পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা চাপা দেয়ায় কাশ্মীরে বিক্ষোভের সূত্রপাত


অনলাইন ডেক্স প্রকাশের সময় : মে ৪, ২০২১, ৪:৫৮ অপরাহ্ন
পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা চাপা দেয়ায় কাশ্মীরে বিক্ষোভের সূত্রপাত

ভারত শাসিত কাশ্মীরে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, আটকাবস্থায় এক তরুণকে হত্যার পর পুলিশ সেটাকে দুর্ঘটনা হিসেবে সাজানোর চেষ্টা করেছিল।

ইরফান আহমেদ দার নামের ওই দোকানদারকে হত্যার অভিযোগটি ছড়িয়ে পড়ার পর বুধবার কাশ্মীরে বিক্ষোভ শুরু হয়। জবাবে নিহতের শহর সোপোরে ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে সরকার।

২৩ বছর বয়সী দারের পরিবার অভিযোগ করেছে যে, মঙ্গলবার তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং এরপর পুলিশ কাস্টডিতে তার উপর নির্যাতন করা হয়। তাকে কাস্টডিতে নেয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই দারের মৃত্যু হয়।

পুলিশ বলেছে, পুলিশের কাস্টডি থেকে পালানোর চেষ্টা করতে গিয়ে মারা গেছে দার। পুলিশ অভিযোগ করেছে, অন্ধকার আর আশেপাশে খাল থাকার সুযোগ নিয়ে সে পালিয়েছিল। পাথুরে একটা খাদের কাছে তার মৃতদেহ পাওয়া গেছে। তবে তার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কিছু জানায়নি পুলিশ।

পুলিশ দাবি করেছে যে, দার জঙ্গিদের সাথে কাজ করতো এবং তার কাছে চীনের তৈরি দুটো গ্রেনেড পাওয়া গেছে। তবে, তার পরিবারের সদস্যটা অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে এবং রাজনীতিবিদরাও এটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

দারের ভাই জাভিদ আকবরকেও সোমবার আটক করা হয়েছিল এবং মাঝরাতে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। সে বলেছে যে, পুলিশ তাকে আশ্বস্ত করেছিল যে, সকালে দারকে ছেড়ে দেয়া হবে।

আকবর বলেন, তার লাশটা অন্তত আমাদের যেন দেয়া হয়, যাতে আমরা যথাযথভাবে তাকে কবর দিতে পারি। কিন্তু কাশ্মীরের নতুন নীতি অনুযায়ী কথিত জঙ্গিদেরকে বহু দূর দূরান্তে বনের মধ্যে কবর দেয়া হচ্ছে যাতে তার শেষকৃত্যে মানুষ ভিড় করতে না পারে। দারকে তার বাড়ি থেকে ১০০ মাইল দূরে কবর দেয়া হয়েছে।

কাশ্মীরী রাজনীতিক সাজাদ লোন এর আর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টির মিত্র ছিলেন। তিনি বলেছেন, পুলিশের বক্তব্য কোনভাবেই মিলছে না। লোন বলেন, তারা এই গল্প তৈরি করতেও ব্যর্থ হয়েছে। দোষিদের শাস্তি দেয়া উচিত।

কাশ্মীরে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার সাজানো মৃত্যুর ঘটনা ঘটলো। এর আগে জুলাই মাসে তিনজনকে হত্যা করে সেটা গোপন করেছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। তারা এমনভাবে ঘটনা সাজিয়েছিল যেন তিনজন জঙ্গিকে হত্যা করা হয়েছে।

দুটো ঘটনায় এই অঞ্চলে আতঙ্কের জন্ম দিয়েছে যে পুলিশ আর সামরিক বাহিনী হয়তো বন্দুকযুদ্ধ আর বিচার বহির্ভূত হত্যার মধ্যে আবার ফিরে গেছে। গত কয়েক দশক ধরে কাশ্মীরে এই ধরণের ঘটনা ঘটে আসছে। ২০১০ সালে ভুয়া বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় কয়েক মাস ধরে বিক্ষোভ চলেছিল।

কাশ্মীরের এক রাজনীতিক হাসনাইন মাসুদি দারের কথিত আটকাবস্থায় হত্যার বিষয়টি বুধবার পার্লামেন্টে তুলেছিলেন। তিনি বলেন, এই দমন আর অপকর্ম কোন ফল বয়ে আনবে না এবং ব্যবধান আরও বাড়াবে।

মাসুদি বলেন, ২০১৯ সালের ৫ আগস্টের অসাংবিধানিক সিদ্ধান্তের পর, দমনের গল্প সাজানো হচ্ছে, হাজার হাজার মানুষকে আটক করা হয়েছে এবং এখন সেটাকে নতুন মাত্রায় নিয়ে ভুয়া এনকাউন্টার আর কাস্টডিতে হত্যা করা হচ্ছে।

2021-05-04 16:58:27

ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন: