অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার আসামি টেকনাফ থানার বহিষ্কৃত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশের বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ নিয়ে প্রদীপ মোট তিনটি হত্যা মামলায় আসামি হলেন।
দাবিমতো অর্ধেক টাকা দেওয়ার পরও এক প্রবাসীকে ক্রসফায়ারে দেওয়ার অভিযোগ এনে তাঁর ভাই কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের আদালত-৩ এ মামলাটি দায়ের করেন।
মা’মলায় মোট ২৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। টেকনাফ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) দীপক চন্দ্রকে প্রধান আসামি করে বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাসকে ২ নম্বর আসামি করা হয়েছে। ১৮ জন পুলিশ সদস্যের বাইরে বাকি পাঁচ আসামি হচ্ছেন চৌকিদার ও স্থানীয় লোকজন।
মা’মলার বাদীপক্ষের আইনজীবী ইনসাফুর রহমান গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানিয়ে বলেছেন, নিহত প্রবাসী মাহমুদুর রহমানের ভাই নুরুল হোসাইন মামলাটি করেন। শুনানি শেষে ওই ঘটনায় অন্য কোনো হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে কি না, তা আগামী ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জানাতে টেকনাফ থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মা’মলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, গত বছরের ২৮ মার্চ টেকনাফ উপজেলার মৌলভীপাড়া আলী আকবর পাড়ার মিয়া হোসেনের ছেলে প্রবাসী মাহমুদুর রহমানকে থানার এসআই দীপক চন্দ্রের নেতৃত্বে একদল পু’লিশ আটক করে নিয়ে যায়। পরে এসআই দীপক ও ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ক্রসফায়ার না দেওয়ার শর্তে প্রবাসীর পরিবারের কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন।
পরিবার মাহমুদুর রহমানকে বাঁচাতে নিরূপায় হয়ে পাঁচ লাখ টাকা দেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। এতে আরো বলা হয়, কিন্তু আরো পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে পুলিশ। দাবিকৃত পাঁচ লাখ টাকা না দেওয়ায় তিন দিন পর ৩১ মার্চ রাতে ক্রসফায়ারের নামে প্রবাসী মাহমুদুর রহমানকে হত্যা করা হয়।
এর আগে গত ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলীর গু’লিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
এরপর ৫ আগস্ট কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আ’দালতে হত্যা মামলা করেন সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। এতে নয়জনকে আসামি করা হয়। এটিই ছিল প্রদীপের বিরুদ্ধে প্রথম হত্যা মামলা।
এরপর গত ১৮ আগস্ট চাহিদামতো ঘুষ দেওয়ার পরও এক ব্যক্তিকে কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যার অভিযোগ এনে প্রদীপ কুমার দাসসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করা হয়। এই মামলাটি করেন টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভীবাজার এলাকার গুল চেহের।
তিনি অভিযোগ করেছেন, পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ দেওয়ার পরও তাঁর ছেলে সাদ্দাম হোসেনকে কথিত বন্দুকযুদ্ধে হত্যা করা হয়। এটি ছিল প্রদীপের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় হত্যা মামলা। এই মামলায়ও প্রদীপ কুমার দাশ দুই নম্বর আসামি। মামলার ২৮ আসামির ২৭ জনই পুলিশের সদস্য।
এর আগে গত ১২ আগস্ট মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নে ২০১৭ সালে বন্দুকযুদ্ধে নিহত আব্দুস সাত্তারের স্ত্রী হামিদা আক্তার (৪০) বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। এই মামলার আসামিদের মধ্যে প্রদীপ ছাড়াও আরো পাঁচজন পুলিশ সদস্য ছিলেন। ঘটনার সময় প্রদীপ কুমার দাশ মহেশখালী থানার ওসি ছিলেন।
পরের দিন অর্থাৎ ১৩ আগস্ট মহেশখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন। তবে ওই ঘটনায় তিন বছর আগে পুলিশের দায়ের করা মামলাটি পু’লিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) তদন্তের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
2021-01-30 06:29:31
আপনার মতামত লিখুন :