স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম টাকার নকশাকার কে জি মুসতাফা না ফেরার দেশে চলে গিয়েছেন


নিউজ ডেক্স প্রকাশের সময় : জুলাই ৭, ২০২৩, ১১:১৮ অপরাহ্ন
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম টাকার নকশাকার কে জি মুসতাফা না ফেরার দেশে চলে গিয়েছেন

বাংলাদেশের প্রথম টাকা, কয়েন, পূর্ব ভার্ষনের এসএসসি, এইচ এস সির সার্টিফিকেট, ডাকটিকিটসহ আরও গুরুত্বপূর্ণ স্মারকের নকশাকার কে জি মুস্​তাফা আজ ঢাকার হলিফ্যামিলি হাসপাতালে ভোর ৪টায় ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)।

কাজী গোলাম মুসতাফা (কে জি মুসতাফা হিসাবে পরিচিত) ১৯৪৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর মাদারীপুরের শেখপুর গ্রামে এক রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তিনি ১৯৫৯ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করে ভর্তি হন তৎকালীন ইস্ট পাকিস্তান কলেজ অব আর্টস অ্যান্ড ক্রাফটসে (বর্তমানে চারুকলা ইনস্টিটিউট) এবং ১৯৬৪ সেখান থেকে লেখাপড়া শেষ করেন। চারুকলার শিক্ষক শ্রদ্বেয় শিল্পচার্য জয়নুল আবেদিন তরুণ মুসতাফার ভিতরে অসাধারণ প্রতিভার খোঁজ পান। যখন সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত নতুন রাষ্ট্রের জন্য নতুন মূদ্রা ও টাকার প্রয়োজন হয়ে পরে সেই সময় শিল্পাচার্য তার প্রিয় ছাএ মুসতাফাকে এই বিশাল দায়িত্বের যোগ্য মনে করে তাকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেন।

কে জি মুস্তফা নব্য স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মুদ্রার ডিজাইন করেন। তিনি ১ পয়সা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত সবগুলোর ডিজাইন এককভাবে করেছিলেন। এছাড়াও বাংলাদেশ ডাকবিভাগের অসংখ্য পোস্টকার্ড, খাম, অ্যারোগ্রাম ও ডাকটিকিটের ডিজাইন করে দিয়েছেন।

পরবর্তী সময়ে সিপাহি বিদ্রোহ, মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে, বাংলাদেশের প্রথম আদমশুমারি, গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ, পাটের শিকা ও কার্পেট, গ্রামীণ নারী কলম্বো পরিকল্পনা, আন্তর্জাতিক স্বাক্ষরতা বর্ষ, অলিম্পিক গেমস, ফিফা বিশ্বকাপ, এশিয়ান গেমস প্রভৃতি বিষয়ের ওপর ডাকটিকিটে তিনি ডিজাইন করেছেন।

মহান স্বাধীনতার প্রথম বার্ষিকী, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী, কণ্ঠশিল্পী আব্বাসউদ্দীন আহমদের স্মরণে, বিশ্ব ডাক সংস্থার শতবর্ষ উদযাপন, ডাক জীবন বীমা শতবার্ষিকী, ডাকটিকিট প্রকাশের ১৫০তম বার্ষিকী সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যুতে তিনি ডাকটিকেটের নকশা করেছেন।

সেই সাথে তিনি নবাব সিরাজউদ্দৌলা, লালন শাহ ও কবি কায়কোবাদের ওপর অনেক ডাকটিকিটের ডিজাইন করে দিয়েছেন। শহীদ নূর হোসেনের বুকে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’ লেখা যে ডাকটিকিটটি বেরিয়েছিল, সেটির ডিজাইন করে তৎকালীন সময়ে বেশ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন এই গুণী শিল্পী। ১৯৯১ সালে শহীদ বুদ্ধিজীবী সিরিজ ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয়, সেগুলোর মধ্যে দশটির ডিজাইন করেছেন তিনি। তিনি অসংখ্য ব্যাংক, বীমা, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মনোগ্রাম, চেক বই, ভাউচার, প্রাইজবন্ড, শেয়ার সার্টিফিকেট, সঞ্চয়পত্রের সার্টিফিকেটসহ অনেক কাজের ডিজাইন করেছেন। পাশাপাশি তিনি অনেক ছবিও এঁকেছেন।

জীবিত অবস্থায় তিনি কোন রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কোনো বড় ধরনের পুরস্কার বা স্বীকৃতি পাননি। তবে সব সময় তিনি বলে গেছেন, ‘এই দেশই আমার জন্য পুরস্কার।’

মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী এবং দুই ছেলে এক মেয়ে রেখে গেছেন। আজ শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর রামপুরা মসজিদে মরহুমের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। তারপরই উনার মরদেহ মাদারীপুরের পৈতৃক নিবাসে আসরের নামাজের পর পৈতৃক নিবাসেই পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়। অনুগ্রহ করে তাকে তার গুনাহ মাফের জন্য আপনার প্রার্থনায় রাখুন , আল্লাহ তায়ালা যেন তাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান দান করেন, আমিন।

ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন: