ডলার ও টাকা সংকটে দেশের ব্যাংকিং সেক্টরের বেহাল দশা। ভিতরে ভিতরে কার্যত ফাপা হয়ে গেছে দেশের বেশির ভাগ ব্যাংক। ঋণ আদায় না করে ঋণের সুদকে আয় দেখিয়ে মুনাফা দেখাচ্ছে দেশের ব্যাংকগুলো।
সেই মুনাফার অর্থ থেকে লভ্যাংশ দিচ্ছে। সরকারকে ট্যাক্সও দিচ্ছে। আসলে কোনও আয়ই হয়নি, আমানতের অর্থ লুটে খাচ্ছে। অর্থনীতিবিদদের ভাষায় ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ঘরের থালাবাটি বেচে কোরমা-পোলাও খাচ্ছে ব্যাংকগুলো’। এভাবে আর কতদিন চলতে পারবে? আমানত শেষ হবে, গ্রাহকের অর্থ আর ফেরত দিতে পারবে না। দেশের ব্যাংক খাত এখন ব্যাপক দুরবস্থার মধ্যে রয়েছে। ব্যাংক খাতে টাকা নেই, আর ডলারও নেই। গতকাল এক সেমিনারে অর্থনীতিবিদদের বক্তব্যে এমন চিত্রই উঠে এসেছে।
গতকাল রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) ‘বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতে দুরবস্থার কারণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, সাধারণ মানুষ আমানত নিয়ে নিশ্চয়তা পাচ্ছে না, ব্যবসায়ীরা বেশি সুদ দিয়েও ঋণ পাচ্ছে না। টাকা বাইরে চলে গেলে তো সঞ্চয় থাকবে না। রাজস্ব খাতে সরকারের ব্যাপক ব্যর্থতা। সরকারের সামর্থ্য সরকার নিজেই হারিয়ে ফেলেছে। ধার করার সক্ষমতাও নেই। ব্যাংক খাতে টাকা নেই। পাশাপাশি ডলারও নেই। একই সঙ্গে সংখ্যার বিচারে দেশে ব্যাংক অনেক বেড়েছে। তবে সেবা ও সক্ষমতার বিচারে ব্যাংক খাত পিছিয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি ভুল ডাটা ব্যাংক খাতে। উইন্ডো ড্রেসিংয়ের মাধ্যমে এ খাতকে ভালো দেখানো হচ্ছে। এভাবে দেশের ব্যাংকিং খাতকে আমরা ঘূণে ধরিয়ে দিয়েছি। টাকা ছাপিয়ে অচল ব্যাংক সচল রাখা হচ্ছে। এতে কেবল সাধারণ মানুষের ক্ষতি হয়েছে তেমন না। সরকারেরও ধার নেওয়ার সক্ষমতা কমেছে। পরিস্থিতির উন্নয়নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো রাজনৈতিক সদিচ্ছা।
দেশের ডলার সংকটের চিত্র তুলে ধরে আইএমএফ’র সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, দেশে আর্থিক দুরবস্থার কারণে দিন দিন ঋণ নির্ভর হয়ে পড়ছে দেশ। ধীরে ধীরে ঋণ পাওয়ার সক্ষমতাও কমছে দেশের। তিনি বলেন, সরকার বাজেট বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত রাজস্ব আদায় করতে পারছে না। এখন বাজেট বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় টাকাও নেই, ডলারও নেই আমাদের। কিভাবে বাস্তবায়ন হবে, প্রশ্ন রাখেন তিনি। দেশের আর্থিক খাতের সংকট মোকাবেলায় রাজনৈতিক সদিচ্ছার কোনো বিকল্প নেই। আর্থিক খাতে সবচেয়ে বেশি তথ্য লুকানো হচ্ছে অভিযোগ করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, শুধু রফতানির তথ্য লুকানো হয় কি? দেশের সবচেয়ে বেশি তথ্য লুকানো হয় আর্থিক খাতে। যেখানে সঠিক তথ্য সবচেয়ে বেশি জরুরি। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন ১১ শতাংশ খেলাপি ঋণ দেখাচ্ছে। আসলে বাস্তবে খেলাপি বা মন্দ ঋণ ২৫ শতাংশ। এভাবে আর বেশিদিন চলতে পারবে না।
আপনার মতামত লিখুন :