ভারত কি ভালো প্রতিবেশী?


অনলাইন ডেক্স প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ৩০, ২০২১, ৬:২৯ পূর্বাহ্ন
ভারত কি ভালো প্রতিবেশী?

ভারত ও চীনের মধ্যকার গালওয়ান ভ্যালির মর্মান্তিক ঘটনার ব্যাপারে কেবল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ই নীরব হয়ে থাকছে না, ভারতের লাগোয়া প্রতিবেশীরা পর্যন্ত কিছু বলছে না।

ধারণা করা যেতে পারে যে এসব দেশে চীনের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক প্রভাবের কারণে চীনের সমালোচনা থেকে বিরত থাকার জন্য অনানুষ্ঠানিকভাবে নীরবতা পালন করছে।

অবশ্য সব প্রতিবেশীর সাথে ভারতের অতীত সম্পর্ক পরীক্ষা করে দেখতে পারি যে এসব দেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক তখনো আন্তরিকতাপূর্ণ ছিল না। উদাহরণ হিসেবে নেপালের কথা বলা যেতে পারে।

মদেশি বিক্ষোভের অংশ হিসেবে ২০১৫ সালে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা যখন অঘোষিত অবরোধ আরোপ করে তখন নেপাল মানবিক ও অর্থনৈতিক সঙ্কটে ছিল। ২০১৫ সালের ২৫ এপ্রিল নেপালে ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে। অবরোধ আরোপের সময়ও ত্রাণ কার্যক্রম চলছিল।

মোদি সরকার ২০১৬ সালে হঠাৎ করে নোট বাতিল করলে নেপাল আরেকটি বড় ধরনের আঘাতের শিকার হয়। এতে নেপালের ত্রাণ কার্যক্রম, চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য পরিচর্যা, কৃষক, ব্যবসায়ী, দিনমজুর ও ছোট ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়ে। উভয় ক্ষেত্রেই সমস্যা সমাধানে ভারত সরকার এগিয়ে আসেনি।

বাংলা ভাইয়ের প্রাচীরে ফাটল

ভারতে নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) ও নাগরিকত্ব (সংশোধনী) অ্যাক্ট বাস্তবায়ন নিয়ে বাংলাদেশ সরকার তার নাগরিকদের ক্ষোভের মুখে পড়ে। মুসলিম প্রাধান্যপূর্ণ বাংলাদেশে এনআরসি ও সিএএ উভয়টিই বিতর্কিত হিসেবে বিবেচিত।

এটি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্কে আরেকটি ফাটল উন্মোচন করে। ২০১৭ সাল থেকে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের জন্য ত্রাণ সহায়তা করে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশী নাগরিকেরা ভয় পাচ্ছে যে এনআরসি ও সিএএর মাধ্যমে ভারত অঘোষিতভাবে তার নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে দেবে। এর ফলে আন্তর্জাতিক উদ্বাস্তু সঙ্কটে হিমশিম খেতে থাকা বাংলাদেশ আরো বড় বোঝার মুখে পড়বে।

র: সুপার সিক্রেট ফোর্স

অতীতের সম্পর্ক এবং সাগরে মাছ ধরা এলাকার মালিকানা নিয়ে (উভয় দেশের নৌবাহিনী ও জেলেদের মধ্যে সীমানা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে) ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে জটিলতা বিরাজ করছে। অভিযোগ রয়েছে, শ্রীলঙ্কার ২০১৫ সালের নির্বাচনে ভারতের বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইঙ (র) এর ভূমিকা ছিল। ২০১৯ সালে শ্রীলঙ্কার ইস্টার বোমা হামলার একজন হামলাকারী ভারতের কাশ্মীর ও কেরালায় সমর্থন ও প্রশিক্ষণ পেয়েছিল। ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ) হামলার ব্যাপারে শ্রীলঙ্কা সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছিল। কিন্তু হামলার আগে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কাউকে গ্রেফতার না করায় প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।

দ্রুক ওয়ুল সড়ক

ভুটানের ওপর ভারতের প্রভাব সবসময়ই ছিল। দেশটির জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতি নির্ধারণে ভারতের ভূমিকা রয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য ভুটান ব্যাপকভাবে ভারতের ওপর নির্ভরশীল। তবে সময়ের পরিক্রমায় ভুটান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে বিকশিত হয়েছে, ভারতের প্রভাববলয়ের বাইরে থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ে নিজের স্থান প্রতিষ্ঠা করেছে। ভারত ও ভুটানের মধ্যকার বিরোধ অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ইস্যুতে সীমিত। তবে মনে রাখতে হবে যে রয়্যাল ভুটান আর্মি ২০০৩ সালে তাদের প্রথম সামরিক অভিযানটি চালিয়েছিল। আর তা হলেয়ছিল উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে যাওয়া জঙ্গিদের বিরুদ্ধে। এসব জঙ্গি ছিল ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম (উলফা) ও ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট অব বড়োল্যান্ড (এনডিএফবি) এর সদস্য। তারা ভুটানের জঙ্গলে তাদের ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করেছিল।

ভারত কোথায় রেখা টেনেছে?

নিকট প্রতিবেশীদের সাথে ভারতের জটিল ও কঠিন সম্পর্ক রয়েছে। অন্যান্য দেশ অসুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। আর তা চীনের সাথে সম্পর্ক অনেক বেশি ভালো বলে মনে হচ্ছে। এর একটি বড় কারণ সম্ভবত চীনের সাথে তাদের সীমান্ত নেই বা থাকলেও ন্যূনতম পর্যায়ে রয়েছে। এর ফলে তারা অভিন্ন সীমান্ত থেকে উদ্ভূত নানা ধরনের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক জটিলতা এড়াতে পারছে। ভারতের মনে রাখা খুবই বুদ্ধিমানের কাজ হবে যে তার গ্রহণ করা প্রতিটি সিদ্ধান্তই- তা অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক বা সামরিক যাই হোক না কেন- তার প্রতিবেশীরা তা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখছে।

2021-01-30 06:29:31

ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন: