সরকার পরিবর্তন কি সমাধান?


অনলাইন ডেক্স প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ৩০, ২০২১, ৬:২৯ পূর্বাহ্ন
সরকার পরিবর্তন কি সমাধান?

পুলিশী জুলুম নিপীড়ন, ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতি, পাড়ায় মহল্লায় ক্ষমতাসীন দলের চামচাদের শক্তি প্রদর্শনের মহড়াকে উদাহরণ হিসাবে সামনে এনে বলতেই পারেন- সরকার পরিবর্তন ছাড়া এই যন্ত্রণা থেকে পরিত্রাণের উপায় নাই। কথাটা সত্যি এই অর্থে যে – খারাপ বদলে ভাল আনতে হয়।

সরকার বদলালেই কি এই ব্যবস্থা বদলে যাবে? বঙ্গবন্ধু, সাত্তার, জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া, শেখ হাসিনা, জামাত-বিএনপি সরকার, জোট সরকার, আওয়ামীলীগ-জাতিয় পার্টি সরকার, আওয়ামীলীগ-জাসদ (একাংশ) সরকার, কত সরকারই তো মানুষ পেল। দেখল।

পুরাণ ঢাকায় বিএনপি আমলে ৬ টুকরা লাশ মিলে তো আওয়ামীলীগ আমলে পাওয়া যায় ১২ টুকরা লাশ। বিএনপির আমলে যদি দুর্নীতির টোল/স্কুল খোলা হয় তবে আওয়ামীলীগ আমলে সেই টোল/স্কুল উন্নয়নের চরম শিখরে পৌঁছে হয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়। ‘২০১৮ সালে পদ্মা সেতু জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে’ ঘোষণা দেয়া হয়। সেই ঘোষণা ২০২০ সালে এসে দাঁড়ায়- ‘২০২২ সালে পদ্মা সেতু জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে’। সাথে সাথে পদ্মা সেতুর ব্যয় ১০ হাজার কোটি থেকে লাফ দিয়ে পৌঁছে যায় ৩০ হাজার কোটির ঘরে।

এক সরকারের আমলের সাথে আরেক সরকারের আমলের তুলনা করবার যদি জায়গা থাকত, তবে বলা যেত – ‘যে লাউ সেই কদু’। শান্তি পেত মানুষ। সরকার বদলে জনগণের ভাগ্য বদলাবে, আসলে তা হয় নাই বরং দিনদিন অবিচার অনাচার বেড়েছে সেটা প্রমাণিত।

এখন যদি কেউ বলে আগের সরকার ভাল ছিল সুতরাং আগের সরকারকে ফিরিয়ে আনো বা আনা হউক তাতেও যে সমস্যার সমাধান মিলবে না। সে কথা বলবার অপেক্ষা রাখে না। ‘মুক্তি যুদ্ধের বাংলাদেশ’ ‘মুক্তি যুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী দল’ কে পুনরায় ক্ষমতা দিয়েও দেখল। ভাবল সেই দলকে ক্ষমতায় দিলেই সমস্যার সমাধান হবে। সেই দল যখন দীর্ঘ দিন পর জনতার কাতেরে নেমে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সামিল হল- ঠিক সেই সময় পুর জাতি দেখল – জাতির সাথে বেঈমানি। রাতের আঁধারে স্বৈরাচারী এরশাদের সাথে হাত মিলিয়ে ১৯৮৬ সালে নির্বাচনে অংশ নিলো। রাজপথের সকল সাথীদের এমনকি নিজের দলের মাঠের নেতা কর্মীদের উপেক্ষা করে। প্রেমের টানে চির চেনা সংসার ফেলে যেমন ভব দরিয়ায় পাড়ি জমায় ঠিক তেমনি। এখনও সেই স্বৈরাচারের দল সংসদে বিরোধী দলের পাতানো খেলায় খেলে। মুল লক্ষ উদ্দেশ্য হয়ে ওঠে ‘ক্ষমতা’।

বঙ্গবন্ধু, সাত্তার, জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া, শেখ হাসিনা, জামাত-বিএনপি সরকার, জোট সরকার, আওয়ামীলীগ-জাসদ (একাংশ) সরকার, আওয়ামীলীগ-জাতিয় পার্টি সরকার, সকলেই একই শাসনতন্ত্রের অধীনেই দেশ শাসন করেছেন। দেশ শাসনের এই পদ্ধতিই (শাসনতন্ত্র / সংবিধান) ভুল পদ্ধতি নয় তো? এমন নয় তো এই সংবিধান স্বৈরাচার ও গণতন্ত্র উভয়কেই লালন করে? যদি তাই না হতো- তবে বন্দুকের নলের জোরে ক্ষমতা কেড়ে নেয়া সকল সরকারের, বিচার করত পরবর্তী গণতান্ত্রিক সরকার। কিন্তু তা হয়না বরং হয় উল্টা। হাত মেলায় স্বৈরাচারের সাথে!

সামগ্রিক অবস্থা যখন এই – তখন নিশ্চয় সমস্যা কোথায় তা খুঁজে দেখার সময় এসেছে। সমস্যা চিহ্নিত না করে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া পদ্ধতি অনুসরণ করে এর থেকে মুক্তি পাবার কোন পথ আদৌ কি খোলা আছে?

আদীল এ হোসেন
ঢাকা-২৮.০৮.২০২০

2021-01-30 06:29:31
ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন: