২০২৪ গণ-অভ্যুত্থানের ফলাফল – খোজা স্বপ্ন দেখছে সে বাপ হয়েছে। নিশ্চয় খোজা স্বপ্ন দেখতে পারে, সে অধিকার তার আছে কারন সে মানুষ। মানুষই স্বপ্ন দেখে ঘুমের ঘেরে বা জাগরণে। শিক্ষার্থীগণের আহ্বানে, নেতৃত্বে সংগঠিত গণ অভ্যুত্থানে মানুষের বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে এবং এখনও তা বহাল আছে।
রাজমহলের অন্দর মহলে বাস করা কোন খোজা যদি বলে আমি বাপ হয়েছি তাহলে সেটা শুনে মুচকী হাসি দিতেই পারি, কিন্তু রাজমহলের অন্দরমহলের বাস করা খোজা যদি বলে আরে রাজা রাজকার্য করতে করতে এতো ব্যস্ত তার তো আবার দাসী বাঁদী উপ-পত্নীর অভাব নাই। আসলে রাজকুমার রাজকুমারীদের পিতা আমিই তাহলে এটা আর বাকস্বাধীনতা থাকে না। হয়ে ওঠে অপরাধ এবং শাস্তি যোগ্য অপরাধ।
পত্রিকা মারফত জানা যাচ্ছে কোন কোন রাজনৈতিক দলের দায়ীত্বশীল নেতার দাবী – ২০২৪ এর গণ অভ্যুত্থানে আমাদের ৪২২ জন নেতা-কর্মী, সমর্থক, অনুসারী, শুভাকাঙ্খী, শুভার্থী খুন,নিখোঁজঁ হয়েছে। এমন বয়ান যদি কোন দল দেয়, দাবী করে যদি তবে কি সেটা রাজমহলের অন্দর মহলে বাস করা খোজার রাজকুমার/রাজকুমারীর বাবা বলে দাবী করার মত হবে না?!
অস্বীকার করবো কি করে ৭ই জানুয়ারী ২০২৪ শেখ হাসিনার ড্যামী নির্বাচনের আগে ২০২৩ এর শেষ দিকে ২৮ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে ৪০ উর্ধ্ব রাজনৈতিক দল ও সংগঠন যুগোপথ আন্দোলনে ঢাকার পল্টন, মতিঝিল, বয়তুল মোকার্রম, প্রেসক্লাব এলাকা জুড়ে জমায়েত করলো। ৫৩ বছরের বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জমায়েত করেছিল এবং সে জমায়েত জনশুন্য করতে উদ্যোগী হয়েছিল গাজীপুরের সন্ত্রাসী জাহাঙ্গীর গং এবং পুলিশ। পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দে নেতা শুন্য, ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল বিশাল মঞ্চ। দিগ্বিদিক ছুটেছিল কর্মী সমর্থক শুভাকাঙ্খী। অথচ সেই পেটোয়া জাহাঙ্গীরকে তার বাহিনী সহ রুখে দিয়েছিল স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা উত্তরার হাউস বিল্ডিং প্রধান রাস্তার উপর। বাংলাদেশের জনগণ সাক্ষী তখনও পুলিশ বাহিনী আশায় বুক বেঁধে নির্বিচারে খুন করেছিল শিক্ষার্থীদের।
সেদিন পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেডে ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল মঞ্চ, অস্বীকার করবে কেউ? সেই খোঁজাগণ যখন তালিকা দেয় ৪২২ জন নেতা-কর্মী খুন হয়েছে ২০২৪ বর্ষার ছাত্র-জনতা গণঅভ্যুত্থানে তখন মানুষ হাসবে না কাঁদবে নাকি ঘৃণা করবে?
যাক সে কথা, বাকস্বাধীনতা নিশ্চয় বহাল আছে। ২০২৩ এর সেই জমায়েতে কেউ কি খুন হয়েছিল? আছে কোন হতা-হতের তালিকা? নাকি ২০২৪ এর বর্ষার ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীগনের প্রস্তুতকৃত তালিকা হাতে নিয়ে নামের পাশে ঠিক চিহ্ন দিয়ে দাবী করছেন এরা আমাদের নেতা-কর্মী, সমর্থক শুভাকাঙ্খী। নিশ্চয় এরা আপনাদের শুভাকাঙ্খী কিন্তু নেতাকর্মী সমর্থক কিনা সেটা নিশ্চিত করা দুরূহ। কারণ শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী রেজিমের (আওয়ামী জোটভুক্ত সকল দল সহ) উপর মানুষের ঘৃণা এতোটাই প্রকট হয়েছিল যে আওয়ামী রেজিমের বিপক্ষে যে বা যারাই রাস্তায় নামত তাদের শুভকামনা করতো আপামর জনগণ। জনগণ ড্যামী নির্বাচন প্রত্যাক্ষাণ করেছিল, ইতিহাস সাক্ষী।
আপসোস। জেড-জেন যে রাজনীতির ভাষাই পাল্টে দিয়েছে সেটা বুঝা তো দূরের কথা, আমাদের তাবদ রাজনৈতিক দলগুলি এটাও বুঝলো না যে লাশ টেনে ধরে – এই লাশ আমার বলে রাজনীতি করার দিন বাংলাদেশে শেষ। রংপুরের শহীদ সাঈদ সমগ্র তরুনদের শিখিয়ে গেছে বৈষম্য দূর করতে সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ এর বুকে টাইটানিকের গলুই এ দু হাত প্রসারিত করে বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারের গুলির সামনে, হয়ে উঠতে হয় সাচ্চা দেশ প্রেমিক। নীপিড়কের বুলেটকে আলিঙ্গ করতে হয় পরম মমতায়। তবেই কেবল নীপিড়কের ভীত কেঁপে ওঠে। মুক্ত হয় স্বদেশ।
বোধ করি ৫৩ বছরের বাংলাদেশে এই প্রথম আন্দোলনের শাহীদ, নিখোঁজ ও আহতদের তালিকা করছে এবং তাদের স্মরণে ‘গন ভবন’ কে স্মৃতি যাদুঘরে পরিণত করবার ঘোষণা দিয়েছে। ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থান কোন দল বা সংগঠনের ব্যনারে সংগঠিত না হলেও তারা অন্তত লড়াকু শহীদদের, নিখোঁজ এবং আহতদের পূর্নাঙ্গ তালিকা করবার প্রত্যয়ে কাজ করছে।
আবারো স্যালুট জেড-জেন।
আদীল আমজাদ হোসেন
লেখক, রাজনীতি বিশ্লেষক
ঢাকা।
আপনার মতামত লিখুন :