নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের লক্ষ্যে সরকার শিগগিরই একটি সার্চ কমিটি গঠন করবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ শনিবার সংলাপে অংশ নেওয়া রাজনৈতিকদলগুলোকে তিনি বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার দল-নিরেপক্ষ অবস্থানে থেকে ৬ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করবে।
পরে সন্ধ্যায় রাজধানীর হেয়ার রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন-নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের লক্ষ্যে সরকার দ্রুত একটি সার্চ কমিটি গঠন করবে। অন্তর্বর্তী সরকারের দল-নিরেপক্ষ যে অবস্থান, সেই অবস্থানে থেকে সার্চ কমিটি এবং নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে।’
তবে পরবর্তীতে ভোটার তালিকা হালনাগাদ থেকে শুরু করে, কবে নির্বাচন হবে- এসব বিষয়ে রাজনৈতিকদলসহ অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। মাহফুজ আলম বলেন, তখন আপনারা দেখতে পাবেন রোডম্যাপ কিভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে।
আজ প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ গণফোরাম, এলডিপি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২ দল, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, লেবার পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), জাসদ (আম্বিয়া) এবং ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টসহ ১০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেন। নতুন করে সরকার গত ৫ অক্টোবর রাজনৈতিকদলের সঙ্গে সংলাপ শুরু করে। কিন্তু দূর্গাপুজার কারণে কয়েকটিদল বাকি ছিল, যারা আজ সংলাপে অংশগ্রহণ করে।
প্রধান উপদেষ্টা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনার বিষয়ে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে আশ্বস্ত করেছেন। একই সাথে তিনি উল্লেখ করেন- পোশাক কারখানার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।
আওয়ামীলীগসহ ১৪ দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখার বিষয় সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে মাহফুজ আলম বলেন, যারা গত তিনটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। অবৈধভাবে নির্বাচিত হয়ে তারা জনগণের সাথে প্রতারণা করেছেন। এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট- তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করবে। কিভাবে বাধা বাস্তবায়িত হবে- সেটা দেখতে পাবেন। এটার আইনি ও প্রশাসনিক দিক আছে। যখন নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হবে তখন বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আওয়ামীলীগ বা ১৪ দল নিষিদ্ধের বিষয়টি সরকার পর্যালোচনা করছে। সকল রাজনৈতিকদল এবং সব ধরনের স্টেকহোল্ডারদের সাথে পরামর্শ করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সরকার একা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মাহফুজ আলম বলেন, জাতীয় পার্টি আওয়ীমীলীগের ফ্যাসিজমের নীরব সমর্থন দিয়ে গেছেন। তারা অবৈধ নির্বাচনের বৈধতা দিয়েছেন। এজন্য আমরা জাতীয় পার্টিকে আপাতত সংলাপে রাখছি না।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী জানান, সংলাপে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ জানতে চেয়েছেন- সংস্কার প্রক্রিয়া, আওয়ামীলীগের রাজনীতি এবং অর্থ লুটপাট ও অন্যান্য অপরাধের সাথে জড়িত ব্যাক্তিদের বিষয়ে কী করছে সরকার। গণহত্যার বিচার কার্যক্রম নিয়েও তারা কথা বলেছেন।
এর পাশাপাশি গণহত্যা চালানোর ব্যাপারে গণভবনে বসে ১৪ দল শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করেছেন-এই ১৪দলের বিষয়ে সরকার কী করবে রাজনৈতিক দলগুলো তা জানতে চেয়েছেন।
গণগত্যার সাথে সংশ্লিষ্ট অনেকে দেশের বাইরে কিভাবে পালিয়ে গেলো- এমন এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর ৫ থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত দেশে কোন সরকার ছিল না। এক সপ্তাহের মত পুলিশ কর্মবিরতিতে ছিল। সে সময়ে আপনি যদি জানেন একটি লোক পালাচ্ছে- তখন তো পুলিশ দিয়ে তাকে আটকানোর। কিন্তু সেই পরিস্থিতি ছিল না।
তবে গণহত্যার সাথে জড়িতদের আটক করার ব্যাপারে সরকারের সর্বোচ্চ চেষ্টা ছিল বলে তিনি উল্লেখ করে বলেন, সরকার এই অবস্থানে অনড় আছে।
প্রেস সচিব বলেন, গণহত্যার সাথে জড়িত ব্যক্তিরা কিভাবে পালালো সেটা সরকার তদন্ত করছে।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মুজমদার বলেন, কয়েকটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে উপদেষ্টা পরিষদের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে পরামর্শ এসেছে এবং তারা উপদেষ্টাদের কাজের মূল্যায়নের প্রস্তাব দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা এই প্রস্তাব মনোযোগ দিয়ে শুনে বলেছেন। পরবর্তীতে এ বিষয়ে জানানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর উপস্থিত ছিলেন।
আপনার মতামত লিখুন :