রাজনীতি যদি হয় উপনিবেশ বহাল রাখা জনগণ সেখানে সম্পৃক্ত হবে কেন?


নিউজ ডেক্স প্রকাশের সময় : মে ৫, ২০২৩, ১:৫৩ পূর্বাহ্ন
রাজনীতি যদি হয় উপনিবেশ বহাল রাখা জনগণ সেখানে সম্পৃক্ত হবে কেন?

আবারও দাম বেড়েছে চিনির। আমদানীকারক গন ইচ্ছেমত তাদের পণ্য মূল্য নির্ধারণ করতে পারে কি করে? রাষ্ট্র ব্যবস্থা কেন নিরুপায় হয়ে চেয়ে চেয়ে দেখে? আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য ইচ্ছেমত নির্ধারণ করে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ, জনগণের টাকা হাতিয়ে নিতে পারে কোন আইনের বলে বা সরকারের মদদে? সে বিষয়টা সামনে আনা জরুরী।

জনগণের টাকা হাতিয়ে নিবার কূটকৌশল এবং জনগণকে নিপীড়ন করবার কৌশল উন্মুক্ত করবার রাজনীতিই হউক বর্তমানের বাংলাদেশের রাজনীতি। রাজনীতি যদি জনগণের কল্যাণের জন্য হয় এবং রাজনীতি যদি কেবলই ক্ষমতার পালা বদলের হাতিয়ার না হয় তবে জনগণকে শোষণ নিপীড়নের কলা কৌশল জনগণের কাছে উন্মুক্ত করা ছাড়া কোন পথ নাই। জনগণকে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করা ছাড়া রাজনীতি হয়ে ওঠেনা জনগণের রাজনীতি।

বর্তমানের বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন এবং বিরোধী উভয় রাজনৈতিক দল এবং মোরচা ক্ষমতার পালা বদলের জন্য ধর্না দেয় বা দিচ্ছে বিদেশি দাতা দেশ গুলির কাছে অথবা ঋণ দানকারী দেশগুলির কাছে। তারা ভুলে যাচ্ছে প্রায় এই একই কৌশলে উপনিবেশ গড়ে উঠেছিল বৃহত্তর ভারতে। উপনিবেশ বাণিজ্য করতে এসে দখল করেছিল ভারত। সেই ভারতকে মুক্ত করেছিল দেশের আপামর জনগণ, করেছিল জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ।

বর্তমানের রাজনৈতিক দল গুলি জমিদারে পরিণত হয়ে ধর্না দিচ্ছে বিদেশীদের কাছে ক্ষমতার পালা বদলের জন্য। ক্ষমতায় বসবার লোভে। জনগণের স্বার্থ / দেশের স্বার্থ বিবেচনার কোন সময় এবং সুযোগ তাদের কাছে নাই; তাদের আরাধ্য যেন তেন ভাবে ক্ষমতায় আরোহণ।

পলাশীতে পতন হয়েছিল নবাব সিরাজের, মীর জাফর এর ইংরেজ প্রীতির কারণে। মীর জাফর ইংরেজদের সহায়তায় বাংলার স্বাধীন নবাব হবার স্বপ্ন দেখেছিল। মীর জাফর ভারতের স্বাধীন নবাব হয়েছিল কি? সে ইতিহাস খুঁজবার বা জানবার সুযোগ মানুষের হবার আগেই মানুষ দেখল, নিশ্চিত হল – ইংরেজ শাসন।

আমাদের রাজনীতি, আমাদের কোন পথে নিচ্ছে সেই হিসাবটা আমাদের সামনে আনা দরকার।

জনগণ জানে ডিমের মূল্য বৃদ্ধি পায় হাতে গোণা দুচারটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কারণে। মুরগীর আবাদ বাংলাদেশে হলেও মুরগীর দাম ওঠা নামা করে তাদের ইশারায়। আমাদের রাজনীতি থাকে এদের বিষয়ে নীরব, অভিযোগ তোলে জনগণ রাজনীতি বিমুখ। প্রকৃত ঘটনা ঠিক উল্টা। আমাদের রাজনীতি এমন এক কৌশল তৈরি করে রেখেছে যে জনগণ যেন রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হতে না পারে। না পারে কিসে তাদের ভাল এবং কিসে তাদের মন্দ সেটি বলতে। সেই কৌশলের একটা দিক বর্তমানের প্রতিটি রাজনৈতিক দলের দিকে উঁকি দিলেই পরিষ্কার হয়ে উঠবে – কোন নেতা লোকাল কোন সাংগঠনিক কাঠামোতে পদের অধিকারী হবার সাথে সাথেই ভাই থেকে হয়ে ওঠে বড় ভাই, স্যার, ম্যাডাম। তার হুকুম দিবার ক্ষমতা জন্মায় একক। মূল কথা সে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে থাকে দিনে দিনে, হয়ে ওঠে সর্বময় কর্তা। জনগণ পিছু হটতে বাধ্য হয়, বাধ্য হয় রাজনীতি বিমুখ হতে। জনগণের অংশগ্রহণ হয়ে পরে অংশগ্রহণকারীর ব্যক্তিগত লাভ অলাভ সম্পৃক্ত। জনগণ আর থাকে না রাজনীতির সাথে – জনগণ পরিষ্কার হয় রাজনীতি জনগণের স্বার্থ সংরক্ষণ করে না। নিরুপায় জনগণ তার মূল্যবান ভোট টাও বেঁচে দিতে বাধ্য হয় তাৎক্ষনিক লাভের বিনিময়ে। এই বেচা কিনাও জনগণকে শিখিয়ে দেয় রাজনীতি।

রাজনীতি যদি সুস্থ মানুষের বিকাশের সহায়ক না হয় তবে সে রাজনীতি জনগণের কল্যাণে আসে না আসতে পারে না। কোন উপায়ই নাই।

আদীল এ হোসেন
রাজনীতি লেখক ও বিশ্লেষক

ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন: