উত্তরবঙ্গ কৃষক সমাবেশ ২০২৫ এর গুরুত্ব


নিউজ ডেক্স প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ২৭, ২০২৫, ৯:৩৪ অপরাহ্ন
উত্তরবঙ্গ কৃষক সমাবেশ ২০২৫ এর গুরুত্ব

উত্তরবঙ্গ কৃষক সমাবেশ ২০২৫ এর দাবীনামাঃ

১. হাট ও ঘাট থেকে জমিদারী প্রথা উচ্ছেদ কর। ইজারা প্রথা বাতিল করে সরাসরি খাজনা তোল।

২. বীজ ও কৃষি উপকরণের দাম কমাও। কৃষকের সাথে আলোচনা করে কৃষি পণ্যের দাম নির্ধারণ কর। কৃষিকে কর্পোরেশনের থাবা থেকে বাঁচাও।

৩. তুলা ও রেশমের আবাদ বাড়াও। রেশম ও এণ্ডিপোকার লার্ভা খোলা বাজারে বিক্রির ব্যবস্থা কর। সুতা, কাপড় ও রং তৈরির জন্য গ্রামে গ্রামে তাঁতীদের ট্রেনিং সেন্টার খোল।

৪. শুধু ইলিশ নয়, সকল মাছের ডিম ছাড়ার মৌসুমে মাছ ধরা নিষিদ্ধ কর। কর্মহীন সময়ে জেলেদের রেশনের ব্যবস্থা করো।

৫. চরাঞ্চলে ভুয়া ভূমিহীনদের হাত থেকে খাস জমি দখলমুক্ত কর। প্রকৃত ভূমিহীনদের মধ্যে খাস জমি বিতরণ কর।

৬. দেশের সকল বন, নদী, নালা, বিল, পাহাড় দখল, বেচাকেনা এবং ইজারা প্রদান বন্ধ কর। কৃষি জমিতে পুকুর কেটে নয়, প্রাকৃতিক জলাশয়ে মাছ উৎপাদন বাড়াও।

৭. ভাঙন ঠেকাতে নদীর পাড় ও চর এলাকায় বিন্না ঘাস লাগাও। নদী থেকে অপরিকল্পিত বালু তোলা নিষিদ্ধ কর। নদী ভাঙলেই খাস নয়, এই আইন চালু কর।

৮. আন্তঃনগর ট্রেনে কৃষিপণ্য পরিবহনের জন্য ৩টি সুলভ বগি সংযুক্ত কর। পচনশীল কৃষিপণ্য বহনকারী যানবাহনকে রাস্তায় ও ফেরীতে আগে যেতে দাও।

৯. আখ ও বিট চিনির আবাদ বাড়াও। সকল চিনিকল সংস্কার করে চালু কর। কৃষকের গুড় উৎপাদনের স্বাধীনতা দাও। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলের আখ মাড়াই আইন বাতিল কর।

১০. মহাজনি প্রথা থেকে লবণচাষীদের রক্ষা কর। মিল মালিকদের পক্ষে সরাসরি ক্রয় কেন্দ্র খোলো। চাষীদের মতামতের ভিত্তিতে সরকারিভাবে লবণের দাম নির্ধারণ করো।

১১. গোবিন্দগঞ্জ ও ফুলবাড়ির কৃষকের নামে করা মিথ্যা মামলা বাতিল কর। শুধু ব্যক্তি-মালিকানা নয়, জমিতে সামাজিক মালিকানার সাংবিধানিক স্বীকৃতি দাও।

১২. অনাদায়ী কৃষিঋণ আদায়ে মামলা ও গ্রেফতারের আইন বাতিল কর। সকল ধরনের ক্ষুদ্র কৃষিঋণ মওকুফ কর।

উপরোক্ত দাবী গুলি সামনে এনে
“কৃষিতেই সমৃদ্ধি, কৃষকই বাংলাদেশ।”
“কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে।”
এই শ্লোগানে ২৬ জানুয়ারি ২০২৫ কুড়িগ্রামের চিলমারীতে হয়ে গেল ‘কৃষক মহাসমাবেশ ‘।

৫৩-৫৪ বছরের স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম কৃষক সমাবেশ।
এর আগে এই ভূখন্ডে এমন সমাবেশ হয়েছিল মৌলানা ভাসানীর উদ্যোগে কাগমারিতে “কাগমারি সম্নেলন” বাংলাদেশের ৫৩/৫৪ বছরে এমন সমাবেশ হয় নাই।

আয়োজকরা যে পরিমান কৃষকের সমাবেশ (গ্যাদারিং) প্রত্যাশা করেছিল তেমনটা না হলেও সমাবেশ হয়েছে এবং কৃষকদের জয় হয়েছে।

এর কিছু দিন আগে চিলমারীতে ৫ দফার দাবীতে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দেলনের সমাবেশ পন্ড করে, পুলিশ-প্রসাশনের সহায়তায় জামাত-শিবির হামলা চালায় উক্ত সমাবেশে।

সেবার রৌমারীর এসপি নাকি বলেছিলেন সবাই সভা সমাবেশ করবার আগে আমার সাথে / আমাদের আলাপ করে সভা সমাবেশের দিন ক্ষণ স্থান ঠিক করে আর আপনারা সরাসরি দাওয়াত পত্র নিয়ে হাজির হয়েছেন! দেখি কি ভাবে আপনারা সমাবেশ করেন।
উক্ত সমাবেশ পন্ড হওয়া নিয়ে বেশ আলাপ আলোচনা হয় কম-বেশি সারা বাংলাদেশে।

এবার উত্তরবঙ্গ কৃষক সমাবেশকে ঘিরে বিতর্ক উস্কে দেয় খোদ সরকারের আমলারা, সচিবালয় থেকে লোকাল প্রশাসন।

আয়োজকগণ বিশ্বাস করেছিল যেহেতু জনগনের সরকার এই অন্তরবর্তীকালীন সরকার, সেহেতু সরকারের আমলাদেরও মনোভাব কিছুটা হলেও পরিবর্তন হয়েছে। উপদেষ্টাদের কেউকেউ এ সম্মেলনে উপস্থিক থাকবেন বলে সম্মতি দিলেও তারা তা করেন নাই।
আমলাদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে ডিসি এর প্রস্তাব মত অর্থ সহায়তার জন্য সরকারি দপ্তরে আবেদন করে আয়োজকগণ। ভুলটা এখানেই।

বর্তমান সরকারের চরিত্র আর আমলাদের চরিত্রে যে ব্যাপক ফারাক এবং রাষ্ট্র পরিচালনা ব্যবস্থা এ ফারাক তৈরি করে রেখেছে।
এই রাষ্ট্র পরিচালনা ব্যবস্থার সংস্কার অপরিহার্য্য। সকল আমলা কর্মচারী সহ সরকার ও সরকার ব্যবস্থাকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা ছাড়া গত্যান্তর নাই।

সমাবেশ ছোট হোক বা বড় সেটি বিষয় না। কৃষকগণ তাদের ১২ দফা দাবী নিয়ে সমাবেশ করেছে এটাই আশার কথা। কৃষক সমাবেশের জয় হয়েছে।

করোনা কালে যখন সকাল প্রকার আমদানী মুখ থুবড়ে পরেছিল তখন এই কৃষকরাই পুরা দেশের খাবার যোগান দিয়েছে। কতজ্ঞতা তাদের প্রতি।

বর্তমানের কৃষি প্রধান বাংলাদেশের সেই কৃষকের সন্তানরাই কৃষকের পয়সায় লিখা-পড়া শিখে, কৃষক-মজুরের দেয়া পয়সায় বেতন নিয়ে, শ্রমীকের গড়া অপিসে বসে, কৃষক-শ্রমীক-মজুরের পয়সায় গাড়িতে “ঘুরে মুই কি হনু রে” ভেবে দিসেহারা হয়ে নিজের আত্ম-পরিচয় মুছে ফেলে বাবু সাজবার মতলবে তাদেরই বাপ-দাদার পিঠে চাবুক কষে। চাবুক কাষার সকল পাকাপোক্ত বন্দবস্ত নিশ্চিত করবার আইন বানায়।

দেশ ভাগের আগে থেকেই ভারত বর্ষের কৃষকরা সমগ্র ভারতে অন্নদাতা, মুক্তির ত্রাণ কর্তা, স্বাধীনতার অগ্র সৈনিক। ভারতের কৃষক বিদ্রোহ থেকে শুরু করে অদ্যবধি। ফকির মজনু শাহ থেকে ২০২৪ এর লড়াকু সকল সৈনিক।

উত্তর বঙ্গের আবু সাঈদ ২০২৪ এর আন্দোলনের নিরস্ত্র অগ্রসৈনিক হয়ে দু’বাহু প্রসারিত করে নিজ বুকে ফ্যাসিস্ট খুনির বুলেট বুকে পেতে নিয়ে ভেঙ্গে ফেলেছিল ‘জালিমের ভয়ের সংস্কৃতি’। ঝাঁকে ঝাঁকে তরুন-তরুনী, যুবক-যুবতি, আপামর জনতা উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠেছিল, পথে নেমে এসেছিল স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট এর পতনের আন্দোলনে। ঠিক তেমনই উত্তর বঙ্গ কৃষক সমাবেশ হয়ে উঠুক / হয়ে উঠেছে কৃষকের প্রেরণা।

“উত্তরবঙ্গ কৃষক সমাবেশ” থেকে “হাওড় কৃষক মহাসমাবেশ” এর ঘোষনা এসেছে। হাওড় মহাসমাবেশের দিন তারিখ ঘোষনা হবার দিন থেকেই সকলকে নিজ নিজ এলাকার মানুষ সংগঠিত করে সমাবেশে যোগ দিবার জন্য এবং সমাবেশে অর্থ সহায়তা দিবার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।

অন্তত নিজ এলাকার মানুষের যাওয়া আসা থাকা খাওয়ার ব্যবস্থার দায়িত্ব নিজেদেরই সংগঠিত ভাবে নিতে হবে, নিজ এলাকার মানুষের সহায়তায়।

সমাবেশের আয়োজকদের পয়সা দিয়ে সাহায্য না করতে পারলেও তাদের উপর এই চাপটা না দিলেও অনেক সহয়তা করা হবে। এই বিষয়টা মাথায় রেখে প্রত্যেকের উদ্যোগী হতে হবে নিজ দায়িত্বে।

উত্তরবঙ্গ কৃষক সমাবেশের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হবে। কোন সরকারই কৃষকদের সহায়তা দেয় নাই দিবে না। বরং সকল প্রকার অসহযোগীতায় সরকার করে এবং করবে।

কৃষকদেরই তাদের অধিকার আদায় করে আনতে হবে – ঠিক যেমন তারা সকল প্রতিকূলতায় সমগ্র জাতীর মুখে আহার তুলে দিবার দায়িত্বে, নেষায়, পেষায়, গভীর মমতায় মাটির বুক চিরে ফসল ফলায়।

প্রতিষ্ঠিত করতে হবে-
ক) কৃষকের মুক্তি
খ) শ্রমজীবীর মৌলিক চাহিদা মিটানোর মজুরী
গ) নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃস্টির পথ।

“জাগো বাহে কেন্ঠে সবাই”

আদীল আমজাদ হোসেন
সদস্য জাতীয় সমন্বয় কমিট, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন
ঢাকা

ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন: