বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিহু—অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীক। এ উৎসব পাহাড়ের সব শ্রেণির মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন তৈরি করে।
চৈত্রের কাঠফাটা রোদ আর গরম অনুভূত হবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আবহাওয়া যতই প্রতিকূলে থাকুক না কেন, চৈত্র মাস এলেই পাহাড়ের মানুষের মনে ও শরীরে অন্য রকম আবেশ ছড়িয়ে পড়ে। এখন পাহাড়ের চারদিকে নাম জানা-অজানা অনেক বুনোফুলের সুবাস ছড়িয়ে আছে। এ সুবাস আর পাড়ায় পাড়ায় বিভিন্ন মেলা, খেলাধুলা আর গান-বাজনায় পাহাড়ে উৎসবের বারতা বাজছে।
পাহাড়ের সবচেয়ে বড় এ সামাজিক উৎসবটি পার্বত্য চট্টগ্রামের সব জাতিসত্তার মধ্যে পারস্পরিক ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন রচনা করে। সমাজের তথাকথিত শ্রেণিভেদ ভুলে সব সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি ও আস্থার সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়। পাহাড়ের এ উৎসবে নেই কোনো ধর্মীয় গোঁড়ামি। মোটকথা হলো পুরোনো বছরের সব গ্লানি, হিংসা-বিদ্বেষ, দুঃখ-কষ্টকে ঝেড়ে ফেলে নতুন বছরে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা।
বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিহু—অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীক। এ উৎসব পাহাড়ের সব শ্রেণির মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন তৈরি করে। পার্বত্য জেলার সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটগুলোর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সম্প্রীতির শোভাযাত্রায় পাহাড়ি-বাঙালি সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এটাই মনে করিয়ে দেয় যে এ উৎসব সর্বজনীন, এ উৎসব সম্প্রীতির, এ উৎসব সবার।
পয়লা বৈশাখ যেমন আবহমান বাংলায় অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে তুলে আনে, তেমনি পাহাড়ের বিজু উৎসবও সুতোয় দাঁড়িয়ে থাকা পরস্পরের প্রতি আস্থাহীনতাকে আবার নতুনভাবে আস্থায় ফিরিয়ে আনে। এবারের বিজু, বৈসু, সাংগ্রাই, পয়লা বৈশাখ আর ঈদ একই সময়ে হওয়ায় দেশজুড়েই যেন উৎসবের ধুম পড়ে গেছে। পাহাড়-সমতল সবখানে সবার চোখেমুখে আনন্দের ঝিলিক খেলে যাচ্ছে।
শাশ্বত বাংলা এবার যেন সত্যিকার অর্থে এক অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উৎসবে মেতে উঠেছে। বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিহু, বাংলা নববর্ষ, ঈদ সবার জন্য আনন্দ আর শান্তি বয়ে আনুক, সেটাই আমাদের সবার চাওয়া।
আপনার মতামত লিখুন :