রক্তাক্ত জুলাই এর নেতৃত্বে ছিল তরুনরা এটা যেমন সত্য ঠিক তেমনি সত্য জুলাইয়ের অংশীজন সকল শ্রেণী, পেষা, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, গোষ্ঠীর মানুষ।
২০২৪ এর জুলাই আন্দোলন হয়ে উঠেছিল সার্বজনীন আন্দোলন, মানুষ জেনে, বুঝে নিজেকে উৎসর্গ করতেই রাজপথে নেমেছিল সকল অন্যায়, জুলুম, অবিচারের বিরুদ্ধে।
কোন রাজনৈতিক দলের সংশ্রব ছিল না এবং নেতৃত্বেও ছিল না কোন রাজনৈতিক ব্যানার। জুলাই ছিল সর্বস্তরের মানুষের আন্দোলন। হাঁ নেতৃত্বে ছিল অজানা অচেন তরুনরা। সবচেয়ে বিষ্ময়ের বিষয় হলো কারা এই তরুণ সাধারন মানুষ তো দূরের কথা ৯৯% সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মীরাও চিনতো না জানতো না। একদম লোক চক্ষুর আড়ালে থেকেই চমৎকার এবং সম্পুর্ণ নতুন নতুন নামে পোগ্রাম হাজির করতো। কেবলই ব্লোকেড শব্দটা প্রতিবেশী এক দেশে রাজনৈতিক পোগ্রামে উচ্চারি হতো।
এই তরুনদের মধ্যে থেকে সবার আগে আলোচনায় আসে নাহিদ, রামপুরা এলাকা থেকে নিখোঁজ ও প্রত্যাবর্তনের পর এবং হারুন তার ভাতের হোটেলে একসাথে ৬ তরুণ তরুনীকে হাজির করলো তখন সবাই চিনল তাদের।
১৯৭২ এর নভেম্বার ছিল সংবিধান দিবস। সেই সংবিধান ১৯৭৫ এর জানুয়ারীর পেল চতুর্থ সংশোধনী তারমানে শেখ মুজিবের শাসন আমলেই সংবিধান রচিত হলো এবং তার শাসনামলেই মাত্র দু’ বছরের মাথায় ৪ বার সংবিধান সংশোধন হলো, অর্থাৎ সমগ্র রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে তিনি কুক্ষিগত করবার জন্য ছিলেন অস্থির। কেবল কি তাই! শেখ মুজিব নিজের পদ পদবী নিয়েও ছিলেন ভয়ানক অতৃপ্ত এই তিন বছরের ভেতর তিনি প্রধানমন্ত্রী আর প্রেসিডেন্টের চেয়ার বদলের খেলা ‘মিউজিক্যাল চেয়ার’ খেলেছেন ৩ বার। তার এই খেলায় তিনি এতোই স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠেছিলেন যে নিজেকেই নিজে খুন করলেন নিজেই। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ৪র্থ সংশোধী পড়লে খুব পস্ট হয়ে ওঠে অপঘাতে তার মৃত্যু ছাড়া বাংলাদেশ কে তার হাত থেকে কেউ মুক্ত করতে পারবে না।
মুজিবের মৃত্যুুুর পর বাংলাদেশে নেমে আসে মেজর জিয়া, লে জে এরশাদের স্বৈরশাসন। ১৯৯০ এর ছাত্র আন্দোলন স্বৈরাচার মুক্ত বাংলাদেশ উপহার দিলেও বাংলাদেশের রাষ্ট্র ব্যবস্থা স্বৈরতন্ত্র মুক্ত হলো না।
নিছক বিএনপি সরাসরি আন্দোলনের ফলেফলের বুকে ছুরি গেঁথে দিবার কারনে। পষ্ট উচ্চারনে বলে বসলো আন্দোলনের পথমত রাষ্ট্র পরিচালনার পথ মত নয়। সকল সফল আন্দোলনে জনগনের আকাঙ্খ্যারই প্রতিফলন সেই আকাংখ্যাকে বিএনপি অস্বীকার করে। সেই ধারাবাহিকতায় বিএনপি বজায় রাখার জন্য মরিয়া বলেই নির্বাচন নির্বাচন বলে ব্যাস্ত হয়ে রাষ্ট্র সংস্কার করবার কথা মুখেও আনে না। বর্তমানে যেমন চাঁদাবাজি লুটপাটের অভিযোগ আসছে দলটির নামে, ক্ষমতায় গলে এরাও আওয়ামীলীগের মতই দানব হয়ে উঠবে।
কোন সন্দেহ নাই তরুনদের নেতৃত্ব বাংলাদেশকে মুক্ত করেছে এবং ৫ই আগষ্টের পর জনগন এই তরুণদের নেতৃত্বে একটি রাজনৈতিক দলও প্রত্যাশা করেছে, কারন মূল ধারার রাজনৈতিক দলগুলি (আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জামাত, জাতীয়পার্টি) জনগনের আকাংখ্যা পুরনে কেবল ব্যর্থই নয় তারা জনগনের আকাংখ্যার বিপক্ষে তাদের অবস্থান নিশ্চিত করেছে এবং আমজনতার আর মূল ধারার রাজনৈতিক দলগুলির কাছে কোন কিছুই চাওয়া পাওয়া নাই।
কোন দল বা গোষ্ঠ নিজেদের দলীয় স্বার্থে জুলাই আন্দোলন ২০২৪ কে ‘দখল’ করে কায়েমী স্বার্থে ব্যবহার করলে ‘ফলাফল বেহাত’ হতে বাধ্য। যেমন বেহাত হয়েছে ১৯৭১, ১৯৯০।
আওয়ামীলীগ মুক্তিযুদ্ধের দাবীদার বনে এবং উদ্দেশ্য প্রনোদিত হয়ে জনমানুষের মুক্তির শ্লোগন ‘জয় বাংলা’ কে দলিয় শ্লোগান করে ১৯৭১ করেছে বেহাত।
জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া প্রতিনিধীদের দারা গঠিত দল যদি মূল ধারার রাজনৈতিক দলগুলির রাজনৈতিক ধারাবাহিকতা বজায় রেখে রাজনীতিকে এগিয়ে নিতে চায় তবে আবারও বাংলাদেশ পরাজিত হবে। বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্খ্যা মুক্তিযুদ্ধের সেই সার্বজনীন লালিত আকাঙ্খ্যা “সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সাজিক ন্যায় বিচার”।
বাংলাদেশের রাজনীতি যে প্যরাডাইম / নতুন যুগে প্রবেশ করেছে সেখান থাকে ফিরে যাবার পথ রুদ্ধ।
আদীল এ হোসেন
ঢাকা।
আপনার মতামত লিখুন :