

আইকন অব রেজিস্ট্যান্স।
আমার বাবার ছোটবেলায় সেই আকনটা ছিল মুজিব।
বাবার মুখে শোনা, সেসময় নাকি একটা প্রচলনই ছিল-
আইয়ুব খানের শাসন
ইন্দিরা গান্ধীর শোষণ
শেখ মুজিবের ভাষণ
আমার কিশোরবেলায়, রাজনৈতিক বোধবুদ্ধি ফুটতে থাকার পর থেকে এই রেজিস্ট্যান্সের আইকন খালেদা জিয়া।
ভদ্রমহিলা অনলবর্ষী না।
ফ্র্যাজাইল।
ওনার কোন সাহারা নাই।
মুজিবের তাজউদ্দিন ছিল, মোশতাক ছিল। রেহমান সোবহান ছিল, আবুল মনসুর ছিল। আর ছিল সিরাজুল আলম খানের নেতৃত্বে একদল ধুরন্ধর নিষ্ঠুর একটা গ্রুপ।
খালেদা জিয়ার কিছুই ছিল না।
বিধবা।
বিশ্বস্ত কেউ নাই।
দুই ছেলে দুই দেশে।
অফিসে, বাসায় সবখানে আড়িপাতার যন্ত্র।
আশেপাশে সব ভারতীয় গুপ্তচর।
শমসের মবিনের মত দালাল।
২০১৫তে খালেদা জিয়াকে সন্ত্রাসী প্রমাণের জন্য ডিজিএফআই খালেদা জিয়ার কয়েকটা কল রেকর্ড মিডিয়ায় ফাঁস করে দেয়।
সেই কল রেকর্ডের একটাতে উনি চট্টগ্রামের বর্তমানের মেয়র শাহাদাতের প্রসঙ্গে বলেন যে উনি শাহাদাতকে একটা দায়িত্ব দিয়েছেন কিন্তু আমির খসরু সেটাতে যেন বাঁধা না দেয়। আমির খসরু বাঁধা দিলে তাকে সরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন খালেদা জিয়া।
আরেকটা কল রেকর্ডে উনি সাদেক হোসান খোকার ওপর বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন যে যদি লোক নামাতে না পারে তাহলে পদ ছেড়ে দেয় যেন।
আরেকটা কল রেকর্ডে তিনি জামাতের কাছে লোক নামানোর জন্য বার্তা পাঠান।
২০১৫র সেই গুম ও ক্রসফায়ারের দিনগুলিতে যখন এই কল রেকর্ড শুনি তখন খালেদা জিয়ার প্রতি আমার ভালবাসা ও শ্রদ্ধা আরও গাঢ় হয়।
একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা।
অথচ তার আশেপাশে সব গাদ্দার। কারও ওপর তিনি ভরসা করতে পারেন না। তাকে ভরসা করতে হয় অন্য আরেকটা দলের নেতাকর্মীদের ওপর।
এই বৃদ্ধ বয়সে ওনার পরিবার ওনার পাশে নাই। ভয়ংকর একাকীত্ব। কোন সাপোর্ট সিস্টেম নাই।
আল্লাহ ওনাকে বাগ্মী বানান নাই। তুখোর কোন টিমও নাই তার। এক আর্মি ওয়াইফ থেকে হুট করে কোথা থেকে কি হয়ে দেশ বাঁচানোর দায়িত্ব এই গৃহবধুর কাঁধে এসে পড়েছে।
উনি ফাইট করেছেন।
ওনার সাধ্যের মধ্যে সবটুকু দিয়ে ফাইট করেছেন।
উনি জিততে পারেন নাই। সিরাজউদ্দৌলাও জিততে পারে নাই।
কিন্তু উনি লড়ে গেছেন। আল্লাহ ওনাকে যতটুকু যা সামর্থ্য দিয়েছে, উনি তার সর্বোচ্চটা দিয়ে লড়ে গেছেন।
উনি আপোষ করেন নাই। ওনাকে কিনতে পারে নাই।
শত গাদ্দারের মধ্যেও উনি ছিলেন বিক্রয়ের জন্য নহে।
আল্লাহ জিন্নাহকে বিজয় দিয়েছেন জন্য সিরাজ বা তিতুমিরের পরাজয় অর্থহীন না। আল্লাহ নাহিদকে সাফল্য দিয়েছেন অর্থ খালেদা জিয়ার নিঃসঙ্গ লড়াই অর্থহীন না।
সবাই যখন আত্মসমর্পণ করেছিলাম, আমি নিজেও যখন কায়দা করে বাঁচার রাস্তায় কম হোক আর বেশি হোক যেতে বাধ্য হয়েছি, বিইউপিতে পড়ার সেই এপলিটিকাল দিনগুলিতেও এই মানুষটার দিকে আমরা তাকিয়ে থেকেছি- দেখি উনি কি করেন।
২০১২ থেকে ২০২৪ – আমার বড় বেলার প্রায় পুরোটা সময় কেটেছে এই মানুষটাকে রেজিস্ট্যান্সের আইকন ধরে নিয়ে।
হ্যাঁ, খালেদার ভাল পিআর টিম নাই৷ তাকে নিয়ে মহাকাব্য লেখার মত সভাকবি নাই৷ ভুখানাঙ্গা লড়াকু চাষাভুষাদের দিয়ে এস্থেটিক ফ্যাসিবাদ তো আর হয় না। ফলে খালেদাকে ঘিরে সেই ইমেজটা তৈরী করা যায় নাই।
কিন্তু তাতে খালেদার কৃতিত্ব মুজিব বা সুভাষের চেয়ে কম হয়ে যায় না।
বাবার প্রথম কৈশোরের মুজিবের মতই আমার মধ্য কৈশোর থেকে যৌবনের মুক্তির প্রতীক ছিল খালেদা।
আল্লাহ মুজিবকে বিজয় দিয়েছেন। খালেদাকে দেন নাই। কিন্তু কৈশোর না পেরোতেই বাবার মন থেকে বাকশালি মুজিব মুছে গেছে, তবে আমরা সবসময় গর্ব করতে পারব- আমরা খালেদা জিয়ার নামে শ্লোগান দিয়েছি।
আমাদেরকে কোনদিন লজ্জা পেতে হবে না।


লেখক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
মোহাম্মদ ইশরাক




































আপনার মতামত লিখুন :