কেপটাউনে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় টেস্টে দুই দলের ব্যাটসম্যানরাই যেন কে কার আগে আউট হয়ে মাঠ ছাড়বেন সেই প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন। আর তাতে এদিন উইকেটের বন্যা দেখলো ক্রিকেট বিশ্ব। কেপটাউন টেস্টের প্রথম দিনে দুই দল মিলিয়ে উইকেট পড়েছে ২৩টি।
প্রায় দেড়শ বছরের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম দিনে এর থেকে বেশি পেরেছে কেবল একবার। নিজের শেষ ম্যাচে নিয়মিত ক্যাপ্টেন টেম্বা বাভুমার অনুপস্থিতিতে অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েছিলেন ডিন এলগার। তবে শেষের শুরুটা একেবারেই ভালো হয়নি এই অভিজ্ঞ বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের। দিনের শুরুতে টস জিতে তার নেওয়া ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্তে হয়তো এলগার নিজেই এখন আফসোসে পুড়ছেন।কেননা সেই সুবাদেই কেপটাউনের সবুজ উইকেটে নতুন বোলে আগুন ঝরালেন ভারতীয় পেসার মোহাম্মদ সিরাজ।
গত বছর এশিয়া কাপে ফাইনালে তার ক্ষুরধার বোলিং দেখেছিল শ্রীলংকা, সেদিন ১২ রান খরচায় তুলে নিয়েছিলেন ৬ উইকেট।আর তাতে ৫০ এ আলআউট হয় লংকানরা।খেলোয়াড়দের ক্যারিয়ারে নাকি এমন স্বপ্নের দিন একবারই আসে। তবে সিরাজ খুব দ্রুতই সে দিন দেখে ফেললেন আরও দুইবার। এশিয়া কাপের পর বিশ্বকাপে তার ওপেনিং স্পেলে খেই হারিয়ে ৫৫ রানে অল আউট হয়ে যায় শ্রীলংকা।
আর গতকাল সিরাহের সেই রুদ্ররুপ দেখল প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানরা।কেপটাউনের উইকেট এমনিতে বোলারদের দারুনভাবে সহায়তা করছিল,এরপর সিরাজ যেভাবে লাইন-লেংথ নিয়ন্ত্রণে রেখে দুই দিকে বলকে সুইং করালেন তার কোন উত্তর ছিল না দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের।অবিশ্বাস্য সিরাজের বোলিং ফিগারটা দেখে যেন চোখ আটকে যায়, ৯-৩-১৫-৬।টেস্ট এই ডান হাতির ক্যারিয়ার ছাড়া বোলিং এর দিনে দক্ষিণ আফ্রিকা পেয়েছে রেকর্ড সর্বনিম্ন রানে অলআউট হওয়ার লজ্জা। আগে ব্যাট করা প্রোটিয়াদের ইনিংস থেমেছে মাত্র ৫৫ রানে। বর্ণবাদের অভিযোগ দীর্ঘ একুশ বছর নিষিদ্ধ থাকার পর ১৯৯১ সালে ক্রিকেটে ফেরে দক্ষিণ আফ্রিকা।এরপর কখনো এত বাজে দিন দেখতে হয়নি দলটিকে। প্রোটিয়াদেব্যাটসম্যানদের মধ্যে দুই অংক ছুতে পেরেছেন কেবল দুইজন।ইনিস সর্বোচ্চ ১৫ রান আসে ভেরেইনার ব্যাট থেকে।
এত কম রানে প্রতিপক্ষকে অলআউট করার পরেও ভারতের শুরুটা হয়েছিল কিছুটা অস্বস্তির। ম্যাচের তৃতীয় ওভারে শূন্য রানে ফেরেল ওপেনার যশস্বী জেসেওয়াল।তবে রোহিত শর্মা ও শুভমান গিলের ‘৫৫’ রানের জুটিতে স্বাগতিকদের টপকে যায় ভারত। রোহিত ৩৯ রানে ফেরার পর কোহলি হাল ধরেন দলের।দলীয় স্কোর একশ পেরানোর পর শুভমান(৩৬) ও আইয়ার(০) দ্রুত আউট হওয়ার পর রাহুলকে নিয়ে দলকে বড় লিডের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন কোহলি।এক পর্যায়ে ভারতের স্কোর ছিল ১৫৩ রানে ৪ উইকেট। আর সকালে শ খানেক রান নিতে পারলেই ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় প্রোটিয়ারা।দুইজন সেট ব্যাটসম্যান ক্রিজে, এরপর আসবেন জাদেজা-ফলে সেই লক্ষ্য খুবই সম্ভবই।তবে ঠিক তখনই ম্যাচ নিল নাটকীয় মোড়। আর কোন রান না তুলতেই ভারত হারায় তাদের শেষ উইকেট ! লুঙ্গি এনগিডির করা ৩৪তম ওভারেই শুরু হয় ভারতের অভূতপূর্ব ধসের।
এনগিডির সে ওভারেই রাহুলের পর ফেরেন রবীন্দ্র জাদেজা ও যশপ্রীত বুমরাহ। রাবাদা পরের ওভারে ব্যক্তিগত অর্ধশতক থেকে চার রান দূরে থাকতে ফিরলেন কোহলি। এরপর সিরাজ,কৃষ্ণাও ফিরেন রানের খাতা খোলার আগে ।১৫৩/৪ থেকে ভারতের স্কোর কার্ড তখন ১৫৩/১০! সুবিধাজনক জায়গা থেকে নাটকীয়ভাবে শেষ ৬ উইকেট হারিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ম্যাচে নিয়ে আসে ভারত।
দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয়বার যখন মাঠের নামছে তখনও দিন শেষ হওয়ার বাকি প্রায় ২০ ওভার।খ্যাপাটে এক দিন দেখা সবার তখন কৌতুহল,ম্যাচ কোন প্রথম দিনেই শেষ হয়ে যায় কিনা।না, দ্বিতীয়বার প্রোটিয়া ইনিংসে সেভাবে ‘ধস’ নামে নি। এলগার ও মার্করামের উদ্বোধনী জুটিতে ওঠে ৩৭ রান।এরপর ৮ রানে আবার তিন উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল স্বাগতিকেরা। তবে বেডিংহামকে নিয়ে মার্করাম(৩৬*) বাকিটা সময় দলকে আর কোন ক্ষতি হতে দেননি। ভারতকে দ্বিতীয়বার ব্যাটিংয়ে পাঠাতে হলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে এখনো করতে হবে ৩৬ রান।আপাত দৃষ্টিতে এটিকে সামান্য মনে হলেও কেপটাউনের এমন কঠিন উইকেটে প্রোটিয়াদের ইনিংস হারের সম্ভাবনা এখনো উড়িয়ে দেওয়া যায় না । সেটা হোক আর না হোক, নাটকীয় কিছু না হলে আজ দ্বিতীয় দিনেই শেষ হয়ে যেতে পারে এই টেস্ট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৫৫ (ভেরেইনা ১৫; সিরাজ ৬/১৫, মুকেশ ২/০, বুমরা ২/২৫) ও ৬২/৩ (মার্করাম ৩৬*, বেডিংহাম ৭*; মুকেশ ২/২৫, বুমরা ১/২৫)
ভারত ১ম ইনিংস: ১৫৩ (কোহলি ৪৬, রোহিত ৩৯, গিল ৩৬; এনগিডি ৩/৩০, রাবাদা ৩/৩৮, বার্গার ৩/৪২)
আপনার মতামত লিখুন :