অর্থ পাচারকারীদের শান্তিতে ঘুমাতে দেয়া হবে না: গভর্নর


অনলাইন ডেক্স প্রকাশের সময় : অগাস্ট ১৫, ২০২৪, ৩:৫৩ অপরাহ্ন
অর্থ পাচারকারীদের শান্তিতে ঘুমাতে দেয়া হবে না: গভর্নর

বিদেশ অর্থ পাচারকারীদের শান্তিতে ঘুমাতে না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি গতকাল বলেন, ‘দেশ থেকে টাকা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে এমন ব্যবস্থা নেয়া হবে, যেন তারা শান্তিতে ঘুমাতে না পারেন। তারা টাকার বালিশে ঘুমাতে পারবেন না। টাকা পাচারকারী ও তাদের সহযোগীদের অনুসন্ধানের মাধ্যমে খুঁজে বের করা হবে। ব্যাংক খাতে অনিয়ম-দুর্নীতিতে সহায়তাকারীদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।’

ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘এ মুহূর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কাজ হলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো, বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়ানো এবং ব্যাংক খাতে সংস্কার কার্যক্রমকেও অগ্রাধিকার দেয়া হবে। সংস্কারের জন্য প্রয়োজনে যোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে কমিশন গঠনের দরকার হলে সেটিও করা হবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৩তম গভর্নর হিসেবে গতকালই দায়িত্ব নিয়েছেন ড. আহসান এইচ মনসুর। অর্থ মন্ত্রণালয়ে দাপ্তরিক কাজ সেরে বেলা ১টার দিকে তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যান। এরপর গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি।

গভর্নর বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কাজ। গত দুই বছরে রিজার্ভ নেমেছে নিচের দিকে আর মূল্যস্ফীতি গেছে ওপরের দিকে। এখন জরুরি ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেয়া হবে। তবে এ পদক্ষেপের ফল রাতারাতি পাওয়া যাবে না। মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে এক বছরও লাগতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের আর্থিক খাত বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে। বিশেষ করে কিছু ব্যাংকের অবস্থা ভালো থাকলেও অনেকগুলোর অবস্থাই খারাপ। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতা লাগবে। বিদেশে এ-সংক্রান্ত অনেক অভিজ্ঞতা আছে। সেসব অভিজ্ঞতা এক্ষেত্রে আমরা কাজে লাগাতে পারি। এমন ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে ব্যাংকগুলো নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। তবে পদ্মা ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকের সমস্যা এক নয়। তাই ব্যাংক খাতের সংস্কারে সময় লাগবে। কীভাবে ঠিক করতে হবে, সেটা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করব। এ খাত সংস্কারের জন্য এক সপ্তাহের মধ্যে একটা পরিকল্পনা তৈরি করা হবে।’

গভর্নর বলেন, ‘কিছু ব্যাংকে মালিকানাসহ নানা বিষয়ে বিশৃঙ্খলা হচ্ছে। দ্রুত এটা নিয়ে একটা সমাধানে আসতে হবে। মালিকানার ক্ষেত্রে নানা রকম সমস্যা রয়েছে। অনেকের ন্যায্য দাবি থাকতে পারে। সেটা আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করা হবে। মালিকানা পরিবর্তনে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন, সেটা নির্ধারণ হবে অডিটের মাধ্যমে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের ইস্যুকৃত নোট এখন ৩ লাখ কোটি টাকারও বেশি, এসব নোটের প্রায় সবই ব্যাংক খাতের বাইরে চলে গেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাইরে চলে যাওয়া কালো টাকা ব্যাংকে ফেরানোর জন্য নোট বাতিলের মতো কঠোর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, ‘এটি খুবই সেনসিটিভ বিষয়। ভারতে নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের ফলাফল খুব ভালো কিছু হয়নি। ৯৮ শতাংশ নোট ব্যাংকে চলে এসে আবার বেরিয়ে গেছে। আমরা এখনই এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্তের কথা ভাবছি না। তবে ভবিষ্যতে পরিস্থিতির বিচারে বিষয়টি পর্যালোচনা করা হবে।’

গভর্নর বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনা হবে। কোনো তথ্য গোপন রাখার সুযোগ নেই। অনিয়ম-দুর্নীতির কোনো অডিট রিপোর্ট ড্রয়ারে তালা মেরে রাখার সুযোগ নেই। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

গভর্নর বলেন, ‘ব্যাংকিং কমিশন কিংবা টাস্কফোর্স যা-ই গঠন করা হোক, দুর্বল ব্যাংকগুলোয় অডিট করতে হবে। টাস্কফোর্স কিংবা কমিশন দিয়ে কাজ করতে হবে। যেসব দুর্বল ব্যাংক আছে, তাদের সবার অডিট করতে হবে। তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কী রকম সাহায্য দেয়া হবে, তা নির্ধারণ করা হবে নিরীক্ষা প্রতিবেদনের মাধ্যমে। এছাড়া মালিকানা পরিবর্তনে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে, সেটাও নির্ধারণ হবে অডিটের মাধ্যমে।’

ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন: