বাংলাদেশের আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক গুমের শিকার বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জের ব্যবসায়ী মো. হাবিবুর রহমান হাওলাদার, সাতক্ষীরার হোমিও চিকিৎসক মোখলেসুর রহমান (জনি) এবং যশোরের বেনাপোলের মেধাবী কলেজ ছাত্র মো. রেজোয়ান হোসেনের সন্ধান পেতে তাদের স্বজনরা আকুতি জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, অবিলম্বে গুম হওয়া তাদের স্বজনদের খুঁজে বের করে তাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হোক।
‘গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক সপ্তাহ’ উপলক্ষে আজ শনিবার (২৮ মে) দুপুরে খুলনায় আয়োজিত আলোচনা সভা, মানববন্ধন ও র্যালিতে অংশ নিয়ে সরকারের প্রতি তারা এ দাবি জানান। মহানগরীর খানজাহান আলী রোডস্থ জাতিসংঘ পার্কের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ ও মানবাধিকার কর্মীদের সংগঠন ‘হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার নেটওয়ার্ক’ যৌথভাবে এ কর্মসূচির আয়োজন করে। মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিক মুহাম্মদ নূরুজ্জামান দিবসের বিবৃতি পাঠ এবং সভাপতিত্ব করেন।
মানববন্ধন কর্মসূচি চলাকালীন অনুষ্ঠিত সমাবেশে গুমের শিকার বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জের ব্যবসায়ী মো. হাবিবুর রহমান হাওলাদারের ছেলে কলেজ ছাত্র মো. শাওন হাওলাদার বলেন, তার বাবাকে ২০১১ সালের ৬ জুলাই পুলিশ বাড়ি থেকে আটক করে নিয়ে যায়। তার পর থেকে দীর্ঘ ১১ বছরেও তার কোন সন্ধান মেলেনি। এখন তারা পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত। বাবা না থাকায় তাদের লেখাপড়া ও সংসারের খরচও বহন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তার মাও অসুস্থ্য হয়ে পড়েছেন। তিনি তার বাবাকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান।
হাবিবুর রহমানের স্ত্রী মাহমুদা বেগম বলেন, স্বামীর অপেক্ষায় থাকতে থাকতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এমনকি চোখেও ঠিকমত দেখতে পান না। তার স্বামী কোন অপরাধ করে থাকলে তাকে আইনের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি তার স্বামীকে ফিরিয়ে দিতে সরকারের প্রতি জোর আহবান জানান।
মানববন্ধনে কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে যশোরের বেনাপোলের মেধাবী কলেজ ছাত্র মো. রেজোয়ান হোসেনের বড় ভাই মো. রিপন হোসেন বলেন, ‘তার ছোট ভাই মো. রেজোয়ান হোসেনকে ২০১৬ সালের ৪ আগস্ট বেনাপোল থানা পুলিশ আটক করে। পরবর্তীতে ওসি অপূর্ব হাসানের নেতৃত্বে তাকে গুম করা হয়। এ ঘটনায় তারা ভয়ে মামলা করার সাহস পাননি। দীর্ঘ ৬ বছরেও তার ভাইয়ের সন্ধান না পেয়ে তার বৃদ্ধ মা-বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ভাইয়ের সন্ধান দাবি করেন তিনি।
সাতক্ষীরার হোমিও চিকিৎসক মোখলেসুর রহমান (জনি)’র পক্ষে মানববন্ধনে কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে মানবাধিকার কর্মী এ্যাডভোকেট শেখ মো. আলমগীর আশরাফ বলেন, ‘২০১৬ সালের ৪ আগস্ট সাতক্ষীরা সদর থানার এসআই হিমেলের নেতৃত্বে পুলিশ জনিকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। কিন্তু থানায় কয়েকদিন রেখে তাকে গুম করা হয়। গত ৬ বছরেও তার সন্ধান দিতে পারেনি পুলিশ। তিনি অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তি এবং তার ডা. জনিকে ফিরিয়ে দিতে সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
কর্মসূচিতে বক্তৃতা করেন নাগরিক ঐক্যের খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি ড. এ্যাডভোকেট মো. জাকির হোসেন, সদস্য সচিব সিনিয়র সাংবাদিক কাজী মোতাহার রহমান বাবু, বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার খুলনা জেলা সমন্বয়কারী এ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম, গ্লোবাল খুলনার আহবায়ক শাহ মামুনুর রহমান তুহিন, মানবাধিকার কর্মী শেখ আব্দুল হালিম, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ছায়াবৃক্ষের প্রধান নির্বাহী মাহবুব আলম বাদশা। স্বাগত জানান হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার ও সাংবাদিক কেএম জিয়াউস সাদাত।
উপস্থিত ছিলেন মানবাধিকার কর্মী এ্যাডভোকেট মো. শহীদুল ইসলাম, সাংবাদিক এম এ আজিম, নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের গৌতম দে হারু, মো. শওকত হোসেন, মো. সাকিব হাসান, মো. গালিব হাসান, মো. তামিম হাসান, মো. আরাফাত মিম, মো. রানা সরকার, মো. জাকির হোসেন, মো. ফাহাদ ইসলাম প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা আরও বলেন, গুম মানবতা বিরোধী একটি অপরাধ। রাষ্ট্র চাইলেই গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড ও মানবাধিকার লঙ্ঘণের ঘটনা বন্ধ হয়ে যাবে। বক্তারা এখনই গুম বন্ধ এবং গুম হওয়া ব্যক্তিদের তাদের স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার আহবান জানান।
আপনার মতামত লিখুন :