ডেস্ক নিউজ : ২৯ অক্টোবর তুরস্কের ১০১তম প্রজাতন্ত্র দিবস। এদিন মোস্তফা কামাল পাশা তথা কামাল আতাতুর্কের নেতৃত্বে তুরস্ক সালতানাত থেকে প্রজাতন্ত্রে রূপ লাভ করে। তুরস্ক মসজিদ ও মুসলিম ঐতিহ্যের দেশ। জনসংখ্যা অনুপাতে সেখানে মসজিদ বেশি।
এখানের মসজিদগুলো অনেকটা এক গম্বুজের। তুরস্কের যেকোনো শহরে গেলে একই আকৃতির মসজিদ চোখে পড়বে। এসব মসজিদ নির্মাণ ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য। বর্তমান কালেও শত শত বছর আগে থেকে চলে আসা তাদের একই আদলের মসজিদ নির্মাণ চালু রাখতে তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
তুরস্কের বড় বড় শহরে এই ধরনের প্রকাণ্ড দৃষ্টিনন্দন মসজিদ মানুষকে আকৃষ্ট করে। ইস্তাম্বুল, আংকারা, কোনিয়া, ইজমির, আদানা, মার্সিন, বুরসা—বড় বড় শহরে এক গম্বুজের দৃষ্টিনন্দন মসজিদ চোখে পড়বে।
কয়েক বছর আগে রাজধানী ইস্তাম্বুল থেকে আংকারায় স্থানান্তরিত হলেও ইস্তাম্বুল তার ঐতিহ্য ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। ইস্তাম্বুলের অবস্থান পৃথিবীর একেবারে মধ্যখানে বলা যায়।
বিশ্ব যদি এক দেশ হয়ে যায় তাহলে ইস্তাম্বুল তার রাজধানী হওয়ার দাবি রাখে। ইস্তাম্বুলে অসংখ্য দৃষ্টিনন্দন মসজিদ আছে। এর মধ্যে সুলতান আহমদ মসজিদ তথা ব্লু মসজিদ এবং সুলায়মানি মসজিদ (ইস্তাম্বুলের কেন্দ্রীয় মসজিদ) অন্যতম। এ দুই মসজিদ দেখতে প্রতিদিন শত হাজার পর্যটক ভিড় করে। সুলতান সুলায়মান এই মসজিদ নির্মাণ করেন।
মসজিদের কিবলার দিকে তিনি ও তাঁর পরিবারবর্গের কবর আছে। অন্যদিকে সুলতান আহমদ মসজিদ তথা ব্লু মসজিদ ইস্তাম্বুলের একেবারে প্রাণকেন্দ্রে, যা তোপকাপি জাদুঘর থেকে নিকটতম দূরত্বে।
প্রখ্যাত সাহাবি আবু আইয়ুব আনসারি (রহ.) মাজার কমপ্লেক্স মসজিদ, ইস্তাম্বুল জয়কারী সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদ মাজার মসজিদসহ ইস্তাম্বুলে আরো ১০-১২টি প্রকাণ্ড দৃষ্টিনন্দন মসজিদ আছে। তুরস্কে মিনারবিহীন মসজিদ চিন্তা করা যায় না। ইস্তাম্বুলের কেন্দ্রীয় তথা সুলায়মানি মসজিদ চার মিনারের। অন্যদিকে সুলতান আহমদ মসজিদ তথা ব্লু মসজিদ ছয় মিনারের। তোপকাপি জাদুঘর মসজিদে রূপান্তরিত হাঘিয়া সোফিয়া গির্জা, ব্লু মসজিদ নিয়ে বসফরাস প্রণালির তীরে তিন-চার বর্গ কিলোমিটার এলাকা ইস্তাম্বুলের প্রাণকেন্দ্র। এখানে রাত-দিন হাজার হাজার ভ্রমণকারী ঘুরঘুর করতে থাকে। উন্নত বিশ্বসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অমুসলিম হাজার হাজার পর্যটক ইস্তাম্বুলে ভ্রমণকালে ব্লু মসজিদ ও সুলায়মানি মসজিদ দেখতে আসে। অমুসলিমদের এসব ঐতিহাসিক মসজিদ দেখতে সুযোগ করে দেওয়া হয়। সেই লক্ষ্যে কিবলার বিপরীতে মসজিদে প্রবেশ করে দু-তিন ফুট উচ্চতায় ব্যারিকেড দিয়ে রাখা হয়।
তুরস্কের সঙ্গে আছে বাংলাদেশের ভ্রাতৃপ্রতিম সম্পর্ক। ঢাকা-ইস্তাম্বুল টার্কিশ এয়ারের দৈনিক ফ্লাইট আছে। বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে আছে নানা ব্যবসা-বাণিজ্য। তুরস্কে বাংলাদেশের বহু ছাত্র-ছাত্রী লেখাপড়া করছে। অসংখ্য বাংলাদেশি ভ্রমণের উদ্দেশ্যে তুরস্কে গমন করছে।
ইস্তাম্বুলের ব্লু মসজিদ, সুলায়মানি মসজিদের আদলে চট্টগ্রামের চন্দনাইশে পারিবারিক মসজিদ পুনর্নির্মাণ করেন এই পরিবারের কৃতী সন্তান জিয়াউদ্দিন আদিল। চন্দনাইশের ফতেহনগরে এই পুনর্নির্মিত টার্কিশ স্টাইলের মসজিদ দেখতে প্রতিদিন শত শত মানুষ ভিড় জমাচ্ছে। বস্তুত তুরস্কের মসজিদগুলো তাদের আভিজাত্য ও ঐতিহ্যের প্রতীক বললেও বাড়িয়ে বলা হবে না। তুরস্কের জাতীয় দিবসে সে দেশের কল্যাণ কামনা করছি।
আপনার মতামত লিখুন :