২৬৫ বছর আগের চিঠি খুঁজে পেয়েছেন: অধ্যাপক রেনো মোর্যু


অনলাইন ডেক্স প্রকাশের সময় : নভেম্বর ১৬, ২০২৩, ৩:১৮ অপরাহ্ন
২৬৫ বছর আগের চিঠি খুঁজে পেয়েছেন: অধ্যাপক রেনো মোর্যু

২৬৫ বছর আগে ফরাসি নাবিকদের উদ্দেশে লেখা একগাদা চিঠি খুঁজে পেয়েছেন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেনো মোর্যু।

লন্ডনের কিউ ডিস্ট্রিক্টে অবস্থিত ন্যাশনাল আর্কাইভসে কাজ করার সময় হঠাৎই একটি বাক্স নজরে আসে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউরোপীয় ইতিহাসের অধ্যাপক রেনো মোর‍্যু-র। বাক্সটি খোলার পর ফিতা দিয়ে বাঁধা চিঠির তিনটি বান্ডেল দেখতে পান তিনি। চিঠিগুলো কখনোই প্রাপক পর্যন্ত পৌঁছায়নি, সেগুলো কেউ খুলেও দেখেনি।

রেনো জানান, চিঠিগুলো কখনোই প্রাপক পর্যন্ত পৌঁছায়নি, সেগুলো কেউ খুলেও দেখেনি। চিঠিগুলোতে ১৮ শতকের বৈবাহিক ও পারিবারিক জীবনের সুন্দর কিছু মুহূর্তের পাশাপাশি পারিবারিক জীবনের কলহের চিত্রও ফুটে উঠেছে।

দুই শতাব্দী পুরনো এসব যার ৫৯ শতাংশই নারীদের লেখা। ‘তোমাকে আবিষ্ট করার জন্য আর অপেক্ষা করতে পারছি না’-চিঠিতে এমন একটি লাইন ছিল স্বামী জ্যঁ তপসেন্তের উদ্দেশে লেখা স্ত্রী অ্যান লুসেফের।

লন্ডনের কিউ ডিস্ট্রিক্টে অবস্থিত ন্যাশনাল আর্কাইভে দায়িত্বরতদের সহায়তায় চিঠিগুলোর বাঁধন খোলেন রেনো।

নাবিকদের উদ্দেশে লেখা এসব চিঠিতে নানা ব্যক্তিগত ও আবেগঘন বার্তা লেখা ছিল। যে নাবিকদের উদ্দেশে এসব চিঠি লেখা হয়েছিল, তারা ১৭৫৮ সালে সেভেন ইয়ারস ওয়ারের সময়টায় ব্রিটিশ বাহিনীর হাতে বন্দি হন।

একটি চিঠিতে স্বামী জ্যঁ তপসেন্তের উদ্দেশে তার স্ত্রী অ্যান লুসেফ লিখেন, ‘আমি তোমাকে আবিষ্ট করার জন্য আর অপেক্ষা করতে পারছি না।’ এটি একটি বাক্যাংশ, যা গভীর ভালবাসা প্রকাশের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। চিঠিতে স্বাক্ষরের অংশে তিনি লিখেন, ‘তোমার বাধ্য স্ত্রী ন্যানেত।’ স্পষ্টতই, তা ছিল অ্যানের ডাকনাম। তার স্বামী তপসেন্ত নৌবাহিনীর ননকমিশনড অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ইংল্যান্ডে বন্দি ছিলেন তিনি। স্ত্রীর লেখা আবেগ ও ভালবাসাপূর্ণ এ চিঠিটি কখনোই তার কাছে পৌঁছায়নি।

ম্যারি দুবস্ক নামক আরেকজন তার স্বামী লুই চ্যামব্রেনালকে পাঠানো চিঠিতে লিখেন, ‘আমি তোমার কাছে লিখতে লিখতে পুরো রাত কাটিয়ে দিতে পারবো। শুভরাত্রি, প্রিয় বন্ধু।’

লুই আটককৃত ফরাসী যুদ্ধজাহাজ গ্যালাতি’র লেফটেন্যান্ট ছিলেন। এই দম্পতির পরিণতিও করুণ। তাদের আর কোনোদিনও সাক্ষাৎ হয়নি। লুই ছাড়া পাওয়ার আগেই তার স্ত্রী মারা যান।

ফরাসি এ জাহাজটি ফ্রান্সের বোর্দো শহর থেকে কানাডার কুইবেক প্রদেশের উদ্দেশে যাত্রা করেছিল। পথে ব্রিটিশ বাহিনী জাহাজটি আটক করে যুক্তরাজ্যের বন্দর নগরী পোর্টসমাউথে নিয়ে যায়। সেখানে নাবিকদের বন্দি করা হয়।

ফরাসি ডাক প্রশাসন এসব চিঠি অন্যান্য জাহাজের মাধ্যমে কাঙ্খিত প্রাপকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য মাসের পর মাস ফ্রান্সের বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাতে থাকে। যখন শোনা গেল গ্যালাতিকে আটক করা হয়েছে, তখন ডাক প্রশাসন চিঠিগুলো লন্ডনের নৌ-কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রাপকদের উদ্দেশে পাঠানো শুরু করে।

কিন্তু ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ প্রাপকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার পরিবর্তে চিঠিগুলো রেখে দেয়। অধ্যাপক রেনো মোর‍্যু চিঠিগুলো খুঁজে পাওয়ার আগ পর্যন্ত সেগুলো ওই অবস্থাতেই সংরক্ষিত ছিল।

অধ্যাপক রেনো বলেন, ‘আমি আমার কৌতূহল থেকে ওই বাক্সটির বিষয়ে জানতে চাই। বাক্সের ভেতরে ফিতা দিয়ে বাঁধা চিঠির তিনটি বান্ডেল পাই। চিঠিগুলো খুব ছোট এবং সিলগালা অবস্থায় ছিল। তাই দায়িত্বরত ব্যক্তিদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম এগুলো খোলা যাবে কি না।’

তিনি বলেন, ‘আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে আমিই প্রথম ব্যক্তি যে এই ব্যক্তিগত চিঠিগুলো পড়ছি। যাদের উদ্দেশে এসব চিঠি লেখা হয়েছিল তারা এগুলো পড়ার সুযোগ পাননি। বিষয়টি খুবই আবেগপ্রবণ।’

কিছু চিঠিতে যুদ্ধের সময়কার পারিবারিক সম্পর্কের টানাপোড়েনের চিত্রও ফুটে উঠেছে। তরুণ নাবিক নিকোলাস কুইনেলের উদ্দেশে তার মা অভিযোগ করে লিখেছিলেন, মায়ের চেয়ে নিকোলাস তার বাগদত্তার কাছেই বেশি চিঠি লেখেন। তার মা আরও লিখেন, ‘ভারিনকে (নিকোলাসের এক সহকর্মী) আমার শুভেচ্ছা দিও। শুধুমাত্র ওর স্ত্রীর কাছ থেকেই আমি তোমার খবর পাই।’

বান্ডেলগুলোর মধ্যে নিকোলাসের বাগদত্তা মারিয়ানের লেখা চিঠিও পাওয়া গেছে। যাতে তিনি নিকোলাসের উদ্দেশে লিখেছেন, নিকোলাস যেন তার মাকে একটি চিঠি লিখে তাকে [মারিয়ান] অপ্রস্তুত পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করেন।

অধ্যাপক রেনো নাবিকদের নিয়ে বংশানুক্রমিক গবেষণা চালিয়েছেন। গবেষণায় তিনি দেখতে পান, নিকোলাস বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। তিনি ১৭৬০ এর দশকে আটলান্টিক মহাসাগরে চলাচলকারী আরেকটি জাহাজে নাবিক হিসেবে যোগ দেন।

অধ্যাপক রেনো বলেন, ‘চিঠিগুলো সর্বজনীন মানুষের অভিজ্ঞতা সম্পর্কিত। এগুলো এককভাবে কেবল ফ্রান্স বা ১৮ শতকের জন্য নির্দিষ্ট নয়। কীভাবে আমরা সবাই জীবনের বড় বড় চ্যালেঞ্জগুলোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিই, এই চিঠিগুলোতে সেসবই ফুটে উঠেছে।’

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন: