জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর স্বাধীনতার জন্য স্থানীয়দের ঝোঁক বেড়েছে


অনলাইন ডেক্স প্রকাশের সময় : মে ৪, ২০২১, ৯:১৪ অপরাহ্ন
জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর স্বাধীনতার জন্য স্থানীয়দের ঝোঁক বেড়েছে

উন্নয়ন ও জনগণকে খুশি করার নামে নয়া দিল্লী গত বছর অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যদা বাতিল ও ভূখণ্ডটিকে দ্বিখণ্ডিত করে দুটি ইউনিয়ন টেরিটরি প্রতিষ্ঠা করেছিলো। কিন্তু এতে উপত্যকার নিরাপত্তা পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি। বরং স্থানীয়রা আরো বেশি করে ভারতের শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য স্বাধীনতাকামী যোগ দিচ্ছে।

নিরাপত্তা বাহিনী এনকাউন্টার সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েও তরুণদের হাতে অস্ত্র তুলে নেয়া থেকে বিরত রাখতে পারছে না। ফলে কাশ্মীর উপত্যকায় মোতায়েন নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য বিষয়টি বড় ধরনের উদ্বেগের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এনডিটিভিকে এ কথা বলেছেন।

মন্ত্রণালয়ের একটি তথ্যপত্রে দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে অন্তত ৯০ তরুণ বিভিন্ন স্বাধীনতাকামী দলে যোগ দিয়েছে। এদের মধ্যে অর্ধেক যোগ দিয়েছে হিজবুল মুজাহেদিন গ্রুপে, ২০ জন লস্কর-ই-তাইবা, ১৪ জন জয়শে মোহাম্মদ, সাত জন আল বদর, দুইজন আনসার গাজওয়তুল হিন্দ ও একজন আইএসজেকে গ্রুপে। শেষোক্ত গ্রুপটি আইএসের মদতপুষ্ট।

তবে আরো উদ্বেগের বিষয় হলে প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে। এর আগে কোন তরুণ নিঁখোজ হলে বা জঙ্গিদলে যোগ দিলে তা পরিবার বা প্রতিবেশী অথবা সামাজিক গণমাধ্যমের কাছ থেকে জানা যেতো। কিন্তু এখন অনলাইনে এ ব্যাপারে কোন পোস্ট দেখা যায় না বা কোন পরিবারের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয় না বলে অপারেশনের দায়িত্বে থাকা এক সিনিয়র অফিসার জানিয়েছেন।

এনকাউন্টারে নিহত স্বাধীনতাকামীর পরিচয় যাচাই করে দেখা গেছে এদের বেশিরভাগ স্থানীয়। সত্যি কথা হলো এনকাউন্টারে নিহত স্বাধীনতাকামীর ৯০ শতাংশের বেশি স্থানীয় বলে ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

নর্থ ব্লকের এক সিনিয়র অফিসার বলেন, এ বছরের প্রথম সাত মাসে উপত্যকায় এনকাউন্টারে নিহত ১৩৬ স্বাধীনতাকামীর মধ্যে ১২১ জন স্থানীয় এবং মাত্র ১৫ জন বিদেশী। ২০১৯ সালে নিহত ১৫২ স্বাধীনতাকামীর মধ্যে ১১৯ জন স্থানীয় ছিলো।

তিনি আরো বলেন, কাশ্মীর উপত্যকায় ক্ষোভের আগুন জ্বলছে। তাই কতজন স্বাধীনতাকামী মারা গেলো তা বিবেচ্য নয়, এদের সংখ্যা কিছুতেই কমছে না।

দক্ষিণ কাশ্মীরের কুলগামে এনকাউন্টারে ২৪ স্বাধীনতাকামী মারা গেছে কিন্তু ২৩ জন স্থানীয় তরুণও স্বাধীনতাকামী যোগ দিয়েছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, সোফিয়ানে এক তরুণ ১০ আগস্ট স্বাধীনতাকামী দলে যোগ দেয় আর ১৯ আগস্ট এনকাউন্টারে নিহত হয়।

কাশ্মীরের আইজি বিজয় কুমার বলেন, জুন ও আগস্টে ৯০ জনের মতো স্থানীয় তরুণ স্বাধীনতাকামী দলে যোগ দেয়। এদের মধ্যে আমরা ৩৮ জনকে নিকেশ ও ১৫ জনকে আটক করেছি। ফলে সত্যিকার অর্থে এখনো তৎপর রয়েছে ৩৭ জন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের নথিতে দেখা যায় স্বাধীনতাকামীদের আশ্রয় ও মদত দানের জন্য ২১৬ জন স্থানীয়কে গ্রেফতার করা হয়েছে।

কর্মকর্তার বলছেন যে করোনা-লকডাউনের কারণে তরুণরা দ্রুত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। আরেক কর্মকর্তা বলেন, কোভিডের কারণে তরুণদের কাজকর্ম স্থবির হয়ে পড়েছে। স্কুল-কলেজ বন্ধ। ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন। বিনোদনের কোন ব্যবস্থা না থাকায় ব্যাপক তিক্ততা সৃষ্টি হয়েছে।

কর্মসংস্থানের অভাবও ক্ষোভের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

2021-05-04 21:14:33

ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন: