টাঙ্গাইলের মধুপুর ফল্টে মোটামুটি শক্তিশালী তীব্রতার ভূমিকম্প হলে ঢাকার যত ভবন আছে তার অর্ধের ধসে পড়তে পারে বলে একটি গবেষণায় উঠে এসেছে। শনিবার রাজধানীতে এক আয়োজনে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) পরিচালিত এই গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়।
এতে বলা হয়, মধুপুর ফল্টে ৬ দশমিক ৯ তীব্রতার ভূকম্পনে ঢাকার ৮ লাখ ৬৪ হাজার ৬১৯টি থেকে ১৩ লাখ ৯১ হাজার ৬৮৫টি ভবন ধসে বা ভেঙে পড়তে পারে, যা মোট ভবনের ৪০ দশমিক ২৮ থেকে ৬৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ।
ঢাকায় ভবন ধসের আশঙ্কার এ সর্বনিম্ন ও সর্বাধিক শতাংশের গড় করলে দাঁড়ায় ৫২ দশমিক ৫৩ শতাংশ অর্থাৎ অর্ধেকের বেশি।
রাজউকের ‘আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্প’র পরিচালক আবদুল লফিত হেলালী গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে বলেন, সিলেটে ভূমিকম্পপ্রবণ লাইনে ৭ দশমিক ১ মাত্রার ভূকম্পন হলেই ধসে পড়তে পারে ঢাকার ৪০ হাজার ৯৩৫টি থেকে ৩ লাখ ১৪ হাজার ৭৪২টি ভবন।
এদিন ঢাকার একটি হোটেলে রাজউক আয়োজিত ‘ইন্টারন্যাশনাল সেমিনার অন আরবান আর্থকোয়াক রেজিলিয়েন্স’ শিরোনামে এক অনুষ্ঠানে সংস্থাটির প্রধান প্রকৌশলী আবদুল লতিফ ঢাকায় ভূমিকম্পের সম্ভাব্য এ পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করেন।
‘রাজউকের আওতায় ঢাকায় মোট ভবন ২১ লাখ ৪৭ হাজার ২১৯টি, যার মধ্যে পাকা ভবন ৫ লাখ ১৩ হাজার ৫০৭টি। তবে ৩ হাজার ২৫২টি পাকা ভবনের ওপর জরিপ করা হয়েছে। এর মধ্যে অতি ঝুঁকিতে থাকা ৪২টি ভবন সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
‘মধুপুর ফল্টে সকালের দিকে ৬ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকায় ২ লাখ ১০ হাজার থেকে ৩ লাখ ১০ হাজার মানুষ নিহত হবে। দুপুরে হলে ২ লাখ ৭০ হাজার থেকে ৪ লাখ এবং রাতে যদি ভূমিকম্প হয় তাহলে ৩ লাখ ২০ হাজার থেকে ৫ লাখ মানুষ নিহত হবে।’
ভূমিকম্পের এই ঝুঁকি এড়াতে করণীয় সম্পর্কে আবদুল লতিফ হেলালী বলেন, ‘এই রিলেটেড একটা অরগানাইজেশন তৈরি করতে হবে। যা হবে আরবান সেইফটি রেজিলিয়েন্স ইনস্টিটিউট নামে। সংগঠনটি কাজগুলো এগিয়ে নিয়ে যাবে।
‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস, সিটি করপোরেশনসহ ঢাকায় যেসব সংস্থা আছে তারেই ভূমিকম্প-পরবর্তী কাজগুলো করে। আর নতুন অরগানাইজেশনটি ভূমিকম্পের ঝুঁকি প্রশমনে কাজ করবে।’
গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন, ‘জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও আইনের সঠিক প্রয়োগের অভাবে শহরের উন্মুক্ত স্থান দখল হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত নগরায়ন, নির্মাণকাজে অনিয়ন্ত্রণ ও নৈতিকতার অভাবে দেশের সব জেলা শহর ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
‘ঢাকায় জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি, অভিবাসনের ফলে ভূমিকম্প এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপদের ঝুঁকি ক্রমাগত বাড়ছে। ঝুঁকি সংবেদনশীল ভূমি ব্যবহারের পরিকল্পনা, টেকসই উন্নয়ন নীতি ও কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে বিদ্যমান দুর্বলতাকে কাটিয়ে একটি স্থায়ী ও ঝুঁকিমুক্ত শহর গড়ে তোলা যেতে পারে।’
এ জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের একার পক্ষে এ কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। ভূমিকম্প সহানীয় নগরায়নে সমাজের প্রত্যেক স্তরের অংশীজনকে সম্পৃক্ত হতে হবে এবং এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।’
সেমিনারে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ-বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, টেকসই অবকাঠামোর বিষয়ে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। রাজউকের সাথে দেশি ও বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে শহরে ভূমিকম্প সহনশীলতার বিষয়ে কাজ চলছে।
সেমিনারে রাজউক চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নবিরুল ইসলাম, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. শামীম আখতার, স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি মীর মঞ্জুরুর রহমানসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
বিএসএস ও যুগান্তর
আপনার মতামত লিখুন :