আল্লাহ তাআ’লা বলেন, “কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুমিনকে হত্যা করলে শাস্তি জাহান্নাম। সেখানে সে স্থায়ী হবে এবং আল্লাহ তার প্রতি রুস্ট হবেন, তাকে লা’ নত করবেন, সর্বোপরি তার জন্য মহাশাস্তি প্রস্তুত রাখবেন।” (সূরা নিসা, আয়াত: ৯৩)
“এবং তারা আল্লাহর সাথে কোন ইলাহকে ডাকে না। আল্লাহ যার হত্যা নিষেধ করেছেন যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। আর যারা এগুলো করবে, তারা শাস্তি ভোগ করবে। কিয়ামতের দিন তার শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে এবং সেখানে সে স্থায়ী হবে হীন অবস্থায়। তবে তারা নয় যারা তওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে।” (সূরা ফুরকান, আয়াত : ৬৮)
আল্লাহ তাআ’লা আরো বলেন, “এ কারনেই আমি বনী ইসরাঈলের প্রতি এক বিধান দিলাম যে, নরহত্যা অথবা দুনিয়ায় ধ্বংসাত্মক কার্য করাহেতু ব্যতীত কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সকল মানুষকেই হত্যা করল। আর কেউ কারো প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন দুনিয়ার সকল মানুষের প্রাণ রক্ষা করল।”
(সূরা মায়িদা, আয়াত: ৩২)
আল্লাহ তাআ’লা আরো বলেন, “যখন জীবন্ত সমাধিস্থ কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে কী অপরাধে তাকে করা হয়েছিল?”
(সূরা তাকভীর, আয়াত: ৮-৯)
হাদিসে হত্যা ও ইচ্ছাকেও সমান অপরাধ হিসেবে গন্য করা হয়েছে।
নবী করীম (সা.) বলেন, যদি দুইজন মুসলমান তলোয়ার দ্বারা একে অন্যের মুকাবিলা করে, তখন হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি উভয়ই জাহান্নামে যাবে। সাহাবায়ে কিরাম (রা.) বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! এই হত্যাকারীর কথা তো বুঝলাম সে জাহান্নামে যাবে কিন্তু নিহত ব্যক্তির কি হলো ? সে জাহান্নামে যাবে কেন ? তিনি বললেন কেননা সে তার প্রতিদ্বন্দ্বীকে হত্যা করতে পরিপূর্ণ সংকল্পবদ্ধ ছিল।
(বুখারী ও মুসলিম)
ইমামগণ ও মুহাদ্দিসগণ এ হাদীসের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেছেন যে, কোন অবৈধ স্বার্থ হাসিলের জন্য অথবা শত্রুতা বা বিদ্বেষবশত: পরস্পরে সংঘর্ষ হলেই এ হাদীসের হুকুম প্রযোজ্য। নচেত আত্মরক্ষা ও বৈধ ধন-সম্পদের হিফাযতের উদ্দেশ্যে অস্ত্র ধারণ করলে এ হাদীসের বিধান প্রযোজ্য হবে না। কেননা, আত্মরক্ষাকারীর উদ্দেশ্য প্রতিপক্ষকে খুন করা হয় না বরং আক্রমণ প্রতিহত করাই তার উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। আক্রমণকারীকে হত্যা না করে যদি আত্মরক্ষা করা সম্ভব হয় তবে সেটা করাই শ্রেয়।
রাসুলুল্লাহ (সা) বলেন, তোমরা আমার পরে একে অপরের গর্দান উড়িয়ে দিয়ে কাফির হয়ে যেয়ো না। (বুখারী, মুসলিম)
রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো বলেন বান্দা তার দ্বীনের গন্ডিতে থাকবে যতক্ষণ না সে নিষিদ্ধ রক্তপাতে জড়িত হয়। তিনি আরো বলেন, কিয়ামতের দিন মানুষের মাঝে সর্বপ্রথম রক্তের মিমাংসা করা হবে। অন্য এক হাদীসে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, একজন ঈমানদার ব্যক্তিকে হত্যা করা আল্লাহর কাছে সারা পৃথিবী ধ্বংস করার চাইতেও মারাত্মক অপরাধ।
(নাসায়ী, বায়হাকী ও তিরমিযি)
নবী করীম (সা.) বলেন, কবীরা গুনাহের বিবরণ হচ্ছে এই যে, ১. আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা। ২. মানুষকে হত্যা করা। ৩. কঠিন শপথ করে তা ভঙ্গ করা।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা হলে সে অপরাধের একটি অংশ আদম (আ.) এর প্রথম পুত্রের আমলনামায় লেখা হয়। কেননা সে ই সর্বপ্রথম রেওয়াজ প্রচলন করেছে। (বুখারী, মুসলিম)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন অমুসলিম লোককে হত্যা করবে, সে জান্নাতের সুঘ্রান পাবে না। অথচ জান্নাতের খোশবু চল্লিশ বছরের দূরত্ব থেকে পাওয়া যাবে। (বুখারী)
আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে নরহত্যর মতো এই জঘন্যতম কবীরা গুনাহ থেকে শতভাগ বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন, আমিন।
মো: ইমাম হোসাইন
পেশ ইমাম
ডেসটিনি জায়া সুরাউ, ব্রুনাই
2021-01-30 06:29:31
আপনার মতামত লিখুন :