চোখের নিচে কালি নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই। এই চোখের কালি দূর করতে কত কিছুই না করলেন। একটু কমলেও আবার আগের মতো হয়ে যায়। তাহলে উপায়? পরামর্শ দিয়েছেন মিডফোর্ড হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শামসুল হক।
এর কারণ গুলো জেনে রাখুন
১. ঘুমের অসুবিধা
কম ঘুম রক্ত সঞ্চালনকে ধীরগতির করে। এটি চোখের নিচে কালো দাগ বা ডার্ক সার্কেল তৈরির একটি কারণ। এটি কেবল চোখের নিচে কালো দাগ তৈরি করে না, ত্বকের আরো সমস্যা করে।
২. চোখের মেকআপ
এটি আরেকটি বিষয় চোখে ডার্ক সার্কেল তৈরি করার। চোখের মেকআপ ঠিকমতো না পরিষ্কার করলে কালো দাগ পড়তে পারে।
৩. পানিশূন্যতা
বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়, পানিস্বল্পতা ও চোখের নিচে কালো দাগের যোগ রয়েছে।
৪. খুব বেশি চোখ ঘষা
এটি আরেকটি প্রচলিত অভ্যাস চোখের নিচে কালো দাগ পড়ার। কারণ, এই অভ্যাস ত্বককে ক্ষতিগ্রস্ত করে। চোখ ঘষার কারণে ত্বকে প্রদাহ হয়ে কালো দাগ তৈরি হয়।
৫. গরম পানি দিয়ে মুখ ধোয়া
চোখের চারপাশের ত্বক একটু স্পর্শকাতর ও পাতলা। গরম পানি দিয়ে চোখ ধোয়া পিগমেন্টেশন তৈরি করতে পারে। এতে চোখের নিচে কালো দাগ হয়।
৬. ভালো পণ্য ব্যবহার না করা
এ ছাড়া ভালো পণ্য না ব্যবহার করার কারণেও অনেক সময় চোখে কালো দাগ পড়তে পারে। তাই চোখে ব্যবহারের জন্য কোনো পণ্য কিনলে সেটি যেন ভালো মানের হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
সমস্যা দূর করতে
১. পরিমিত ঘুমানোর অভ্যাস। অন্তত সাত-আট ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।
২. ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় এমন ওষুধ পরিহার করতে হবে।
৩. পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করুন। তবে রাতে ঘুমানোর আগে বেশি পানি খাওয়া অনুচিত।
৪. চোখ কচলানো একেবারে বাদ দিন। চোখে ঠান্ডা সেঁক দিতে পারেন।
৫. মাথার নিচে অতিরিক্ত বালিশ ব্যবহার করতে পারেন। এটি অনেক সময় চোখের ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে।
৬. প্রচুর সবুজ মৌসুমি শাকসবজি আর ফলমূল খান।
৭. ধূমপান থেকে বিরত থাকুন।
৮. দুশ্চিন্তা আর মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকুন।
৯. রোদে বাইরে বের হলে রোদচশমা ব্যবহার করতে পারেন।
ঘরে বসে সহজেই আপনি প্রাকৃতিক উপায়ে চোখের নিচের কালি দূর করতে পারেন।
১. পাতলা করে কাটা শসা চোখে দিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট চোখ বন্ধ রাখুন।
২. ব্যবহূত টি ব্যাগ ফ্রিজে রেখে সকালে ১০ থেকে ১৫ মিনিট চোখে রাখুন।
৩. পাতলা করে কাটা আলুর টুকরা ফ্রিজে রেখে চোখে রাখুন।
৪. আলু ও শসা সমপরিমাণে মিশিয়ে চোখের চারপাশে ক্রিম হিসেবে লাগাতে পারেন।
৫. টমেটোর রস অনেক ক্ষেত্রে উপকারী।
কখন চিকিৎসককে দেখানো জরুরি
চোখের কালো দাগ এবং ফোলা যদি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে এবং দৃষ্টিতে ব্যাঘাত ঘটে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। অযথা বাজারের বাহারি ক্রিমে আকৃষ্ট হবেন না। এতে উল্টো হিতে বিপরীত হতে পারে। নিয়মিত নিজের যত্ন নিন, হাসিখুশি থাকুন।
চোখের নিচে কালি পড়লে ভ্রু কুঁচকে যাওয়া স্বাভাবিক। নানা কারণে চোখের নিচে কালি বা ডার্ক সার্কেল হতে পারে। এর অন্যতম প্রধান কারণ বয়স বৃদ্ধি। বয়সের সঙ্গে ত্বকের কোলাজেন কমে গিয়ে ত্বক পাতলা হয়ে যায় এবং চোখের নিচে রক্তনালি রং পাল্টায়।
জিনগতভাবে কারও কারও চোখের নিচের ত্বক পাতলা ও ফ্যাকাশে, সামান্য কারণেই সেখানে সূক্ষ্ম রক্তনালিতে রক্ত জমে কালো দেখায়। অ্যালার্জিতে এই রক্তনালিতে হিস্টামিন নিঃসরণ হয় এবং চোখের নিচটা ফোলা ও কালচে দেখায়। ক্লান্তি, ঘুমের সমস্যা, অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে এই কালি পড়ার সমস্যা বাড়ে।
কী করবেন:
১. ঠান্ডা সর্দি বা অ্যালার্জি থাকলে রাতে দুটো বালিশ দিয়ে মাথা উঁচু করে শোবেন, যাতে রক্ত চোখের দিকে প্রবাহিত না হয়।
২. সকালে ঘুম থেকে উঠে ঠান্ডা পানিতে এক টুকরো তুলো ভিজিয়ে চোখের ওপর চেপে ধরুন। এতে জানালাগুলো সংকুচিত হবে ও কালচে রক্ত দূর হবে।
৩.ওমেগা থ্রি যুক্ত খাবার, যেমন সামুদ্রিক মাছ, বাদাম ইত্যাদি খাওয়া ভালো। এ ছাড়া প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ যুক্ত খাবার খান, যেমন লেবু, কমলা, মালটা, জাম্বুরা ইত্যাদি।
৪. সূর্যালোকের অতি বেগুনি রশ্মিতে ত্বকের কোলাজেন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই যারা রোদে ঘোরাঘুরি করে তাদের ত্বকে বেশি কালি পড়ে, দ্রুত বুড়িয়ে যায়। রোদে বের হলে তাই কম বয়স থেকেই সানস্ক্রিন, রোদচশমা ব্যবহার করতে হবে।
৫. চোখের নিচের কালি দূর করতে নানা ধরনের অ্যান্টি ডার্ক সার্কেল ক্রিম পাওয়া যায়। এগুলো মূলত কোলাজেন তৈরি ও ভঙুর রক্তনালিকে মজবুত করে। ভালো ব্র্যান্ডের ক্রিম ব্যবহার করা যায়।
৬. দুশ্চিন্তা দূর করে ঝরঝরে থাকুন, রাত জাগবেন না। প্রতিদিন অন্তত ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ভালো ঘুম দিন।
2021-01-30 06:29:31
আপনার মতামত লিখুন :