ভারতের আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে ভারতে বসে পালাতক ফ্যাসিস্ট মাফিয়া খুনি শেখ হাসিনা নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের ভেরিফাইড পেজে দেয়া বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে আওয়ামীলীগের নেতার বাড়ি ভাঙচুর এবং অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটে।
আজকে বাংলাদেশে যা ঘটছে তার ব্যাখ্যা আপনি কেবল সরকারের ব্যার্থতার উপর চাপিয়ে কোন অবস্থাতেতই পার পাবেন না। এবং সত্য বলতে এ দায় সরকারেরও না। এ সরকার এমন এক সরকার তাকে দিয়ে ততটুকুই আপনি করাতে পারবেন যতোটুকু আপনি চান।
বাংলাদেশে আজকে যা ঘটছে এইটাই ডিজার্ভ করছিল রাজনৈতিক চালান শুন্য বাংলাদেশের বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলি। এবারের জুলাই – আগষ্ট জন-অভ্যুত্থানের চরিত্র বিশ্লেষন না করে, মান্ধাত্তা আমলের সেই বস্তা পচা রাজনীতি – মরা লাশ দেখিয়া ভোট দিবেন ঠাসিয়া, নীতিতে অটল থেকে তারা রাজনীতির মাঠ গরম করছে। কথায় কথায় বলছে – সরকার ব্যর্থ। সরকার জবাব দাও। তারা না বুঝছে জনবিপ্লব ২০২৪ এর চরিত্র, না বুঝছে তাদেরই গড়া বর্তমান অন্ত্রবর্তী কালীন সরকারের চরিত্র।
দেশের রাজনৈতিক দলগুলি ৬ মাসও সময় নিলো না ভুলে যেতে যে, ২০২৪ এর পুরা অর্জন অরাজনৈতিক জন এর এবং তারা একসাথ হয়েছিল রাজনৈতিক দলগুলির দেউলিয়াত্ব ও সীমাহীন নীপিড়নের ফলে। দেশ ছেড়ে হিল্লি দিল্লি লন্ডন বসে বড় বড় বানী ঝাড়বেন সন্তান সন্ততী স্বামী ও স্ত্রীকে দলের বিশাল বিশাল নেতা বানাবেন সেই পরিবারতান্ত্রীক রাজনীতি বাংলাদেশে প্রত্যাক্ষত।
আওয়ামীলীগের অনুপস্থিতিতে বড় দলগুলির অরাজনীতি ও সীমাহীন ক্ষমতার লোভের ফসল আজকের দিন। গত ছয়মাস সাদা ও মোটা চোখে দেখার পর আমার কাছে যে কারন গুলি প্রধান হিসাবে বিবেচিত –
(১) বিএনপি জামাত প্রকাশ্যে ঘোষনা করলো আওয়ামীলীগের সাথে তাদের সত্রুতা নাই। এবং তারা আওয়ামীলীগকে নিয়েই নির্বাচনে যেতে চায় অর্থাৎ বিএনপি জামাত এই গণঅভ্যুত্থানের পার্ট না!? যদিও বিএনপি তাদের কর্মীদের লাশের তালিকা হাজির করেছিল জনসন্মুখে। মজার বিষয় বিএনপি এর সেই সকল কর্মীই মাঠে নেমেছিল যারা কেবল নিহত হয়েছে, আহত বা পঙ্গু একজনও নাই। কেন বিএনপি জামাতকে এমন ঘোষনা দিতে হয় এর জবাবে ঠোটকাটা মানুষেরা বলেন – রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে বিএনপি জামাত উভয়েই বাংলাদেশের উপর ভারতের শর্তহীন দাদাগিরী মেনে নিতে চায় এবং বিশ্বাস করে ভারত পাশে থাকলে তাদের ক্ষমতারোহণ কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।
(২) আওয়ামীলীগ, জামাত ও বিএনপি ভারত এর দাদগীরি পক্ষে, আর বাংলাদেশের মানুষ ভারতের দাদগীরির বিপক্ষে।
(৩) বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ যে আওয়ামী দু:শ্বাসনে অতিষ্ট হয়েই ফুসে উঠেছিল ৬ মাসেই বাংলাদেশের মানুষ প্রধান দুদলের ভেতর তাইই দেখে ফেলল।
সরল সাদা মনে হিসাব করলে দেখা যায় এখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ, বিএনপি ও জামাতের জনগন সম্পর্কে মনোভাব অভিন্ন – হাসিনা কে সরিয়েছ, বেশ করেছ, এবার তোমরা ভাগো আমরা মৌজ-মাস্তি করি।
ফেলে আশা দিনের অভিজ্ঞতা যখন মানুষের সামনে হুমকী হয়ে দাঁড়ায় তখন মানুষ মরিয়া হয়ে ওঠে বাঁচতে। ১৯৯০। এরশাদের পতন। বিএনপি, আওয়ামীলীগ ও বাম এই তিন জোটের ঘোষিত রূপরেখায় ছিল মূলত – ভোট ডাকাতি, মিডিয়া ক্যু এবং ভোটার বিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে ফলাফল প্রকাশের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান।
কিন্তু বাস্তবা এই ৯০ পরবর্তী নির্বাচনী অভিযাত্রায় বিএনপি প্রথম ধাপেই নিরপেক্ষ তত্ত্বাবোধায়ক সরকার থেকে সরে আসে এবং ১৯৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি এক তরফা নির্বাচনের ভেতর দিয়ে আবারও ক্ষমতায় ফিরে আসে। বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে যে দল ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করে তাকে হারানোর ইতিহাস বাংলাদেশে নাই।
জন মানুষের ভরসার জায়গা –
মানুষ ভরসা করতে চায়, আস্থা রাখতে চায় অন্তর্বর্তী সরকারের উপর কারন তারা চায় রাষ্ট্র পরিচালনা ব্যবস্থার পরিবর্তন বা রাষ্ট্র সংস্কার। রাষ্ট্র সংস্কারের দায় ঘাড়ে নিয়েই এই অন্তরবর্তী কালীণ সরকার গঠিত কিন্তু আমাদের প্রধান প্রধাণ রাজনৈতিক দলগুলি কোন সংস্কার চায় না, রাষ্ট্র সংস্কার করলে রাষ্ট্রে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা হলে লুটপাট পাচার জঠিল রূপ নিবে সুতরাং বর্তমান রাষ্ট্র ব্যবস্থা বহাল রেখে তারা চায় ক্ষমতায় যাবার জন্য নির্বাচন। অন্যপক্ষে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চায় বাংলাদেশের জনগণের সমর্থন, ফলে জনমত (মব) এর প্রতি নমনীয়।
সুতরাং ০৫.০২.২০২৫ এর ঘটনা নিয়ে আলগা নৈতিকতা ঠেলার সুযোগ নাই। যতোই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হম্বিতম্বি করুক লিফলেট বিতরনের, মিছিলের ছবি প্রচার করুক সব ফাঁকা বুলি তা আামাদের মাথামোটা ও দলান্ধ-দলবাজ শিল্পী, আর্টিষ্ট, সার্টিফিকেটধারী শিক্ষিত না বুঝলেও প্রমাণিত। তাদের বোধহীন উচ্ছৃঙ্খল মনোবৃত্তি তাদেরই ক্ষতি না করুক এইই প্রত্যাশা।
স্মরণ রাখা প্রয়েজন, বাংলাদেশের জনগণ অনেক সহনশীল এবং শান্তিপ্রীয় বলেই ৫.৮.২০২৪ এর উত্তাল সময়ে হাতের লাঠি ফেলে দিয়ে কারো কোন ক্ষতি না করে ঘরে ফিরেছে। নিজেদের আত্মজিজ্ঞাসার ও শুদ্ধির সময় দিয়েছে, কিন্তু তাদের মুক্তির প্রশ্নে যৌথতা ত্যাগ করে নাই।
ভাববার দরকার নাই বাংলাদেশের জনগণ অন্যায় প্রবণ।
ভাববার কোনই কারন নাই আমি নিরাপদ ও অনিরাপদ।
বরং ভাবুন আজকে এই বাংলাদেশকে দেখিয়ে দিল জামাত বিএনপি ও আওয়ামীলীগ জনগনকে বাধ্য করলো ০৫.০২.২০২৫ দেখাতে। বিশ্বাস করুন বাংলাদেশের মানুষ রাজনৈতিক দলগুলির উপর অন্ধভক্তি ভুলে চায় নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা (বন্দবস্ত) যা মানুষের জান-মাল-সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে মানুষকে করবে মুক্ত।
ভাবতে থাকুন বাংলাদেশের জনগণ তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় অনড় অটল তারা বারবার এমন ইতরামী, চাতুরী, সঠতা ও প্রতারণার জবাবে বারবার মাঠে আসবে।
আদীল হোসেন
ঢাকা – ০৫.০২.২০২৫
আপনার মতামত লিখুন :