কবরের মাটিটা শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন…..


নিউজ ডেক্স প্রকাশের সময় : জুন ১১, ২০২৩, ১২:২৪ অপরাহ্ন
কবরের মাটিটা শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন…..

মৃত্যুর পর আমি কোনদিনই কোন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সমালোচনা করি না। সেই প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা চরম বিতর্কিত কোন রাজনীতিক হলেও না। যারা করেন তাদের সমালোচনাও আমার ভাল লাগে না। অশোভন মনে হয়। অকৃতজ্ঞ, অতি দেশপ্রেমিক মানুষ মনে হয় তাদের।

আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধের প্রবাদপুরুষ, জাসদের তাত্ত্বিক নেতা সিরাজুল আলম খানের মৃতদেহ দাফনের আগেই আমরা বহুজন তাঁর রাজনৈতিক জীবনের ভুল, তাঁর ,”কলঙ্ক”, “হিংস্রতা” নিয়ে সমালোচনার তুমুল ঝড় বইয়ে দিচ্ছেন। শুধু এঁদের ক্ষেত্রে না, প্রায় সব প্রয়াত রাজনীতিক মুক্তিযোদ্ধার ক্ষেত্রেই তা করি। এটি আমাদের স্বভাবের উজ্জ্বলতম অলংকার হয়ে গেছে।

লক্ষ্য করলে দেখবেন এই সমালোচনা, বস্ত্রহরণের দৌঁড়ে যারা খুব বেশী অগ্রগামী তারা হয়তো মুক্তিযোদ্ধাই না, অনেকের জন্মটাও সে সময়ে হয়নি, এমনকি তাদের অনেকের পরিবারে একজন মুক্তিযোদ্ধাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।

সিরাজুল আলম খান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে জন্ম নেবার আগে জন্ম নিয়েছেন, মুক্তিসংগ্রামের সংগঠক, চিন্তক, জানবাজ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে।

তাঁকে নিয়ে সমালোচনা করবার আগে আমরা কেন ভুলে যাই তাঁরা জীবনটা বাজি রেখেছিলেন বলেই দেশটা স্বাধীন হয়েছে।

হ্যাঁ, তাঁর বা তাঁদের মত মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীন দেশে রাজনীতি করতে নেমে ভিন্ন মত, ভিন্ন দল করেছেন। বিতর্কিত, আত্মঘাতি, রাজনীতিকে শিরোধার্য মেনেছেন। হয়তো বিতর্কেরও জন্ম দিয়েছেন।

আমরা যখন রাজনীতির ইতিহাস লিখবো, পড়বো তখন অবশ্যই ইতিহাসের লেখক, পাঠক হিসেবে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা, সিরাজুল আলম খানের মত মানুষদের রাজনৈতিক জীবনের সমালোচনা করবো। তিনি অবশ্যই তাঁর কৃত রাজনৈতিক কর্মের দায় এড়াতে পারবেন না, যদি করে থাকেন। সে সমালোচনার অধিকার সবার অাছে। তবে সবার আগে ভাবা জরুরী, ভাবাটা শোভন, আমি কার সমালোচনা করছি, শুধু রাজনীতিকের নাকি একজন মুক্তিযোদ্ধারও, যে মুক্তিযোদ্ধার জন্য এই স্বাধীন দেশ, তার স্বাধীন মাটি।

অনুরোধ, মুক্তিযোদ্ধা রাজনীতিকদের কবরের ভেজা মাটিটা শুকাতে দিয়েন, কটা দিন অপেক্ষা করে, তারপর না হয় তাঁর বস্ত্রহরণ করুন, নিন্দামন্দের তুফান ছুটান, তাঁদের রাজনীতির ইতিহাস লিখুন। যার যা প্রাপ্য তাঁকে তা দিন, কোন অাপত্তি নেই, শুধু মৃত্যুর পর কবরের মাটিটা শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।

কেবল সিরাজুল আলম খান নন, যে কোন প্রয়াত, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার এটুকু সম্মান আমাদের মত মুক্তিযুদ্ধ না করতে পারা মানুষদের কাছে পেতেই পারেন।

শ্রদ্ধাঞ্জলি বীর মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীনতার স্বপ্নজাগানিয়া পুরুষ।

সাইফুদ্দিন আহমেদ নান্নু
সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, বাংলা বিভাগ খানবাহাদুর আওলাদ হোসাইন খান কলেজ।

ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন: