রুচি’ এর আড়ালে কি?


নিউজ ডেক্স প্রকাশের সময় : মার্চ ৩১, ২০২৩, ৪:৫৩ পূর্বাহ্ন
রুচি’ এর আড়ালে কি?

সকল ঘটনার পিছনে কারন থাকে। কোন ঘটনায় এমনি এমনি ঘটে না। হঠাৎ করে নেশার ঘোর কেটে গেল কেন আর ধুপ করে জেগে উঠে সাংস্কৃতিক রুচির আকালের প্রশ্ন তুলে অন্ত্যজ শ্রেণীর মানুষ কে আক্রমণ করে বসল কেন মামুনুর রশিদ এবং মানুনুর রশিদ গংরা তার সুরে সুরে হুক্কা হুয়া হুক্কা হুয়া রব তুলে দাফাতে শুরু করল কেন !?

নিশ্চয় মানুষের বলা ভাল ব্যক্তির রুচি তৈরি করে সমাজ? যে সমাজে শ্রেণী বিদ্যমান সেই সমাজে শ্রেণীকে ভিত্তি করেই গড়ে উঠবে মানুষের রুচি/সংস্কৃতি। মামুনুর রশিদ গংরা ‘গ্রামীণ সংস্কৃতি/রুচি’ ‘গ্রামীণ কালচার’ এবং ‘শহুরে সংস্কৃতি/রুচি’ ‘শহুরে কালচার’ ‘আধুনিক সংস্কৃতি’ ‘প্রাচীন সংস্কৃতি’ শব্দগুলি সহ এই শব্দ গুলির সাথে মিশিয়ে থাকা কনসেপ্ট কে কি স্বীকার করবেন নাকি তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিবেন? যদি স্বীকার করেই নেন তবে শ্রেণী বিভক্ত সমাজে সংস্কৃতি তথা রুচি বিভক্ত থাকবে সেটা মামুনুর রশিদ গংদের মানতে নিশ্চয় সমস্যা নাই?

এখন প্রশ্ন আসে তাহা হইলে মামুনুর রশিদ গংদের সমস্যা কোথায়? কেন তারা হঠাৎ করে চমকে উঠে রুচি রুচি বলে চিৎকার শুরু করল? এবং মিডিয়ার স্বাধীনতা নিয়ে আপত্তি উত্থাপন করে বসল? আসলে তাদের সমস্যাটা হলো ক্ষমতা, ডমিনেট করা। এই ডমিনেটের আকাঙ্ক্ষাই আপনাতে বিভোর থাকা মামুনুর রশিদ গংদের নেশা ছুটে দেয়।

বাকের ভাই তাদের শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব করে সুতরাং বাকের ভাই খ্যাত নূর সাহেব ফ্যাসিস্ট সরকারের অংশ হয়ে উঠলেও তার রুচির সমস্যা নাই কিন্তু মমতাজ? সবচেয়ে বেশি ক্যাসেটের মালিক হলে এবং তার সঙ্গীত সকল পেষা, শ্রমজীবী মানুষের পছন্দ হলেও শিল্পী মমতাজ এর রুচির প্রশ্নে বা প্রসঙ্গে এই মামুনুর রশিদ গংরা হাত কচলে ‘না তবে’ ‘কিন্তু’ ‘ঠিক আছে কথা’, বলে আমতা আমতা করা শুরু করবে এবং নিশ্চিত কোন বক্তব্য রাখবে না মমতাজের রুচি প্রসঙ্গে। কারন এরা ব্যক্তিগত সততার নিরিখে এবং জনসেবায় সম্প্রক্ততার প্রশ্নে মমতাজের পায়ের নখের যোগ্যও নয়।

মামুনুর রশিদ গং রা ইনিয়ে বিনিয়ে বলছে মিডিয়ার অবাধ স্বাধীনতা থাকার দরকার নাই; তারা বাকশালের পক্ষে আওয়াজ তুলছে পক্ষান্তরে। তারা চায় নতজানু আজ্ঞাবহ মিডিয়া। তারা কামনা করছে মিডিয়া হোক নিয়ন্ত্রিত। যেন মিডিয়া মানুষের মাছ-মাংস-চাউলের স্বাধীনতার কথা না বলতে পারে। না পারে মানুষের জান-মালের নিরাপত্তার কথা।

যে দেশে বা সমাজে মিডিয়া নিয়ন্ত্রিত হয় সেই সমাজে বা দেশে শিল্প বা শিল্পী স্বাধীন হয় কি করে? যে দেশে শিল্প বা শিল্পী স্বাধীন হয় না সে দেশের মানুষ স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখতে পারে কি আদৌ?
নিশ্চয় না।

সংস্কৃতিই একটা সমাজের রুচি নির্মাণ করে। মিডিয়ার কাজ হল সংস্কৃতির আদান প্রদান বহমান রাখা। সকল শ্রেণী পেষার সংস্কৃতির আদান প্রদানের ভেতর দিয়ে মানুষের স্বস্তির জায়গা, শান্তির জায়গা, সুখের জায়গা নির্মাণ হয়। মামুনুর রশিদ গংরা সেখানেই বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে চায় কারন তারা নিজেদের সংস্কৃতির ধারক বাহক বলে মনে করে। মামুনুর রশিদ গং এর সাথে আছে ধর্মীয় উগ্রবাদী মন ভাবাপন্ন সূক্ষ্ম এবং ধূর্ত বুদ্ধি সম্পন্ন মানসিকতা যা কিনা কেবল ক্ষমতাকেই আঁকড়ে ধরে মানুষের উপর নিপীড়ন এবং শোষণ জারি রাখতে বদ্ধপরিকর। এই মানসিকতার মানুষেরা তারা, যারা সরাসরি ধর্মকে রাজনীতির টুল হিসাবে ব্যবহার করে অথবা ভোটে বাক্স ভরাতে ধর্মানুভুতি কে ব্যবহার করে।

বাঙ্গালার পরিচয় বাংলার মেঠো পথে চলতে চলতে ভেসে আসা রাখালের বাঁশির সুর, বা কোন কণ্ঠের আকুল করা গান। বাংলাদেশে ধর্মকে বটিকা হিসাবে ব্যবহার করে প্রথম আঘাত টা হান হয় এই সকল মানুষের উপর যারা আপন খেয়ালে গান ভাজত বা বাঁশিতে সুর তুলত। বন্ধ হয়ে যায় সকল আঞ্চলিক গানের দল, পালা গানের দল, এমনকি গ্রাম বাংলার বিনোদনের জায়গা যাত্রা পালা। সুর আর গুন গুন করে না মানুষে গলায়। বাংলার গ্রামে গ্রামে সুর ভাঁজা, সুর সাধা এই মানুষদের নিগৃহীত করা হয় এখনও ধর্মের দোহাই দিয়েই।

মামুনুর রশিদ গংরা এর বাহিরের কোন বস্তু বা আদর্শ আপনার সামনে হাজির করছে এমনটা ভাবার কোনই কারন নাই। বরং বিশ্বাস রাখুন মামুনুর রশিদ গংরা রুচির নামে রুচিহীন স্বৈরাচারী সংস্কৃতির আমদানীকারক এবং প্রচারক।

আদীল হোসেন, লেখক ও বিশ্লেষক।

ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন: