শ্রীলংকায় বিদ্যুতের দাম কমেছে সাড়ে ২২ শতাংশ


অনলাইন ডেক্স প্রকাশের সময় : জুলাই ১৬, ২০২৪, ৩:৩০ অপরাহ্ন
শ্রীলংকায় বিদ্যুতের দাম কমেছে সাড়ে ২২ শতাংশ

মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে ভোক্তা ও শিল্পে বিদ্যুতের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে শ্রীলংকা। এর মধ্যে ভোক্তা পর্যায়ে কমানো হয়েছে সাড়ে ২২ শতাংশ ও শিল্পে ৩৩ শতাংশ। বিদ্যুতের নতুন এ মূল্য আজ থেকে কার্যকর হবে।

শ্রীলংকার মানুষ গত এক যুগে আর্থিক দুর্গতির সবচেয়ে খারাপ সময় পার ২০২২ সালে। অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে ওই বছর মোট দেশজ উৎপাদন ৭ দশমিক ৮ শতাংশ কমে যায়। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে ২৯০ কোটি ডলার ঋণের জন্য চুক্তি করে দেশটি। সেই চুক্তির শর্তের অংশ হিসেবে গত বছরের সেপ্টেম্বরে বিদ্যুতের দাম এক লাফে ৭৫ শতাংশ বাড়িয়ে দেয় কলম্বো। এরই ধারাবাহিকতায় গত ফেব্রুয়ারিতেও বিদ্যুতের দাম ৬৬ শতাংশ বাড়ানো হয়।

তবে এর কয়েক মাসের মধ্যেই অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে বিদ্যুতের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিল দ্বীপ রাষ্ট্রটি। এরই মধ্যে অর্থনৈতিক গতিতে নাটকীয় পরিবর্তন এনে বাংলাদেশের চেয়ে প্রবৃদ্ধি কয়েক গুণ এগিয়ে নিয়েছে।

এদিকে অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি ঢেলে সাজাতে শ্রীলংকা বিদ্যুতের দাম কমানোর সিদ্ধান্তে গেলেও বিপরীত চিত্র লক্ষ করা যাচ্ছে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে। দেশের অর্থনীতি ও বিদ্যুৎ খাতে উন্নয়নের কথা বলে বরং দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। সরকার থেকে প্রায়ই বলা হয়, বিদ্যুতের বিক্রিমূল্যের চেয়ে উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হয়। ভর্তুকির চাপ সামাল দিতেই দাম সমন্বয় করছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এ নিয়ে গত দেড় দশকে পাইকারি পর্যায়ে ১২ বার ও খুচরা পর্যায়ে ১৪ বার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে সরকার। এমনকি বছরে চারবার ভোক্তা পর্যায়ে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অভাবনীয় হারে ক্ষয় হয়েছে। সে কারণে আমদানির লাগাম টেনে ধরতে হয়েছে সরকারকে। তাই আর্থিক সংকট মোকাবেলায় আইএমএফের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণসহায়তা। এরই মধ্যে তিন কিস্তিতে মোট ২২৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। এসব ঋণের শর্ত পূরণ করতে গিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা থেকে শুরু করে আর্থিক খাতের সংস্কার করতে হচ্ছে। জ্বালানি পণ্যের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি নিতে হচ্ছে শুল্ক ও কর বাড়ানোর মতো কঠিন সিদ্ধান্তও। যার প্রভাব দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর পড়েছে। উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বাজারে পণ্যের দাম আরো বাড়ছে। ফলে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না মূল্যস্ফীতি। সর্বশেষ জুনেও দেশের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ, যেখানে চলতি বছরের মে মাসে শ্রীলংকার ছিল মাত্র দশমিক ৯ শতাংশ।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, শ্রীলংকার মতো দেশ যারা আর্থিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিল, আর্থিক বিভিন্ন নীতি কাঠামো সংস্কার করে তারা এরই মধ্যে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করেছে। সেখানে আমরা কেন বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বাড়াতে নীতি কাঠামো ঠিক করতে পারলাম না। বরং সরকারের রাজস্ব বাড়াতে ভোক্তা থেকে শুরু করে শিল্প পর্যায়ে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে। অথচ এর কোনো প্রয়োজনই হতো না, যদি আর্থিক কাঠামো সংস্কার ও উদ্যোগে আন্তরিক হওয়া যেত।

ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন: