স্বৈরাচারের পতন হয়


নিউজ ডেক্স প্রকাশের সময় : মার্চ ১৫, ২০২৩, ৮:২৮ পূর্বাহ্ন
স্বৈরাচারের পতন হয়

স্বৈরাচার এবং অত্যাচারী উভয়ের দাপট ক্ষণস্থায়ী। স্বৈরাচারীরা যখন বুঝতে পারে তাদের দিন ঘনিয়ে আসছে, তাদের নিয়ন্ত্রণ চলে যাচ্ছে সাধারণত তখন তারা আরো বেশী বেপরোয়া হয়ে যায়। ইতিহাসে অজস্র দৃষ্টান্ত রয়েছে যে পরাজিত গণদুশমন বাহিনী পিছু হঠার কিংবা আত্মসমর্পণ করার আগে দেশের মাটি পর্যন্ত খাক করে দিয়ে যায় যাতে প্রতিপক্ষ কোথাও ব্যবহারের উপযোগী কিছুই না পায়। কারণ স্বৈরাচারীরা জানে তাদের অসান হবেই, আজ না হলে কাল, কাল না হলে পরশু। সহিংস অবস্থানে অনড় থাকলে স্বৈরাচারকে ফাঁসিতেও ঝুলতে হয়, অতীত এমনই বলে।

অতীতে আইয়ুব সরকার, ইয়াহিয়ার সরকার টিকে থাকার জন্য কার্ফুর পর কার্ফু দিয়েছে, সকালে কারফিউ, দুপুরে কারফিউ, রাতে কারফিউ; স্বৈরাচারী নীতি অবলম্বন করে টিকতে পারে নাই, আত্মসমর্পণ দলিলে সই করতে বাধ্য হয়েছে এবং এদেশ থেকে চিরতরে নির্বাসিত হয়েছে, ছবিগুলোর স্মৃতিই তরতাজা। হিটলার, মুসলিনি, চেঙ্গিস, হালাকু, নাদির শাহ, ইরানের রেজা শাহ পাহলবীরের এভাবেই পতন হয়েছে।

স্বাধীন বাংলাদেশে উপর প্রথম স্বৈরাচারী কালো থাবা পড়েছিল ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ, নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তারকে বন্দুকের নলের মধ্যে দিয়ে। ক্ষমতায় আসেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ, ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই তিনি শুরু করেন একের পর এক ফ্যাসিবাদী আচরণ। কিন্তু যে দেশের ইতিহাসই গণতন্ত্রের ইতিহাস, সে দেশে স্বৈরতন্ত্র স্থায়ী হবে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য ছিল না। প্রথমদিকে মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে সরকারকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসলেও সরকার তা আমলে নেয়নি। এরশাদের এই অসাংবিধানিক পদক্ষেপকে সাথে সাথে স্বাগত জানিয়েছিল আওয়ামী লীগ। সে দিনও আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ছিলেন। শুধু তা-ই নয়, এ দেশে স্বৈরাচারের প্রতিভূ এই একনায়ক দীর্ঘ প্রায় ৯ বছর ক্ষমতায় যে টিকে ছিলেন সেটি সম্ভব হয়েছিল শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের সরাসরি মদদে।

ইতিহাসের স্বাভাবিক নিয়মেই সেই স্বৈরাচারী এরশাদের জাতীয় পার্টি এবং ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের সমন্বয়ে চলছে বর্তমান জাতীয় সংসদ। আওয়ামীলীগ এককভাবে ২০১৪, এরপর ২০১৮ এককভাবে অবৈধ পন্থায় ক্ষমতায় আসার পর ২০২৩ পুনরায় ক্ষমতায় টিকে থাকার বাসনায় পাগলপারা। ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য নিজের মত করে দলীয় আদর্শের ব্যক্তিবর্গকে রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানে পদায়ন করেন, সংবিধানকে উলট-পালট করে আইনের বুলি আওড়িয়ে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার মানসে দেশকে চরম অস্থিরতার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।

আবার কেউ কেউ মনে করেন শেখ হাসিনার আশেপাশে যারা আছেন তারা তাকে ঘিরে রেখেছেন, তৈলমর্দন করছেন ও ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে বাধ্য করছেন। কারণ সে কয়েকশ দলীয় ও আমলা ব্যক্তি এত বেশি দুর্নীতি ও অপকর্ম করেছেন যে ক্ষমতা হারালে কারো রক্ষা হবেনা বলে তারা ভয় করেন। স্বাধীনতা পরবর্তীতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নির্বিচার গুলীতে এত লোকের হানাহানি, এত এত গুমের ঘটনা কখনো ঘটেনি।

শেখ হাসিনা সরকারের এহেন আচরণের বিরুদ্ধে কোন ধরণের প্রতিবাদও করার সুযোগ নেই। কারন বিরোধীদলীয় অফিসগুলো বন্ধ করে রেখেছে মাসের পর মাস। সব বক্তব্য শুধু ওনাদের, শুধু ওনারাই বলবেন; বিরোধী দলগুলোর কিছুই বলার বা মতপ্রকাশের সুযোগ নেই। সভা-সমাবেশে গুলী, টিয়ার শেল, রাবার বুলেট, জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ এখন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত দায়িত্বে পরিণত হয়েছে।

বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করে নির্মম নির্যাতন এখন ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। গুম-হত্যা এখন বিরোধী নেতাকর্মী তাড়িয়ে বেড়ায়। রিমান্ডের নামে যে নির্যাতনের খড়গহস্ত চাপিয়ে দেয়া হয়েছে তাতে অনেক নিরপরাধ মানুষকে জীবনের তরে পঙ্গু বানিয়ে দেয়া হয়েছে। যা সভ্যসমাজে কখনো চিন্তাও করা যায় না। দেশের সকল বিরোধী মতকে দমনের জন্য হাজার হাজার সাজানো মামলায় জড়িয়ে নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে আদালতের কাঁধে বন্দুক রেখে ফাঁসি, যাবজ্জীবন কারাদন্ডের ফ্রেমে পিষ্ট করছে। অতীতের যে কোন স্বৈরশাসককে হার মানিয়েছে বর্তমান আওয়ামী শাসন।

হয়তো তাই বাংলাদেশের বর্তমান স্লোগান,
আসছে-
‘দিন দিচ্ছে ডাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক
মজলুম বাংলাদেশী জীবনে গণতন্ত্র মুক্তি পাক’।

পৃথিবীব্যাপী যত স্বৈরশাসক বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে জেঁকে বসেছিল, কারো পরিণতিই শুভকর হয়নি, শুধুমাত্র তাদের একগুঁয়েমি ও অগণতান্ত্রিক মানসিকতার জন্য। তবে সফলতা আর অমরত্ত্ব ভিন্ন জিনিস! শেখ হাসিনা ফ্যাসিষ্ট হয়ে ক্ষমতা দখল করে আছে এটা তার সফলতা কিন্তু এই সফলতা দিয়ে শেখ হাসিনা কখনই অমরত্ত্ব পাবেনা যদি জনগনের ম্যান্ডেটের মাধ্যমে নিজেকে কলংকমুক্ত করতে না পারে।

কামরুল ইসলাম
প্রধান সম্পাদক

ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন: