সত্যের সাথে মাহমুদুর রহমানের সম্পর্ক


নিউজ ডেক্স প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪, ২:৫৩ অপরাহ্ন
সত্যের সাথে মাহমুদুর রহমানের সম্পর্ক

জুনায়েদ রাহিমীন: আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সাহসী মানুষ। হাসিনাশাহীর অত্যাচার নির্যাতন যে তাকে দমাইতে পারে নাই এইজন্যে তিনি ধন্যবাদ পাবেন। তবে সত্যের সাথে তার ঠিক সখ্যতা হয়ে উঠে নাই। মানে সত্য কথা বলার সাহস ওনার আছে কিন্তু সত্য কথা বলতে তিনি সব সময় মজা পান না। রঙচঙ মাখায়, এদিক সেদিক করে তিনি কথা বলেন। যাকে তাকে ভারতের দালাল বলে দেন।

১৩ সালে তার পত্রিকার বিখ্যাত হেডলাইন, ‘শাহবাগে ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি’ তাকে অমর করে তুলছে। তো সেই সময়ে এই কথা তো দূরদর্শীতার পরিচয় বহন করে। সত্য উচ্চারণও বটে। কিন্তু এই সত্যকে তিনি কতগুলা মিথ্যা দিয়ে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছিলেন। অযথা কিছু ব্লগার, একটিভিস্টকে তিনি নাস্তিক বলে, চরিত্র হনন করে পত্রিকায় রসায় রসায় কাহিনী লিখে তাদেরকে মৃত্যুর ঝুঁকিতে ফেলছিলেন।

নাস্তিক হত্যার উৎসব শুরু হয় তার উৎপাদিত সামাজিক সম্মতির মধ্য দিয়ে। এবং এই নাস্তিক হত্যার চলমান রূপান্তরে খুন হতে হয় নিতান্ত আস্তিক দীপনকে। কেন? কারণ দীপন প্রকাশক। তার প্রকাশনায় নাস্তিকের লেখা ছাপা হইছে। অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক ছেলের হত্যার বিচার চায় নাই ভঙ্গুর রাষ্ট্রের কাছে। আহারে! একই বছর, ২০১৫ সালে বইমেলায় হত্যা করা হয় আমেরিকা প্রবাসী লেখক অভিজিৎ কে।

এই সমস্ত জঙ্গিপনা তখন হাসিনা ক্যাশ করছিলো। ইন্ডিয়াকে বলা হইছে, দেখো, তোমরা আমাদেরকে পূর্ণ সমর্থন দাও, নইলে দেশ চলে যাবে জঙ্গিদের হাতে। এবং ২০১৩ পরবর্তী সময়ে ইন্ডিয়ার একচেটিয়া সমর্থনে হাসিনা চূড়ান্ত ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠে। দেশে চালু রাখা হইছিলো জঙ্গি নিধনের নাটক। এবং এই নাটকের পাটাতন তৈরি করে দিছিলো আমার দেশ পত্রিকার উস্কানি। ১৩ সালে যদি লিস্ট করে ব্লগার, একটিভিস্ট হত্যা করা না হইতো, হেফাজতকে গুঁটি চেলে সামনে আনা না হইতো, তাইলে বাংলাদেশে জঙ্গি নাটকের মঞ্চায়ন হাসিনার পক্ষে সম্ভব হইতো না।

তো ১৩ সাল পরবর্তী সময়ে নাস্তিকদের চরিত্র খারাপ, নাস্তিক হইলে হত্যা করা যায়, এমন উপস্থাপনের ফলাফল যা হইছিলো তাতে কি মাহমুদুর রহমান কখনও ব্যাথিত হইছেন? হন নাই। কারণ তিনিও ফ্যাসিস্ট। কাবা শরিফের গিলাফ পাল্টানোর ছবি নিয়েও তিনি গুজব ছড়ায় ধরা খেয়ে পরে অনলাইন ভার্সন থেকে সরায় ফেলছিলেন। তো সত্যের সাথে শুরু থেকেই তার দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক।

সিপিডির দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য গত এক যুগ ধরেই আওয়ামী উন্নয়ন বয়ানকে চ্যালেঞ্জ করে আসছে। তিনি এবং তার প্রতিষ্ঠান হাসিনার চক্ষুশূল ছিলো। তার ব্যাপারেও মাহমুদুর রহমান জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে মিথ্যাচার করে বলছে দেবপ্রিয় নাকি বলছে ট্রানজিট দিলে দেশ সিঙ্গাপুর হয়ে যাবে। ডাহা মিথ্যা কথা। বরং ট্রানজিটের বিষয়ে স্বচ্ছতার দাবী করা, উপযুক্ত ফি নির্ধারণ করা নিয়ে তার দেবপ্রিয়র লেখা আছে। ২০১৫ সালে তার লেখা থেকে কয়েকটা লাইন তুলে দিচ্ছি…

‘বাংলাদেশের নৌপথ দিয়ে ভারতের যে সব পণ্য যাচ্ছে তার ওপর প্রচলিত ফি ও চার্টের বাইর কোন বাড়তি মাসুল ধরা হচ্ছে না – যা সঠিক বলে মনে করি না।

…শোনা যাচ্ছে একটি ট্রানজিট চুক্তিও হবে। সেখানে মাশুল নেয়ার ব্যবস্থা থাকবে। এটির বিষয়ে কিছুটা অস্পষ্টতা রয়েছে।…. ভারত বাংলাদেশের উপর দিয়ে তাদের অন্য অংশে পণ্য পরিবহনে মাশুল দেবে না? নাকি ভারত তৃতীয় কোন দেশে পণ্য পাঠালেই কেবল মাশুল দেবে? এই জায়গাতে স্বচ্ছতার দরকার আছে।… এছাড়া ভারত বাংলাদেশের পায়রায় একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে অর্থায়ন করতে চাইছে। তবে আমাদের শঙ্কার জায়গা হলো এই যে, যোগাযোগের বিভিন্ন ক্ষেত্রে, যেমন নৌ, স্থল, সমুদ্র এগুলোর চুক্তি সব বিচ্ছিন্নভাবে হচ্ছে। এই ক্ষেত্রে সমন্বয়ের সমস্যা, প্রাতিষ্ঠানিক যৌক্তিক কাঠামো গড়ে তোলায় সমস্যা হবে, এক্ষেত্রে একটি অভিন্ন নীতিকাঠামো গড়ে তোলা বড় চ্যালেঞ্জ হবে। দরকষাকষিতেও বাংলাদেশ পিছিয়ে যাবে।’

এই লেখায় এবং বিভিন্ন সময়ে ভারতের সাথে চুক্তির বিষয়ে সিপিডির যৌক্তিক পর্যালোচনা সব সময়ই জারি ছিলো। তুলে দেয়া লেখার ভাষার সাথে ট্রানজিট দিলে দেশ সিঙ্গাপুর হয়ে যাবে এই ভাষা মেলে? এমন মিথ্যাচার কোন রোগের আলামত?

এই দেবপ্রিয়দের শ্বেতপত্র থেকেই আমরা হাসিনার দুর্নীতির নির্ভর‍যোগ্য ডকুমেন্টেশন পাচ্ছি যা কিনা ইতিহাসের উল্লেখযোগ্য বয়ান হয়ে থাকবে। অথচ মাহমুদুর রহমান তাকে স্রেফ হিন্দু নামধারী বলে একটা ট্যাগ লাগায় দিয়ে গলাবাজি করলো। কেন? কারণ, মাহমুদুর রহমান হিরোইজমে ভুগেন। তিনি ছাড়া দেশের জন্য কেউ কাজ করতে পারেন এই ব্যাপার তার হজম হয় না।

আমার লেখায় অনেকেই আহত নিহত হইতে পারে। But facts don’t care about your feelings. আপনারা বরং ২০০৫ সালের বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকাকালীন মাহমুদুর রহমান যখন ভারতের টাটার বিনিয়োগ পাওয়ার জন্য যুক্তি তর্ক জোগাড় করে আলাপ করতেছিলো সেটা খুঁজে দেখেন। তার বিপরীতে আনু মুহাম্মদ এই বিনিয়োগের নেগেটিভ কিছু দিক তুলে ধরায় খুবই বিরক্ত হচ্ছিলেন। আজকে সময়ের ফেরে আনু মুহাম্মদরা বিস্মৃত, দেবপ্রিয়রা ভারতের এজেন্ট, আর মাহমুদুর রহমানরা একমাত্র বিপ্লবী।

মাহমুদুর রহমান যদি তার ভিতরকার ফ্যাসিজমের তালাশ করতে পারেন, আমার দেশ পত্রিকাকে গুজব প্রচার করে আরাম দেয়ার মাধ্যম না করে সত্য তুলে ধরার জায়গায় নিতে পারেন, তবে তার সাহস দেশের কাজে আসবে। নয়তো বিভাজনের খেলা খেলে না বুঝেই দিল্লির পারপাস সার্ভ করে যাবেন।

ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন: