নারীর কর্মঘণ্টা
mohin
প্রকাশের সময় : নভেম্বর ১৫, ২০২৫, ৭:২০ অপরাহ্ন
Mohin Arham. Executive Editor
নারীর কর্মঘণ্টা
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারীদের দৈনিক কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টা থেকে ৫ ঘণ্টায় কমানো হলে তার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকদিক থেকে সম্ভাব্য সুবিধা ও অসুবিধা বিশদভাবে ব্যাখ্যা করা হলো —
সম্ভাব্য সুবিধা
১. সামাজিক দিক থেকে:
- পরিবার ও সমাজে ভারসাম্য সৃষ্টি: নারীরা পরিবার, সন্তান ও সমাজের প্রতি বেশি সময় দিতে পারবেন, যা পারিবারিক বন্ধন ওসামাজিক স্থিতি বাড়াবে।
- মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি: কাজের চাপ কমে গেলে উদ্বেগ, মানসিক ক্লান্তি ও হতাশা কমবে; জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে।
- নারীর কর্মজীবনে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি: অনেক নারী, বিশেষ করে বিবাহিত ও সন্তানের মা, সময়ের সীমাবদ্ধতার কারণে কাজকরতে পারেন না। ৫ ঘণ্টার কর্মসময়সীমা তাঁদের কর্মক্ষেত্রে যুক্ত হওয়ার সুযোগ বাড়াবে।
- লিঙ্গ সমতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা: যদি পুরুষদেরও অনুরূপভাবে পারিবারিক দায়িত্বে অংশ নিতে উৎসাহ দেওয়া হয়, তাহলে গৃহ ওকর্মজীবনের দায়িত্ব ভাগাভাগি বাড়বে।
২. অর্থনৈতিক দিক থেকে:
- নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি: কর্মঘণ্টা কমলে একই প্রতিষ্ঠানে আরও জনবল প্রয়োজন হবে, ফলে নতুন নিয়োগের সুযোগ তৈরি হতেপারে।
- উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি: গবেষণায় দেখা গেছে—কম সময় কাজ করা কর্মীরা বেশি মনোযোগী ও দক্ষ হয়, ফলে “কম সময়, বেশিফল” পাওয়া সম্ভব।
- নারী উদ্যোক্তা ও পার্ট–টাইম অর্থনীতি বৃদ্ধি: নারীরা অতিরিক্ত সময় ব্যবহার করে অনলাইন ব্যবসা, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা প্রকল্প বাপারিবারিক উদ্যোগে যুক্ত হতে পারেন।
- অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি (Economic Inclusion): সমাজের আরও বেশি নারী কর্মজীবনে যুক্ত হলে সামগ্রিকভাবে শ্রমবাজারেনারীর অংশগ্রহণ বাড়বে।
৩. রাজনৈতিক দিক থেকে:
- নারীবান্ধব নীতির প্রসার: এ উদ্যোগ সরকারকে নারীকল্যাণ ও জেন্ডার সমতার পক্ষে অবস্থান নেওয়া সরকার হিসেবে পরিচিতকরবে।
- রাজনৈতিক সমর্থন বৃদ্ধি: কর্মজীবী নারীদের ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যে সরকারের জনপ্রিয়তা বাড়তে পারে।
- আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি উন্নয়ন: নারী কর্মপরিবেশে নমনীয়তা আনায়ন বাংলাদেশের মানবসম্পদ উন্নয়ন ও লিঙ্গসমতারঅগ্রগতির ইতিবাচক বার্তা দেবে।
সম্ভাব্য অসুবিধা
১. সামাজিক দিক থেকে:
- লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য বৃদ্ধি: যদি কেবল নারীদের কর্মঘণ্টা কমানো হয়, তবে তাঁরা পুরুষদের তুলনায় “কম পরিশ্রমী” বা “কমসক্ষম” বলে বিবেচিত হতে পারেন।
- ক্যারিয়ার উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা: কম সময় কাজ করার কারণে নারীরা নেতৃত্বস্থানীয় পদে উন্নীত হওয়ার সুযোগ হারাতে পারেন।
- নারীর স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া: কেউ কেউ একে “নারীদের প্রতি সহানুভূতির মোড়কে সীমাবদ্ধতা” হিসেবেও দেখতে পারেন।
২. অর্থনৈতিক দিক থেকে:
- উৎপাদন ও আয় হ্রাস: কর্মঘণ্টা কমলে ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক উভয় পর্যায়ে আয়ের পরিমাণ কমতে পারে।
- প্রতিষ্ঠানের খরচ বৃদ্ধি: একই পরিমাণ কাজ সম্পন্ন করতে বেশি কর্মী লাগলে কোম্পানির বেতন ও প্রশিক্ষণ খরচ বাড়বে।
- দক্ষতা অর্জনের সুযোগ কমে যাওয়া: কম সময় কাজ করলে কর্মীরা বাস্তব অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান অর্জনে সীমাবদ্ধ হতে পারেন।
- বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হওয়া: কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা বিদেশি বিনিয়োগকারী “কম কর্মঘণ্টা” নীতিকে অদক্ষ শ্রমবাজারহিসেবে দেখতে পারে।
৩. রাজনৈতিক দিক থেকে:
- বিরোধী রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া: বিরোধী দল বা সমালোচকরা নীতিটিকে “অবাস্তব” বা “জনপ্রিয়তা অর্জনের কৌশল” হিসেবেআখ্যা দিতে পারে।
- শ্রমনীতি বাস্তবায়নে জটিলতা: সরকারি-বেসরকারি খাতে সমন্বয় না থাকলে নীতিটি কার্যকর হবে না, ফলে প্রশাসনিকজটিলতা বাড়বে।
- আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা কমে যাওয়া: শ্রমঘণ্টা কমলে রপ্তানিমুখী খাতে (যেমন গার্মেন্টস) উৎপাদন খরচ বেড়ে যেতে পারে, যা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় প্রভাব ফেলবে।
⚖️ সারসংক্ষেপ:
নারীদের কর্মঘণ্টা ৫ ঘণ্টা করা আবেগ প্রবণতার ভিত্তিতে একটি সামাজিকভাবে সহানুভূতিশীল ও মানবিক নীতি, যা পারিবারিকস্থিতি ও মানসিক সুস্থতায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
তবে এটি সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে অর্থনৈতিক বাস্তবতা, উৎপাদনশীলতা, বেতন কাঠামো ও শ্রমবাজারের ভারসাম্য বজায়রাখা অত্যন্ত জরুরি।
অন্যথায় এটি নারীর অগ্রগতিকে সীমাবদ্ধ এবং অর্থনীতিকে দুর্বল করতে পারে।
ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন:
আপনার মতামত লিখুন :