২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই বাংলাদেশ-ভারত ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ২০১৬ সালে পিআইডব্লিউটিটির আওতায় আশুগঞ্জ নৌবন্দর ব্যবহার শুরু করে ভারত। এতে বন্দর থেকে আখাউড়া দিয়ে ভারতে যায় পণ্যবাহী ট্রাক। সে বছর প্রতি টনে মাত্র ১৩০ টাকা মাশুল নির্ধারণ করা হয়। এক্ষেত্রে প্রতি টনে ডকুমেন্ট প্রসেসিং ফি ১০ টাকা, ট্রান্সশিপমেন্ট ফি ২০ টাকা ও সিকিউরিটি চার্জ ১০০ টাকা। এ হিসাবে প্রতি কনটেইনারে (২৫ টন) ট্রান্সশিপমেন্ট ফি পড়বে ৫০০ টাকা। আর চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য নির্ধারিত মাশুলেও প্রতি কনটেইনারের ট্রান্সশিপমেন্ট ফি ৫০০ টাকা।
সম্প্রতি ২০২৩ সালে ২৪ এপ্রিল দেওয়া রাজস্ব বোর্ডের নতুন আদেশ অনুযায়ী, ট্রান্সশিপমেন্ট ফি প্রতি মেট্রিক টনের জন্য ২০ টাকা, অথচ ২০১০ সালে এটি ছিল ১০০০ টাকা। এছাড়া ডকুমেন্ট প্রক্রিয়াকরণ ফি প্রতি চালানোর জন্য ৩০ টাকা, সিকিউরিটি চার্জ প্রতি টন ১০০ টাকা, এসকর্ট চার্জ প্রতি কন্টেইনার বা ট্রাক ৮৫ টাকা, বিবিধ প্রশাসনিক চার্জ ১০০ টাকা। অর্থাৎ ২০১০-এর নির্ধারিত চার্জের তুলনায় বর্তমানে ২০ ভাগের এক ভাগ ট্রান্সশিপমেন্ট চার্জ ধার্য হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই নামমাত্র মূল্যে বন্দর ও ট্রানজিট সুবিধা দেওয়ার ফলে বাংলাদেশের আয় তো হবেই না বরং এই ট্রানজিট সুবিধা দিতে গিয়ে যে অবকাঠামো ব্যবস্থাপনা করতে হবে তার খরচ বাংলাদেশ তুলতে পারবে না।
এদিকে ভারত স্থায়ীভাবে বন্দর ব্যবহার ও ট্রানজিট সুবিধা পেলেও বাংলাদেশের দাবির বিষয়গুলো উপেক্ষিত রয়ে গেছে। বাংলাদেশ ভারতকে স্থায়ীভাবে বন্দর ব্যবহার ও শত শত কিলোমিটার ট্রানজিট সুবিধা দিচ্ছে ৮ টি রুটে। পক্ষান্তরে মাত্র একটি রুটে ৩৪ কিলোমিটার সড়ক ভারত স্থায়ীভাবে ব্যবহার করতে দেয় না। তাদের ইচ্ছেনুযায়ী ও অল্প কিছু নির্দিষ্ট পণ্যে শর্তসাপেক্ষে বাংলাদেশকে ট্রানজিট সুবিধা দেয়।
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম এবং মংলা দুটি সমুদ্র বন্দর ভারত ব্যবহারের অনুমতি পেল এমন এক সময়ে যখন বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। দুটি সমুদ্র বন্দরের খুব সস্তা চুক্তির বিনিময়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভারতের সমর্থন পাওয়ার প্রচেষ্টা কি না সেই প্রশ্ন বাংলাদেশের জনগণ তুলতেই পারে।
বাংলাদেশ নেপাল থেকে কমদামে বিদ্যুৎ কিনার বিষয়েও চুক্তি করেছে। কিন্তু বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না, কারণ ভারত চাচ্ছে না। ভারত চাচ্ছে ভারতের উপর দিয়ে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ নিতে হলে ভারতকে বিদ্যুতের ট্রানজিট দিতে হবে। ভারতের ভূমি ব্যবহার করে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ নিতে হলে বাংলাদেশকে ভারতের নতুন নীতিমালায় ভারতের কোনো প্রতিষ্ঠানের অন্তত ৫০ শতাংশ মালিকানা দিয়ে নিতে হবে।
অপরদিকে ভারত আবার হিমালয়ে বেশ কিছু হাইড্রো পাওয়ার করছে, এসব হাইড্রো পাওয়ার ভারত বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে করিডোরের মাধ্যমে ভারতের কেন্দ্রীয় অংশে নেবে, ইতোমধ্যে ভারত বাংলাদেশকে দিয়ে চুক্তি করে নিয়েছে কিন্তু নতুজানু বাংলাদেশ সরকার কিছুই বলতে পারিনি এমনকী সরকার বিরোধী দলগুলো এইসব বিষয়ে আপত্তি তোলেনি।
বাংলাদেশের আগের সব সরকারগুলো ভারতের অনেক দাদাগিরিকে না বলতে পারলেও বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার গত ১৪ বছরে একবারও ভারতের দাদাগিরিকে না বলতে পারে নাই।
কামরুল ইসলাম
প্রধান সম্পাদক
আপনার মতামত লিখুন :