তরুণরাই বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ


নিউজ ডেক্স প্রকাশের সময় : জুলাই ১৩, ২০২৩, ১২:১৭ অপরাহ্ন
তরুণরাই বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ

আমাদের দেশের তরুণদের জানতে হলে এবং দেশকে উন্নতি অগ্রগতির দিকে এগিয়ে নিতে কিছু প্রশ্নের সমাধান খুঁজতেই হবে। নতুবা আমরা কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ কখনোই পাব না। খাদের তলানিতে পরে শুধু হাবুডুবুই খাবে। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে চাইলে এই প্রশ্নগুলির জবাব খুঁজে পেতেই হবে।

(১) তরুণদের হাতে নেশা ধরিয়ে দেয় কারা?
(২) কারা তরুণদের সমবেত হতে দিতে চায় না?
(৩) তরুণরা তাদের লেখাপড়া শেষ করে হতাশার রাজ্যে পা দেয় কেন?
(৪) পড়া লিখা শেষে বাবা মায়ের অনেক আদর যত্নে গড়া সন্তানকে বাবা-মা অবহেলা অবজ্ঞা তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে কেন?
(৫) তরুণদের আগামীর বাংলাদেশের দায়িত্ব নিবার মত করে গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয় কেন আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং সমাজ ব্যবস্থা?

ভাল বা মন্দের পক্ষে সব সময় আমাদের তরুণরাই হাতিয়ার (টুল) হয়। তরুণরা একটা স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়বার প্রত্যয়ে যতবার সমবেত হয়েছে; ঠিক ততবার তাদের স্বপ্ন ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সমাজে, দেশে, রাষ্ট্রে সব চেয়ে অবহেলিত হচ্ছে তরুণরা।

এই তরুণরা, নিজেদের কাজে নিয়োজিত রাখে সকল সময়। কোন থ্যাংক্স পাবার প্রত্যাশায় নয়। পাড়ার সকলের কাছে বখাটে বলে পরিচিত তরুণরা কেন বখাটে বা তারা কি অপরাধ মূলক কাজ করছে তা কিন্তু পাড়ার ৮০-৯০% মানুষের কাছে অজানা। এই তরুণরা যে অপরাধ মূলক কাজ করছে না তা কিন্তু একবারও বলছি না। এই ‘বখাটে’ অভিধা পেতে হলে তরুণদের সবার আগে পা দিতে হয় নেশার রাজ্যে। আর নেশার রসদ যোগাতে তাদের অনেক অপকর্মই করতে হয়। মজার বিষয় পাড়া বা মহল্লার ক্রান্তিকালে এই তরুণরাই থাকে সকলে আগে। সকলের সামনে। তারা পাড়ার সব অলিগলি এবং মানুষকে চিনে এবং জানে। তথাকথিত ভাল ছেলেরা এটি পারে না। করে না।

ঠিক তেমনই তরুণরাই দেশের ক্রান্তি কালে দেশের হাল ধরে। যেমন ধরেছিল ১৯৬২ সালে। সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক, কাজী আরেফ, আবুল কালাম আজাদ দের মত তরুণরা। পাকিস্তানের ক্রান্তিকালীন সময়ের করনীয় কি সেটি তৈরি করল। সিরাজুল আলম খান এটি নিয়ে দেখালেন শেখ মুজিবুর রহমান কে। তিনি – পড়ে দেখে লুফে নিলেন তৈরি হল ছয় দফা। সেই সময়ের এই চার তরুণ পরিচিতি পেল নিউক্লিয়াস নামে।

স্বাধীন বাংলাদেশে আওয়ামীলীগ এর সভাপতি শেখ হাসিনা এবং সাধারন সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক। সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের রসায়নে না মিলার কারনে আব্দুর রাজ্জাক আওয়ামীলীগ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন এবং পুনরায় বাকশাল গঠন করেছিলেন ১৯৮৩ সালে।

স্বাধীন বাংলাদেশ পরাধীনতার নাগপাশ থেকে মুক্তি পেতে মরিয়া। মুক্তি পেতে চেয়েছিল সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন ও উপনিবেশিক শাসন থেকে। নিউক্লিয়াসের প্রধান দুই সদস্য তৈরি করল একটি রাজনৈতিক দল – তৈরি হল জাসদ। তাদেরকেও নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হল। তাদের ভেতরে সাম্রাজ্যবাদী এজেন্টের অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে অথবা নিজেরাই হয়ে উঠেছিল তাদেরই এজেন্ট।

১৯৯০ এর সফল ছাত্র আন্দোলনের সকল দাবী দাওয়া উপেক্ষিত হল বি এন পি দলিয় জোট ক্ষমতায় এলে – ‘এ তো আন্দোলনের সময়ের দফা’ বলে ছুঁড়ে ফেলে দিল তরুণদের সেই ফসল। তরুণরা হতাশ হল আবারও।

তরুণরা সমবেত হলেই তাদের উপর নেমে আশে নিপীড়ন। সেই নিপীড়ন উৎরে গেলে তেদের ভেতর অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে দেয়া হয় সাম্রাজ্যবাদী এজেন্টদের যারা এই উপনিবেশিক শাসনের দাসত্বকে তাজা রাখতে চায়। প্রশ্নাতীত ভাবে নিপীড়ন, জুলুম, ঘুষ, দুর্নীতি, লুটপাট, পাচার চালু রাখতে চায়, জিতিয়ে রাখেতে চায়। কোন প্রশ্ন যেন না আশে সে কারণে আইন করে। দেশ পরিচালনায় এমন আইন যুক্ত করে। আইনের বৈধতা নিয়ে চ্যালেঞ্জ করার পথ বন্ধ করে “ইনডেমনিটি” নামক আইন দিয়ে।

১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন। ১৯৬০ এর পুরা দশক জুড়ে, ১৯৭০ এর নির্বাচন। এবং ১৯৯০ এর স্বৈরাচার পতন থেকে শুরু করে এই বাংলাদেশের জন্য যা কিছু ভাল তার সব কিছুই ঘটেছে এই তরুণদের হাত ধরে। সব শেষে তরুণরা সমবেত হল কোটা সংস্কার আন্দোলন নামে।

১৯৭৩ সালে আওয়ামীলীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ যে ভাবে কেবলমাত্র আওয়ামী লীগ কর্মীদের বিসিএস-এ নিয়োগ দিয়েছিলেন, জননেতা নাসিম ১৯৯৬-২০০১ ক্ষমতা কালে যে ভাবে বিসিএস নিয়োগ ব্যবস্থাপনাকে দলীয়করণ করেছিলেন, তার ধারাবাহিকতায় ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসেই আওয়ামী লীগ বিসিএস-এ কেবল আওয়ামী লীগ কর্মী ও আওয়ামী লীগের প্রতি অন্ধ আনুগত্য থাকায় সরকারি চাকরিতে নিয়োগের কাজটি চালিয়ে যেতে শুরু করে ‘মুক্তিযোদ্ধা কোঠা’ এর ছত্রছায়ায়। নামে মুক্তিযোদ্ধা কোটা হলেও মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেটের দলীয়করণের মাধ্যমে আওয়ামী রক্ত সরকারি চাকরিতে প্রবাহের চেষ্টা চালায় আইন এর আশ্রয় নিয়ে। সরকার ও দলকে একাকার করে। (দুঃখিত মনেপ্রাণে জননেতা হিসাবে পরিচয় করিয়ে দিতে চাইলেও ’৬০ এর দশকের এই তুখোড় ছাত্র নেতাকে জননেতা হিসাবে পরিচয় করিয়ে দিতে পারছি না।)

কোটা বিরোধী আন্দোলনে বাংলাদেশের শিক্ষিত তরুণরা সমবেত হলো। জয় ছিনিয়ে আনল। সম্প্রতি বাংলাদেশের তরুণদের এক সংগঠন কে নিয়ে অনেক তোলপাড় হৈ চৈ চলছে বিষ মাখানো তীর ছুঁড়ে দিচ্ছি আমরা সেই তরুণদের দিকে। তাদের পক্ষ নিয়ে যে বা যারা সোচ্চার ছিলেন সেই বা তারাই দ্বিগুণ উৎসাহে বিষ মাখানো তীর তাদের দিকে ছুঁড়ছি।

অনেকেই আপত্তি তুলবেন এই লিখায় ইতিহাস বিকৃতি হয়েছে। বলতেই পারেন। আপত্তি নেই। আচ্ছা ইতিহাস ঠিক কোনটা? কেউ কি বলতে পারবেন এটাই ঠিক ইতিহাস? সেই ইতিহাসের পাঠই নাহয় আমরা সবাই নিব।

দোষ বা অন্যায় করলে মানুষ বলবে। সেইই স্বাভাবিক। বলুক মানুষ। আপত্তি নেই। কিন্তু এই আমরা যারা এতো এতো কথা বলছি তারা কি একটু বুক ভরে শ্বাস নিয়ে ভাববার সময় পাচ্ছি কেন এমনটা ঘটে চলেছে, ঘটেই চলেছে ৫৩ বছরের বাংলাদেশে? এর ভেতরের বা পেছনের কলকব্জা কি এবং কোথায়? কেন কি ভাবে কারা কোন ব্যবস্থায় এই তরুনদের ব্যবহার করছে, হতাশার রাজ্যে পৌঁছে দিচ্ছে?

মানুষের মুক্তি কোথায়?
কিসে মানুষের মুক্তি?
কি করলে দেশটা শান্তির দেশ, সুখের দেশ হবে?
দেশটির নাম কি কেবল মুখে মুখেই থেকে যাবে ‘সোনার বাংলা’?
এই দেশে, এই দেশ পরিচালনার পদ্ধতিতে কি জবাবদিহিতা যুক্ত করা যাবে না?
দেশ পরিচালনায় যারাই যুক্ত থাকবেন দেশটা কি কেবলই তাদের দেশ হয়ে থাকবে?
দেশটা কি সকল মানুষের দেশ হবে না?

আদীল হোসেন
লেখক ও বিশ্লেষক

ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন: