শিরক দুই প্রকার! – মো: ইমাম হোসাইন


অনলাইন ডেক্স প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ৩০, ২০২১, ৬:২৯ পূর্বাহ্ন
শিরক দুই প্রকার! – মো: ইমাম হোসাইন

আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা হচ্ছে সবচেয়ে বড়ো কবীরা গুনাহ। শিরক দুই প্রকারের। এক. আকীদাগত শিরক। অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করা এবং তার ইবাদত করা। গাছ, পাথর, সূর্য, ফিরিশতা, নবী, ওলী ইত্যাদি যা-ই হোক না কেন, তাকে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করা এবং তার ইবাদত করা শিরক।

আল্লাহ তায়া’লা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সাথে কাউকে শরীক করার গুনাহ মাফ করেন না। এর ছেয়ে ছোট যে কোন গুনাহ যাকে ইচ্ছে মাফ করেন। সূরা নিসা, আয়াত: ৪৮,
“নিশ্চয় শিরক একটা বিরাট জুলুম। ”
(সূরা লুকমান,আয়াত: ১৩)

“যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে আল্লাহ তার ওপর জান্নাত হারাম করে দিবেন এবং তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম।”
(সূরা মায়েদা,আয়াত: ৭২)
এ বিষয়ে কুরআন মাজীদে আরো বহু আয়াত রয়েছে।
বস্তুত : যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে বা কোন বস্তুকে শরীক করবে এবং সেই অবস্থায় মারা যাবে, সে নির্ঘাত জাহান্নামে যাবে। যেমন কেউ আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলে এবং ঈমানদার অবস্থায় মারা গেলে জান্নাতবাসী হবে, চাই সে জাহান্নামে যতই আযাব ভোগ করুক না কেন।

রাসুলুল্লাহ (সা.) একদিন তিনবার বললেন, আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় কবীরা গুনাহ সম্পর্কে অবহিত করবোনা? সবাই বললো “জ্বি হ্যাঁ, হে রসূল”! তখন তিনি বললেন আল্লাহর সাথে শরীক করা, মাতা- পিতাকে কষ্ট দেয়া। অত:পর তিনি হেলান দেয়া অবস্থা থেকে সোজা হয়ে বললেন : ” মিথ্যা বলা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া থেকে সাবধান! ” এই শেষোক্ত কথাটি তিনি এতবার পুনরাবৃত্তি করতে থাকেন যে, হাদীসের বর্ণনাকারী বলেন, আমরা মনে মনে বলছিলাম, রাসূল (সা.) যদি চুপ করতেন তবে ভালো হতো। ‘বুখারী,মুসলিম’

দুই. দ্বিতীয় প্রকারের শিরক হচ্ছে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে সৎ কাজ করা। আল্লাহ তায়া’লা ইরশাদ করেন, ” সুতরাং যে তার প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাত কামনা করে; সে যেন নেক আমল করে এবং তার প্রতিপালকের ইবাদতে অন্য কাউকে শরীক না করে। (সূরা কাহাফ, আয়াত : ১১০)

অর্থাৎ কেউ যেন তার কথা ও কর্মের দ্বারা অন্য কিছুকে আল্লাহর সমকক্ষ স্থির না করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা ছোট ছোট শিরক হতে সাবধান থেক। সাহাবীগন জিজ্ঞেস করলেন ; ছোট শিরক কি? তিনি বললেন, রিয়া অর্থাৎ লোক দেখিয়ে সৎ কাজ করা। যেদিন আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে কর্মফল দিবেন সেদিন তাদেরকে বলবেন যাদেরকে দেখিয়ে দেখিয়ে দুনিয়ায় তোমরা নেক আমল করতে, তাদের কাছে চলে যাও। দেখ, তারা তোমাদেরকে কোন প্রতিদান দেয় কি-না।
(আহমাদ, বায়হাকী, তাবরানী)

অপর এক হাদীসে রাসূল (সা.) বলেন, আল্লাহ তায়া’লা বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন কাজ করে এবং তাতে আমি ব্যতীত অন্য কাউকে শরীক করে, তার কাজ যাকে শরীক করেছে তার। সে কাজের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। (মুসলিম, ইবনে মাজাহ)
তিনি আরও বলেন, যে ব্যক্তি অন্যকে শোনানোর জন্যে আমল করে, আল্লাহ তা’আলা উদ্দিষ্ট ব্যক্তিকে তা জানিয়ে দেন এবং যে ব্যক্তি অন্যকে দেখানোর জন্যে আমল করে, আল্লাহ তা’আলা উদ্দিষ্ট ব্যক্তিকে তা দেখিয়ে দেন। আল্লাহর নিকট তার সওয়াব পাবে না। (বুখারী,মুসলিম)

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) তিনি বলেন, নবী করীম (সা.) বলেছেন, অনেক রোযাদার এমন আছে যারা তাদের রোযা দ্বারা অনাহারের কষ্ট ও তৃষ্ণা ব্যতীত কিছুই লাভ করে না; আর অনেক রাত জাগরণকারী আছে, যারা অনিদ্রা ব্যতীত কিছুই হাসিল করতে পারে না। অর্থাৎ তাদের নামায ও রোযা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য না হলে তাতে কোন সওয়াব নেই। (ইবনে মাজাহ ও আহমাদ)

আল্লাহ তা’আলা বলেন, আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি ব্যতিরেকে অন্য কোন উদ্দেশ্যে তারা যে সব আমল করেছে, আমি তার সওয়াব বাতিল করে দিয়েছি এবং সেগুলোকে আমি উড়ন্ত ধুলোবালিতে রুপান্তরিত করেছি। (সূরা ফুরকান, আয়াত: ২৩)
কথিত আছে, জনৈক মুসলিম মনীষীকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা (ইখলাস) কাকে বলে? তিনি জবাব দিলেন, মানুষ নিজের পাপ কাজকে যেমন লুকায়, তেমনি তার ভালো কাজকেও লুকাবে। এটাই নিষ্ঠা বা ইখলাস। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, ইখলাস বা আন্তরিকতার উদ্দেশ্য কি? তিনি বললেন, লোকে তোমার প্রশংসা করুক – এটা কামনা না করা।

ফযীল বিন ইয়ায বলেন, লোকের ভয়ে খারাপ কাজ ত্যাগ করা রিয়াকারী, আর মানুষকে খুশি করার জন্য ভালো কাজ করা শিরক। আর ইখলাস হচ্ছে এই উভয় রোগ থেকে মুক্ত থাকার নাম।

মো: ইমাম হোসাইন
পেশ ইমাম
ডেসটিনি জায়া সুরাউ, ব্রুনাই

2021-01-30 06:29:31

ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন: