নতুন করে সরকারবিরোধী জোরালো আন্দোলন গড়তে চাইছে বিএনপি। এরই অংশ হিসাবে রাজনৈতিক কর্মকৌশল নির্ধারণে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছেন দলটির নেতারা। নির্দলীয় সরকারের অধীনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দাবি আদায়ের আন্দোলন ব্যর্থ হলেও ‘হাল ছাড়েনি’ রাজপথের প্রধান এ বিরোধী দল।
নির্বাচন বর্জনের পর দাবি আদায়ের আন্দোলনে আবারও জনগণকে সম্পৃক্ত করার পাশাপাশি নেতাকর্মীকে চাঙার উদ্যোগ নিয়েছে। তবে ঘুরেফিরে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সরকারবিরোধী আন্দোলনে কেন্দ্রীয় নেতাদের ভূমিকা নিয়েই নানা প্রশ্ন তুলছেন।
৫০২ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির অধিকাংশ নেতাকে মাঠে না পাওয়ার অভিযোগ তাদের। কেন্দ্রীয় কমিটিতে শতাধিক নেতা আছেন, যারা অনেকে পদ নিয়ে নিষ্ক্রিয়, অনেকে বিদেশেও পাড়ি দিয়েছেন। আবার নিজ পদের কাজ কী, তা জানেন না বেশির ভাগ নেতাই।
সাংগঠনিকসহ নানা কর্মকাণ্ডে গুটিকয়েক নেতাকে বারবার দায়িত্ব দেওয়ায় অন্যদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান, জাতীয় স্থায়ী কমিটি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলসহ নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তা ও সদস্যদের মধ্যে অন্তত ২৮ জন এখন বিদেশে আছেন। তবে এর মধ্যে অনেকেই দেশে মামলা, হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে বিদেশে যেতে বাধ্য হয়েছেন। আবার কয়েকজন গেছেন উন্নত চিকিৎসা নিতে।
এছাড়া পদ নিয়ে নিষ্ক্রিয় আছেন ৮০ জনের বেশি নেতা। তাদের মধ্যে অনেকে অসুস্থতার কারণে দলের কোনো কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারেন না। এছাড়া স্থায়ী কমিটিতে ৫টিসহ শূন্য পদ আছে ১৩০টির মতো। তাদের মধ্যে বেশির ভাগ মারা গেছেন, কয়েকজন পদত্যাগ করেছেন, আবার বেশ কয়েকজনকে দল থেকে বহিষ্কার ও অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই নেতাকে ফোন করা হলে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, বেশ কয়েকজন পদ নিয়েছেন; কিন্তু তাদের দলের কোনো কর্মকাণ্ডে দেখা যায়নি, এটি সত্য। তবে অনেক নেতার বিএনপিতে পদ নেই, তবুও তারা সব কর্মসূচিতে অংশ নেন এবং নানা ভূমিকা পালন করছেন।
কয়েকটি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নিষ্ক্রিয়দের বাদ দিয়ে পরীক্ষিত ও যোগ্যদের স্থান দেওয়ার বিষয়ে আলোচনাও হয়েছে। শূন্য পদ পূরণেরও নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। এ প্রক্রিয়া শুরুও হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ইতোমধ্যে শূন্য পদে বেশ কয়েকজনকে স্থান দিয়েছেন।
একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, অনেক পদ আছে তার কাজ কী, তা জানেন না তারা। আন্তর্জাতিক সম্পাদক ও সহ-সম্পাদকের কাজ হচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক দেখভাল করার।
কিন্তু দেখা গেছে, সাংগঠনিক সম্পাদকও আন্তর্জাতিক বিষয়ে দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত। আর যারা এই পদে (আন্তর্জাতিক সম্পাদক ও সহ-সম্পাদক) আছেন, তাদের কয়েকজন কোনো দায়িত্বেই নেই।
কেন্দ্রীয় কমিটির আকার বড় হলেও পদে থাকা অনেকের কোনো কর্মকাণ্ড থাকে না বা দেওয়া হয় না, যা নিয়ে ক্ষোভ আছে অনেকের। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। পরে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের চেয়ারম্যান, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও মহাসচিব জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসাবে নির্বাচিত বলে গণ্য হবেন।
সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান এখন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্থায়ী কমিটির সদস্য। তিনি চিকিৎসার জন্য দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে আছেন। সেখান থেকে দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এছাড়াও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে এখন বিদেশে রয়েছেন আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও সালাহ উদ্দিন আহমেদ।
এছাড়া শারীরিকভাবে অসুস্থ ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটির সদস্যের মধ্যে পাঁচটি পদ এখনো ফাঁকা।
আপনার মতামত লিখুন :