করে তা প্রমান করেছে।
এতকিছুর পরও সবকিছু যে সরল রেখায় চলছে তা নয়? ব্রিক্স সম্মেলন, দিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনের পর এবার আমেরিকায় সাধ্যমত চেষ্টা হবে, প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্কের পর এক সপ্তাহ ওয়াশিংটন থাকবেন। একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশে একজন মহিলা গণতন্ত্র, নারীর ক্ষমতায়ন বা জীবনযাত্রার যতটা উন্নয়ন করেছেন, তা অন্য মুসলিম দেশগুলোর অনুকরণীয় এবং পশ্চিমা দেশগুলো শেখ হাসিনাকে সমর্থন দেয়া দরকার। বাস্তবতা এখনো উল্টো। সরকারের অপোজিশনে এবার বিএনপি নয়, আমেরিকা। কাজেই সতর্ক হওয়া দরকার।
ছোটবেলায় পড়েছিলাম, ‘অমঙ্গলকে হাসিয়া উড়াইয়া দিলে মঙ্গলসমেত উড়িয়া যাইবে’। সঠিক নির্বাচন না হলে আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা দিলে দেশের সর্বনাশ হয়ে যাবে। অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে তখন ‘আম ও ছালা’ দু’টোই যাবে। ইইউ ইতিমধ্যে জিএসপি সুবিধা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। আমেরিকা যদি জিএসপি ও শান্তিরক্ষীর বিরোধিতা করে তাহলে কি হবে? বাস্তবতা বুঝতে হবে। বিএনপি-জামাত ২০০১-২০০৬ যত অপকর্ম করেছে, সারাদিন এর নিন্দা করা যায়, ঠিক আছে। কিন্তু গত পনের বছরের কর্মকান্ড, বিশেষেত: দু’টি নির্বাচনের দায় তো আওয়ামী লীগকে নিতে হবে।
দেশের কথা চিন্তা করে অনেকে ভীত, সন্ত্রস্ত। আওয়ামী লীগ ভাবছে তারা ক্ষমতায় থাকছে, বিএনপি ভাবছে তারা ক্ষমতায় আসছে। বিএনপি অন্তত: এটুকু ভাবছে যে, আমেরিকা যখন লেগেছে, তখন এবার কিছু একটা হবে! সত্যি সত্যি যদি আমেরিকা কিছুটা নমনীয় না হয়, তাহলে দেশের মানুষের অসুবিধা হবে! বাংলাদেশের বড়বড় লোকজনের সবার ছেলেমেয়ে আমেরিকায় থাকে, অনেকে শেষ বয়সে থাকার জন্যে আমেরিকায় বাড়িঘর করেছেন, এঁরা কেউ চাইবেন না, আমেরিকা-ইউরোপের দরজা তাদের জন্যে বন্ধ হয়ে যাক? দেশে এখন লোকজন তাই নিরপেক্ষ হতে শুরু করেছেন!
সবাই বসে আছেন, শেখ হাসিনা আমেরিকায় কতটা সফল হবেন এর ওপর। অক্টবরের শুরুতে তিনি দেশে ফিরে যাবেন। ৬ই অক্টবর ঐক্য পরিষদের মহাসম্মেলন, লক্ষাধিক মানুষ জড়ো হবেন, সরকার তাঁর ২০১৮’র নির্বাচনী ইশতেহার অন্তত: কিছুটা বাস্তবায়ন না করলে হিন্দুদের খোলাখুলি আওয়ামী লীগকে সমর্থন করাটা কঠিন হবে। এবারের ভোটটি আওয়ামী লীগ ভার্সেস এন্টি-আওয়ামী লীগ, ভোট যদি হয়, আওয়ামী লীগের হিন্দু ভোটের দরকার হবে? অবশ্য, অনেকেই আগের মত জিততে চান, সেক্ষেত্রে ভোটের দরকার হবেনা।
আপনার মতামত লিখুন :