ডেঙ্গু আক্রান্তে মৃত্যুর হার অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে বেশি


অনলাইন ডেক্স প্রকাশের সময় : জুলাই ১৩, ২০২৩, ৩:২৪ অপরাহ্ন
ডেঙ্গু আক্রান্তে মৃত্যুর হার অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে বেশি

দেশে চলতি বছর ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চসংখ্যক ডেঙ্গু রোগী শনাক্তের কথা গতকাল জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ২৪৬ জন। এ সময়ে মৃত্যু হয়েছে পাঁচজনের। এ নিয়ে বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত শনাক্তকৃত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ১৪৩ জনে। ২০২৩ সালে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃতের নিশ্চিতকৃত সংখ্যা ৮৮।

সে অনুযায়ী, চলতি বছর বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ৫ দশমিক ৪৫ জন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পরিসংখ্যানে প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, এ বছর বিশ্বব্যাপী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে বেশি।

বিষয়টিকে চরম উদ্বেগের কারণ হিসেবে দেখছেন রোগতত্ত্ব ও জনস্বাস্থ্যবিদরা। তাদের ভাষ্যমতে, রোগটির বাহক এডিস মশা এরই মধ্যে আচরণ বদলে ফেলেছে। এর সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গুর লক্ষণেও দেখা যাচ্ছে পরিবর্তন। এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের তীব্র জ্বরে আক্রান্ত হতেও দেখা যাচ্ছে কম। যদিও এর শক সিনড্রোম এখন আরো প্রাণঘাতী রূপ নিয়েছে। শনাক্তের আগেই মৃত্যুর ঘটনাও শোনা যাচ্ছে অনেক। আবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও হিসাব প্রকাশ করছে শুধু হাসপাতালে ভর্তিভিত্তিক।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) জনস্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্থা ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল (ইসিডিসি) বলেছে, চলতি বছর সারা বিশ্বে প্রায় ২২ লাখ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে এক হাজারের মৃত্যু হয়েছে। সংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি রোগী পাওয়া গেছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোয়। সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়া দেশগুলো হলো ব্রাজিল, বলিভিয়া, পেরু ও আর্জেন্টিনা। সর্বশেষ হিসাবে ব্রাজিলে চলতি বছর শনাক্তকৃত ১৫ লাখ ১৫ হাজার ৪৬০ রোগীর মধ্যে মারা গেছে ৩৮৭ জন। প্রতি হাজার রোগীর বিপরীতে মৃত্যুহার শূন্য দশমিক ২৫ জন। বলিভিয়ায় শনাক্তকৃত ১ লাখ ২৬ হাজার ১৮২ রোগীর মধ্যে ৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এক্ষেত্রে মৃত্যুহার হাজারে দশমিক ৫৫ জন। পেরুতে ১ লাখ ১৫ হাজার ৯৪৯ রোগীর মধ্যে ১৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রতি হাজারে ১ দশমিক ৪৩ জন। আর্জেন্টিনায় ৯৯ হাজার ৪৫৬ জনে মারা গেছে ৫৯ জন। হাজারে মৃত্যুহার দশমিক ৫৯ জন।

বাংলাদেশেও চলতি বছর ডেঙ্গুর সংক্রমণ রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। পরিসংখ্যানও বলছে, চলতি বছরের মতো এত রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর ঘটনা আগের বছরগুলোয় দেখা যায়নি। এতদিন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুর সংক্রমণ কেন্দ্রীভূত ছিল রাজধানীতে। এখন রাজধানীর বাইরে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও রোগটি ছড়িয়ে পড়েছে।

কীটতত্ত্ব, রোগতত্ত্ব ও জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, দেশে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নির্মূলে ও রোগী ব্যবস্থাপনায় জনস্বাস্থ্যের চিন্তাভাবনা উপেক্ষিত। শুরু থেকেই সমন্বিত উদ্যোগের ঘাটতি রয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ একে অপরের প্রতি দোষারোপ করছে। রোগ দেখে মশা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। অথচ এ কার্যক্রম সারা বছরের। যেসব রোগীর হিসাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দিচ্ছে, তা শুধু হাসপাতালে ভর্তিভিত্তিক। এর বাইরে যেসব রোগী বাড়িতে রয়েছেন এবং মারা যাচ্ছেন, তাদের হিসাব আসছে না। একই সঙ্গে বহু বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা হলেও সেসব রোগীর তথ্যও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে নেই।

ফলে ডেঙ্গুর সরকারি হিসাব একপক্ষীয়। পৃথিবীতে মশা টিকে রয়েছে নানা প্রতিকূল পরিবেশে অভিযোজিত হয়ে। আগে এডিস মশা পরিষ্কার পানি ছাড়া ডিম পাড়ত না। কামড়াত শুধু সকালে ও সন্ধ্যায়। এখন এমনটি দেখা যাচ্ছে না। এডিস ইজিপ্টি ও এডিস এলবোপিকটাস মশার মধ্যে এলবোপিকটাস দূষিত ও নোংরা পানিতে জন্মাচ্ছে। রাত-দিন সব সময়ই কামড়াচ্ছে। শহরের বহু বাড়িতে দিনের বেলাও অন্ধকার থাকে। আলো যায় না। আবার রাতের বেলাও অন্ধকার থাকে না। এটা আলোর দূষণ। এর ফলে মশাও আচরণ বদলেছে। আবার কীটনাশকও কাজ করছে না।

ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন: