বয়কোট কি রাজনৈতিক সমাধান? দরকার রাজনৈতিক সমাধান।


নিউজ ডেক্স প্রকাশের সময় : এপ্রিল ১০, ২০২৪, ৯:২১ অপরাহ্ন
বয়কোট কি রাজনৈতিক সমাধান? দরকার রাজনৈতিক সমাধান।

দরকার রাজনৈতিক সমাধান। বয়োকোটের ফলাফল নিশ্চয় আছে। এ বয়কোট অন্তত এতোটুকু টনক নাড়িয়ে দিয়েছে কোথায় বয়কোট করতে হবে। আর কেনই বা বয়কোট।

জনতা যখন গনপিটুনী দিয়ে মতিঝিলে দু’জন ছিনতায়কারীকে মেরে ফেললো তখন রাষ্ট্র চিৎকার শুরু করে দিল – বিচার নিজের হাতে তুলে নিবেন না। মজার বিষয় সেই ঘটনার রেশে ৩/৪ বছর ঢাকা শহরে ছিনতায় হারিয়ে গেল। এই গণপিটুনি দিয়ে ছিনতাইকারী মেরে ফেলার ঘটনাটা আমাদের জেলিফিস বাঙালির মাথায় আছে কিনা আমার জানা নাই কারন ঘটনাটা খুব নিকট অতীতের নয়।

গণ পিটুনি দিয়ে ছিনতাইকারী মেরে ফেলা এবং নিজ দেশের কৃষিপণ্য বয়কোট করা কি এক?

প্রশ্নটাতেই কিন্তু ঝামেলা জড়িয়ে আছে। দুটোই নিজ দেশের মানুষ। (১) ছিনতাই কারী (কোন না কোন ভাবেই তারা লুটেরা)। কে চুড়ান্ত শাস্তি দেয়া। (২) নিজ দেশের কৃষকের উৎপাদিত পণ্য বয়কোট করা।

নিশ্চয় দুটি বিষয় এক নয়। তবে দুটি ঘটনার কলকব্জা প্রায় অভিন্ন। ঢাকা শহরে যখন ছিনতাই প্রায় সর্দীকাশির মত প্রতিদিনের অসুখে পরিনত হয় তখন বিষয়টা আর মামুলি থাকে না হয়ে ওঠে ভয়ঙ্কর অসুখ। স্বৈরাচারী এরশাদ পতনের পর সর্দী কাশীর মত সিজিন্যাল অসুখে পরিনত হলো ছিনতাই। এমনও দেখা গেছে ১৫/২০ হাত দূরে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের সামনে অবাধে ছিনতায় করে পাড়া মহল্লার গলিতে ঢুকে পরছে ছিনতাই কারী। পুলিশ নীরব দর্শক।

প্রায় অভিন্ন ভাবেই বেড়ে চলছে প্রতি দিনই কোন না কোন পণ্যের দাম – চলে যাচ্ছে মানুষের নাগালের বাহিরে। আজ ওটার মূল্যবৃদ্ধি তো কাল সেটার। কোন ভাবেই যেন নিয়ন্ত্রন করা যাচ্ছে না বাজার মূল্য। নাকাল জনগণ ডাক দিয়ে বসলো বয়কোটের। লাভ কিছু হলো কি? নিশ্চয় কিছু লাভ হয়েছে, বিদেশী পণ্য থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিবার মানসিকতা কিছুটা হলেও মানুষের মনে তৈরি হচ্ছে বলে আাশা করা গেলেও আসল যে বিষয়টা মানুষ প্রত্যক্ষান করছে বা করার চেষ্টা করছে সেটি হলো লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধি। আমরা কি মূল্য বৃদ্ধির কলকব্জার দিকে নজর দিতে পারছি? বয়কোট করে কি পারছি দ্রব্যমূল্যের লাগাম ধরতে?

বিদেশী পণ্য বয়কোট আর দেশীয় কৃষি পণ্য বয়কোট কি এক?

বিদেশী যে কোন পণ্য বয়কোট করা মানে নিজ দেশের পণ্যকে প্রোমোট করা। আর নিজ দেশের কৃষি পণ্য বয়কোট করা মানে নিজ দেশের কৃষককে মেরে ফেলার সামিল।

তাহলে প্রশ্ন আসে নিজ দেশের উৎপাদিত পণ্য কি বয়কোট করা যাবে না?

আমার খুদ্র মাথায় বলে – না যাবে না, কারন কৃষি পণ্যের মূল্য আকাশ ছোঁয়া মানে এই নয় যে সে পণ্যের মূল্য কৃষকের হাতে পৌছে যাচ্ছে। পণ্যমূল্যের বৃদ্ধি কারনে কৃষক তার কাঙ্খিত মূল্য পাচ্ছে। তার উৎপাদন খরচ বাদে তার হাতে লাভেট টাকা থাকছে বড় অংকের। আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে কৃষি পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় কৃষক লাভবান হচ্ছে কিন্তু প্রকৃত পক্ষে বিষয়টা ঠিক উল্টাটা।

কৃষি পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারনে যদি কৃষক লাভবান না হয় তবে কৃষি পণ্যের মূল্য বাড়ে কেন? এর কলকব্জাটা আসলে কোথায়? আমাদের বয়কোট কি সেই কলকব্জাটা বন্ধের বা বিনাশের ব্যবস্থা করছে?

মূল্য বৃদ্ধিতে লাভবান হয় কারা?

কোন সন্দেহ নাই মূল্য বৃদ্ধিতে লাভবান হচ্ছে সিন্ডিকেটের সদস্যরা, ফড়িয়াগণ, রাস্তায় পরিবহনে চাঁদাবাজি করা চাদাবাজরা, তারা ফুলে ফেঁপে উঠছে। তারা চোরা পথে দেশের টাকা বিদেশে নিচ্ছে এবং বিদেশে সেগেন্ড হোম গড়ছে।

বিদেশে সেগেন্ড হোম করাদের ভেতর অনেককেই আমরা চিনি জানি, আমাদের রাষ্ট্রও এদের চিনে এবং জানে। এস আলম তার টাকা দেশ থেকে বাহিরে নিলো কি করে সে বিষয়ে তদন্ত করতে গেলে সে বিষয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা দেয় এমন তদন্ত করা যাবে না বলে। সুতরাং আমরা নিশ্চিত হতেই পারি আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থা, সরকার এবং বিচার বিভাগের টনকে আছে কে বা কারা পাচারকারী। অর্থ মন্ত্রী যতই গলাবাজী করে সংসদে বলুক না কেন – “আমি তো কোন পাচারকারীকে চিনি না, আপনারা যারা জানেন তারা পাচারকারীর তালিকা দিন আমি ব্যবস্থা নিব।”

নিশ্চয় বয়কোট সাময়িক কিছু ফলাফল দেয়। বয়কোটের স্থায়ী সফলতা পেতে হলে আমাদের এই মানুষগুলিকেই বয়কোট করতে হাবে যারা সেগেন্ড হোম গড়ছে পাচার করছে, খুন করছে। আমরা সেটি করতে পারছিনা কেন, সে দিকটায় নজর দিতে হবে। নজর দিতে হবে একজন ফকন্নীও নির্বাচিত জণপ্রতিনিধী হবার পর তার সম্পদ পাঁচ বছরে দুইগুন থেকে দুই হাজারগুন বাড়ে কি করে? এমন মানুষদের বয়কোট করতে হবে এবং রাষ্ট্রকে বাধ্য করতে হবে এই মানুষ গুলি বিপক্ষে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গ্রহণে। প্রয়োজনে এদেরকে শাস্তির আওতায় আনতে আইন এর পরিবর্তন আনতে হলেও সেটি করতে হবে, নতুবা বয়কোট দেশের কৃষক ও দেশের খুদ্রশিল্পের উপরে বুমেরাং হয়ে আসবে এবং বয়কোট কাগুজে বাঘ হবে জনগণের জন্য এবং সত্যিকারের বাঘ হয়ে সিন্ডিকেট, ফড়িয়া, দালাল, পাচারকারী এবং তাদের সহয়ক শক্তি তাদের হাতকেই শক্তিশালী করবে।

 

আদীল এ হোসেন
ঢাকা।

ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন: