ভারত শুকনো মওসুমে বাংলাদেশের সাথে অভিন্ন নদীগুলোর পানি উজান থেকে সরিয়ে নেয়ার কারণে বাংলাদেশের বড় নদীগুলো প্রায় মরে গেছে এবং সে কারণে বর্ষায় বন্যার পানির বোঝা তারা নিতে পারছে না। পানি ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ এবং ভূতাত্ত্বিকরা রোববার এক ওয়েবিনারে এ মন্তব্য করেছেন। তারা বলেছেন, বর্ষা মওসুমে অতিরিক্ত পানির প্লাবণ থেকে বাঁচতে ভারত যখন একসাথে তাদের সবগুলো স্লুইজ গেট খুলে দেয়, তখন বাংলাদেশের শুকনোপ্রায় নদীগুলো সেই পানির চাপ নিতে পারে না।
বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা এস নজরুল ইসলাম বলেন, নদীতে স্থায়ীভাবে পানি না থাকলে নদীর নির্দিষ্ট কোন গতিপথ থাকে না এবং হঠাৎ পানির চাপ বাড়লে যে কোন দিকে আশেপাশে সেটা প্রবাহিত হওয়ার চেষ্টা করে। তিনি বলেন, যত বেশি নদী এভাবে আশেপাশে সরে যাবে, ভাঙন তত বেশি হবে।
নজরুলের লেখা বইয়ের প্রকাশনা উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন আয়োজিত ওয়েবিনারে এ মন্তব্য করেন তিনি। তার বইটি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়েছে।
নজরুল যে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, সেখানে তিনি দেখিয়েছেন যে, ভারত যে গজলডোবা ব্যারেজ নির্মাণ করেছে, তিস্তার উজানে সেটা ১৬তম ব্যারেজ। এটার মাধ্যমে শুকনো মওসুমে ভারত পানি সরিয়ে নেয়। তিনি বলেন বছর জুড়েই তিস্তাতে পানির প্রবাহ থাকে সর্বনিম্ন পর্যায়ে এবং বর্ষায় এসে ভারত হঠাৎ করে অতিরিক্ত পানি সব ছেড়ে দেয়।
চলমান বন্যার মধ্যে তিস্তা নদীতে এবার ব্যাপক ভাঙন হচ্ছে। বন্যার সময়সীমা রোববার ৫১তম দিন পার করেছে। ১৯৯৮ সালের পর এটাই দেশের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী বন্যা। তিনি বলেন, একইভাবে গঙ্গার উজানে ভারত একাধিক বাধ নির্মাণ করায় পানি বন্টনের জন্য যে ফারাক্কা চুক্তি হয়েছিল, সেটা অকার্যকর হয়ে পড়েছে। তিনি দেখিয়েছেন যে, ১৯৯৬ সালের চুক্তির পর পানি বন্টনের প্রশ্নে খুব সামান্যই পরিবর্তন হয়েছে।
নজরুল বলেন, আন্তর্জাতিক নদীর পানি বন্টনের ব্যাপারে বাংলাদেশকে অবশ্যই আরও সক্রিয় হতে হবে। তিনি বলেন, ভারতে ৫,১০০ বড় বাধ রয়েছে, এবং সংখ্যার দিক থেকে ভারত বিশ্বে তৃতীয়। এগুলোর অনেকগুলোই উজানে নির্মিত হয়েছে এবং এগুলোর কারণে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের লক হ্যাভেন ইউনিভার্সিটিতে ভূতত্ত্ব পড়ান অধ্যাপাক মো খালেকুজ্জামান। তিনি বলেন, ভারত-বাংলাদেশের কূটনীতির মূল বিষয় হওয়া উচিত পানি কূটনীতি। তিনি বলেন, ভারতকে আমাদের এটা বোঝাতে হবে যে, আমাদের আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং ভারত ইচ্ছোমতো যা খুশি করতে পারবে না।
2021-01-30 06:29:31
আপনার মতামত লিখুন :