বিতর্কিত সীমান্ত এলাকায় চীন আর ভারতের মধ্যে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে, সেটি নিরসনের জন্য আলোচনার মাধ্যমে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দুই দেশ। অন্যদিকে, সীমান্ত এলাকায় দুই দেশই হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করেছে।
এ পর্যন্ত ডজনের বেশি বৈঠক হলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন ভারত একতরফাভাবে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করায় এই সমস্যা শুরু হয়েছে এবং এর কারণেই ৪৫ বছর পর চীন আর ভারতের মধ্যে ভয়াবহ সঙ্ঘর্ষ হয়েছে।
ভারতের পদক্ষেপকে চীন একতরফা হিসেবে দেখেছে, যেটাতে তাদের আঞ্চলিক অখণ্ডতা লঙ্ঘিত হয়েছে এবং জাতিসংঘে তারা এর নিন্দা জানিয়েছে।
কাশ্মীর কোথায় এবং কে এর নিয়ন্ত্রণ করে?
হিমালয় অঞ্চলের কাশ্মীর ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে ভাগ হয়ে আছে। এর পূর্বপ্রান্তে প্রচণ্ড শীতল উচ্চ অক্ষাংশ এলাকায় লাদাখের অবস্থান, যার একদিকে রয়েছে চীন আর অন্যদিকে পাকিস্তান। বিশ্বের একমাত্র জায়গা এটা, যেটার তিন পাশে তিনটি পারমানবিক শক্তিধর দেশ রয়েছে।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশরা ভারত ছেড়ে যাওয়ার সময় থেকেই কাশ্মীরের ব্যাপারে পাকিস্তান আর ভারতের পাল্টাপাল্টি দাবি চলে আসছে। দুই দেশের মধ্যে এই অঞ্চল নিয়ে দুইবার যুদ্ধ হয়েছে। দুই দেশই কাশ্মীরের অংশ বিশেষের নিয়ন্ত্রণ করে।
ভারতীয় অংশের অনেক কাশ্মীরী মুসলিম সশস্ত্র আন্দোলনের সমর্থক এবং তারা চান যাতে কাশ্মীরের পাকিস্তানের অংশ হয় অথবা পুরোপুরি স্বাধীন হয়।
২০১৯ সালের আগস্টে নয়াদিল্লী ভারত শাসিত কাশ্মীরের রাজ্যের মর্যাদা কেড়ে নেয়, সেটাকে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে পরিণত করে এবং ভিন্নমতের উপর দমন চালায়।
কাশ্মীরকে কোন দৃষ্টিতে দেখে চীন?
১৯৬২ সালে বিতর্কিত সীমান্ত ইস্যু নিয়ে যুদ্ধ করেছে চীন আর ভারত। তখন থেকেই দুই দেশের সেনারা ৩,৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ অমীমাংসিত সীমান্ত এলাকায় পাহারা দিয়ে আসছে। মাঝে মাঝে তাদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে।
একে অন্যের বিরুদ্ধে অস্ত্র ব্যবহার না করার ব্যাপারে তারা সম্মত হয়েছে। কিন্তু ১৫ জুন দুই পক্ষের সেনারা লাঠি, পাথর ব্যবহার করে এবং এতে ২০ ভারতীয় সেনা নিহত হয়। ৪৫ বছরের মধ্যে দুই পক্ষের মধ্যে এটা ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ।
বিশেষজ্ঞ এবং কিছু চীনা ভাষ্যকার বলেছেন যে, নয়াদিল্লী একতরফাভাবে কাশ্মীরের মর্যাদা বাতিল করায় এই সীমান্ত উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
বেইজিং ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক চায়না ইন্সটিটিউট অব কনটেমপোরারি ইন্টারন্যাশনাল রিলেশান্সের দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ ওয়াং শিদা সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে বলেছেন, ভারতের সিদ্ধান্ত ‘চীনকে কাশ্মীর বিবাদে জড়াতে বাধ্য করেছে’।
যুক্তরাষ্ট্র ফ্যাক্টর
ভারত আর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কৌশলগত মিত্রতা বৃদ্ধির বিষয়টিকে বেইজিংকে উদ্বিগ্ন করেছে। এই মিত্রতার সম্পর্ককে বেইজিং তাদের উত্থান ঠেকানোর প্রচেষ্টা হিসেবে দেখে থাকে।
ভারত-চীন সঙ্ঘাত এখন উপচে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনার মধ্যে প্রবেশ করেছে। বিভিন্ন ইস্যুতে দুই দেশ পরস্পরের মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। এর মধ্যে বাণিজ্য বিবাদ, হংকংয়ে মানবাধিকার ইস্যু এবং করোনাভাইরাসের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ার বিষয়গুলো রয়েছে।
নয়াদিল্লী একতরফাভাবে কাশ্মীরের সাংবিধানিক মর্যাদা বাতিল করায় সেটা প্রাথমিকভাবে চীনকে উসকানি দিয়েছিল বলে মনে করেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ও চীন বিশেষজ্ঞ প্রবীন সাওনে। লাদাখে চীনের সামরিক তৎপরতার আরেকটি অর্থ হলো যুক্তরাষ্ট্র আর ভারতের একজোট হওয়ার বিরুদ্ধে একটা অবস্থান নিয়েছে চীন।
ক্ষমতার লড়াইকে কিভাবে দেখে কাশ্মীরীরা
জুনের মাঝামাঝি সময় থেকে চীন আর ভারতের মধ্যে যে সংঘর্ষ হয়েছে, সে ঘটনাপ্রবাহের উপর উদ্বেগের সাথে নজর রেখেছে লাদাখ শহরের বাসিন্দা এবং পর্যটকরা। ভারত সেখানে জঙ্গি বিমান নিয়ে এসেছে, কামান ও নির্মান সামগ্রি নিয়ে এসেছে, সেগুলিও অস্বস্তি নিয়ে দেখছে তারা। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই অঞ্চলে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করা হয়েছে।
কাঠ ব্যবসায়ী শেরিং অংচুক বলেন, এ রকম কিছু আমরা কখনই দেখিনি। ভারত আর পাকিস্তানী সেনারা ১৯৯৯ সালে যখন কারগিলে লড়াইয়ে নেমেছিল, তখনও এমনটা দেখিনি আমরা।
মুসলিম সংখ্যাগুরু কাশ্মীর উপত্যকায় অনুভূতিটা আলাদা। ভারত-চীন উত্তেজনা সেখানে ভারতবিরোধী মনোভাব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
2021-05-04 20:11:16
আপনার মতামত লিখুন :