বাংলাদেশকে কে বাফার রাষ্ট্র বলা হয়। বাংলাদেশের দু’পাশে দুই শক্তিশালী বৃহৎ দেশ। চীন ও ভারত।
বাফার রাষ্ট্রের উপর এ দু’দেশ একধরনের উপনিবেশিকতা চাপিয়ে দিবার চেষ্টা করে এবং করবেই।
উপনিবেশিকতা চাপিয়ে দিবার সূদুর প্রসারি পরিকল্পনার মূল রাজনৈতিক ভাবে অন্যের উপর কর্তৃত্ব স্থাপন ও সাংস্কৃতিক ভাবে দেউলিয়া ঘোষনা করা।
ভারত বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ কাজটি করছে বেশ স্মার্টলি ও পাকাপোক্ত ভাবেই। ভারত বাংলাদের রাজনীতি নিয়ন্ত্রন করে এটি বাংলাদেশের মানুষের মুখ থেকে হামেশায় বের হয়ে আসে।
২০২৪ এর নির্বাচনের আগে ভারতে বসে বাংলাদেশের নির্বাচনের ছক কাটা হয়েছে। হাস সে হোক রাজহাস বা পাতি হাস, সে ভারতে বসে মিটিং করেছে। হাস ফিরে আসবে না। হাস বিদেই হয়েছে, এমন কথা আখছার শোনা গেছে ডিসেম্বর অব্দি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল ভারত এই সকল কলকাঠি নাড়ছে।
এবং বাংলাদেশের ২০২৪ এর নির্বাচনে ভারত ক্ষমতাসীন সরকারে অনুমোদন দিয়েছে বা না সে নিয়ে উদগ্রীব থেকেছে ক্ষমাসীন রাজনৈতিল দল সহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। সব শেষে ভারত বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নাক গলাবে না। ভারত বাংলাদেশে একটি গ্রহণযোগ্য(!) নির্বাচন দেখতে চায় জেনে প্রায় সকল রাজনৈতিক দলই আশ্বস্ত হয়েছিল।
বাংলাদেশে সামরিক শাসক ক্ষমতা দখল কেরে নিলে হোক সে শাসক জিয়া-উর-রহমান বা লে জে হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ বাংলাদেশের প্রতি ভারতে মোনভাব কেমন ছিল এবং সম্পর্কই বা কি ছিল?
বাংলাদেশ জন্মের পর থেকে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে, সীমান্ত হত্যায় ভারত কতোটা পিছিয়ে ছিল বা এগিয়ে এলো?
মিয়ানমারের রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মহলে ভারতের অবস্থান পক্ষে ছিল নাকি বিপক্ষে ছিল? রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাহার বিষয়ে ভারত তো ভেটো প্রদান করেছিল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।
০৭ই জানুয়ারী ছিল ফেলানী হত্যা দিবস। ২০২৪ এর নির্বাচন হলো সেই ফেলানী হত্যা দিবসেই। তারকাটায় ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীর গুলিতে ঝুলছে ফেলানীর লাশ। এ ছবিটি বাংলাদেশসহ বিশ্ব দরবারে ছিল ভারতের জন্য সীমাহীন লজ্জার। এখন বাংলাদেশে ফেলানী হত্যা দিবস পালিত না হয়ে হবে ‘ডামি নির্বাচন দিবস’ বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দল সাংস্কৃতিক সংগঠন পালন করবে সে দিবস। ফেলানী হত্যা দিবস পরে থাকবে ক্যালেন্ডারের পাতায়।
বাংলাদেশের ২০২৪ নির্বাচন ০৭ জানুয়ারির বদলে হতে পারতো ০৬ জানুয়ারী বা ০৮ জানুয়ারি। বেছে বেছে ০৭ জানুয়ারি কেন?
নিশ্চয় সীমান্ত হত্যা একটি রাজনৈতিক বিষয়? অর্থাৎ আমাদের রাজনৈতিক পরাজয় হয়েছে। রাজনৈতিক বিজয় হয়েছে ভারতের। এই রাজনৈতিক বিজয় ভারতকে কি লড়াই করে ছিনিয়ে নিতে হয়েছে? ভারতের হাতে এ বিজয় তুলে দিল কে বা কারা?
ইত্যকার বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের যে সাধারন জনগণ নীরব নিঃশ্চুপ ছিল সেই সাধারন জনগণ কেন প্রতিক্রিয়া করছে যখন ভারত বলে – ‘টাঙ্গাইল শাড়ী ভারতের পশ্চিম বঙ্গে উৎপাদিত হয়’ এ কথা শুনে? কেবল জামদানী বাংলাদেশের মানুষের সাংস্কৃতিক পরিচয় বলে?
বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাহার করা যাবে না শুনে অথবা বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃবর্গ ভারতের মাটিতে বসে মিটিং করছে শুনেও তেমন প্রতিক্রিয়া দেখায় না কেন?
সংস্কৃতি তাদের (বাংলাদেশ মানুষের) প্রীয় বা সম্পদ বলে আর রাজনীতি নস্টদের খাবার বা গায়ে মাখবার বিষয় বলে?
রাজসভায় দ্রৌপদীর বস্ত্র হরণ করায় লঙ্কা কান্ড ঘটে গেলেও বাংলাদেশের টাঙ্গাইল শাড়িতে ভারত হাত দিলে সলজ্জ হাসি দিয়ে মুখ লুকানো ছাড়া বাংলাদেশের উপায় কি!!!
বিশেষত যখন আওয়ামী রেজিমের মন্ত্রীর ভাষ্যে – ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক তো স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক।
শুরুতেই বলেছি উপনিবেশিকতা বহাল করতে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠূা ও সাংস্কৃতিক দেউলিয়াত্ব ঘোষনার দরকার।
একটা দেশের জান মাল সম্পদ সার্বভৌমত্ব নিয়ন্ত্রন করে সে দেশের রাজনীতি। আর এই রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব নিয়ে যে দেশের মানুষ নীরব নি:শ্চুপ থাকে সে দেশের মানুষের পরনের কাপড় ধরে পাশের দেশের মানুষ যে টানাটানি করবে তাতে আর অবাক হবার কি আছে!
বাই দ্যা ওয়ে আপনার রাষ্ট্র ব্যবস্থা নিশ্চিত করে আপনার রাজনীতি। রাজনীতি নিয়ে উন্নাসিকতা দেখিয়ে সতী সেজে বসে থাকতেই পারেন, তবে আপনার দেশের রাজনীতি যদি স্বনির্ভর স্বাধীন রাষ্ট্র পরিচালনা নীতির অন্তরায় হয় তবে আপনার প্রতিবেশী দেশ আপনার উপর রাজনৈতিক কর্তৃত্ব জারি রাখবে এবং সাংকৃতিক ভাবে সতীর বস্ত্র হরন করে শয্যা সঙ্গী হতে বাধ্য করবেই করবে।
দেখে নিন, জেনে নিন আপনার রাষ্ট্র পরিচালনা ব্যবস্থার গলদ কি এবং কোথায়? নিশ্চিত থাকুন আপনার রাষ্ট্র পরিচালনা ব্যবস্থার সংস্কার লাগবেই।
আদীল এ হোসেন
ঢাকা।
আপনার মতামত লিখুন :