এখন বাংলাদেশের আলাপের মূল শুর ধ্বনিত হচ্ছে এই সুরেই। ইয়াংরা ২০২৪ করেছে, আমাদের মুক্ত করেছে বলেই আমরা ওদের নাড়ী নক্ষত্রের হিসাব করছি। ওদের আপদ অথবা সম্পদ ভাবছি।
আসলে ওরা (তরুন-যুবরা) কি?
আমার এই লিখায় আমি মেয়ে-ছেলে দুজনকেই ইয়াং বলেছি। লিংঙ্গ বিষয়টা মাথাতেই আনি নাই। এখন আমরা কোন না কোন ভাবেই ইয়াংদের দূর্নাম শুনছি, ব্যঙ্গ করছি। নিজেরা কি করছি আর কি করেছি, সে ভাবনা ভাবছি না। যাক ফিরে আসি মূল আলাপে।
(১) আপনার/আমার বয়োস কত? ৫০/৬০ খুব বেশি হলে ৭০?
(২) বাংলাদেশের বয়োস কত?
(৩) নিশ্চয় ৫৪ বছরের বেশি নয়। এই ৫৪ বছর সময় কাল ধরে আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলের গঠন প্রকৃয়া কি ছিল, আছে এবং চলছে?
(৪) কেন ব্যাঙের ছাতার মত নিত্য নতুন রাজনৈতিক দল গড়ে ওঠে? কেনইবা একটি রাজনৈতিক দল ২/৪/৮ ভাগ হয়ে ব্রাকেট বন্দি দলে পরিনত হয়?
(৫) নিজে দ্রূত ধনী হওয়া ছাড়া ৫৪ বছরের বাংলাদেশের শিক্ষা কি? প্রাকটিস বা অনুশীলন কি?
(৪) আপনি আমি নিজেকে কি সৎ দাবী করতে পারি? খুব বেশী হলে আপনি আমি সুযোগ নাই তাই সৎ। বাংলাদেশের হাতে গোনা কতকগুলি সার্টিফিকেটধারী শিক্ষিত দাবীদার মানুষগুলি ছাড়া সকলেই সৎ, কর্মঠনিষ্ঠ, ও সত্যবান।
(৫) ইয়াংরা চুরি লুট পাচার করবেই, এ্যকাউন্টেবিলিটি/জবাবদিহিতার ব্যবস্থা করুন; দেখবেন ঠিক হয়ে আসবে সব। কারন তাদের বেড়ে ওঠাও সেই লোভ, ভয় ও হিংসার ভেতর দিয়ে। রাতারাতি তারা পাল্টাবে না।
(৬) ইয়াংরা এই সমাজে এই শিক্ষা নিয়েই বেড়ে উঠেছে। ওদের জন্ম দেয়া থেকে শুরু করে ওদের বেড়ে তোলা পর্যন্ত এই বুড়া হাবড়া-সয়তান গুলি।
(৭) ইয়াংরা ফেরেস্তা নয়। ওরাও আপনার আমার মত মানুষ এবং আপনার আমার দেয়া শিক্ষা নিয়েই বেড়ে উঠেছে। কোন জেনারেশনই বৈদ্যুতিক বাতি নয় যে, যে কেউ সুইচ টিপলেই জ্বলবে আবার নিভবে।
(৮) ইয়াংদের চিন্তা আমাদের চিন্তার চেয়ে ডেভলপড, আধুনিক। তারা ১৯৭০, ১৯৭৫, ১৯৯০, এবং ২০২৪ এ আমাদের বাঁচিয়েছে। পাহাড় ঠেলে ফেলে দিবার সাহস-শক্তি-সামর্থ ওদের আছে।
(৯) ইয়াংরা চন্চল, অস্থিরমতি, জেদী হবেই। এটাই বয়োসের ধর্ম।
(১০) ইয়াংদের আমরা অবিভাবকগণ লোভি, ভিতু, হিংসুটে করে বেড়ে তুলি সুতরাং তারাও আমাদেরই কপি এবং সমাজেরই প্রতিচ্ছবি। দূর্নীতবাজ, ধান্দাবাজ, তাড়াতাড়ি ধনী হওয়ার চিন্তায় বিভোর, সর্টকার্ট পথে চলা, ঘুষ, পাচার হয়ে ওঠে বাংলাদেশের প্রতিটা মানুষের আরাধ্য।
ইয়াং জেনারেশন এর প্রচুর সমালোচনা করুন কিন্তু ভালবেসে করুন। সমালোচনা করতে গিয়ে শত্রুতা তৈরী না করে ওদের সাথে ভালবেসে ওদের সঠিক পথ চিনাতে জানাতে আলাপ করুন, সাহায্য করুন।
ওদের তারুন্য, ওদের যৌবন, ওদের শক্তি ও সাহস ছাড়া আমরা এগুতে পারবো না। নিশ্চিৎ থাকুন।
আমাদের বারবার তরুন-যুবাদের কাছেই ফিরতেই হবে। ওরাই শক্তি, ওরাই দেশ গড়বে। আপনি-আমি অভিজ্ঞ।
অভিজ্ঞতা ও শক্তি একসাথে না হলে ১৯৭০, ১৯৭৫, ১৯৯০ এর তরুন-যুবকদের ছিনিয়ে আনা বিজয় – ব্যর্থ হবে। আমরা গর্তের কিনারাতেই আটকে থাকবো। আমাদের মুক্তি পরাহত হবে।
একই কাজ কি বার বার করবেন?
গত বছর ২০২৪ এর মত করেই আমাদের আবারও পরিত্রান খুঁজতেই হবে। আমাদের পরিত্রান/স্বাধীনতা/ইনকিলাব মানেই আমাদের তরুন-যুবকগণের শক্তি + বুড়াদের অভিজ্ঞতা। এ দুয়ের মিলন ছাড়া মুক্তি নাই।
রাষ্ট্র সংস্কার লাগবেই।
লাগবেই সংসদের নামে একব্যক্তির শাসন থেকে মুক্তি। সেই মুক্তি প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে তরুণ-যুবদের শক্তি ও সাহস + বুড়-হাবড়াদের অভিজ্ঞতা ও জানা বুঝা। ট্রেডিশনাল রাজনীতি আমাদের জিম্মি করেছে এক ব্যক্তির শাসনের অধিনে। প্রতিষ্ঠিত করতে হবে মানুষের স্থায়ী মুক্তি প্রতিষ্ঠার কার্যকরী ব্যবস্থা।
সংসদ, সংবিধান, আর্থীক খাত, স্থানীয় সরকার, বিচার বিভাগ, প্রশাসন ও ক্ষমতা কাঠামো, এই ৭ টি বিষয়ের অন্তত আশু সংস্কার করে সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ বানানো ছাড়া কোন গত্যান্তর নাই।
আদীল আমজাদ হোসেন
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন
ঢাকা
আপনার মতামত লিখুন :