প্রায় অর্ধ শতাব্দীর মধ্যে প্রথমবারের মতো লাইন অব অ্যকচুয়াল কন্ট্রোলের (এলএসি) কাছে গুলিবর্ষণের ঘটনা তদন্ত করার চীনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ অনুসরণ করার মাধ্যমে চরম বিপজ্জনক পরিস্থিতি (উস্কানি সৃষ্টির দায় পুরোপুরি ভারতের) প্রশমিত করে বেইজিংয়ের সামনে নয়া দিল্লী মুখ রক্ষা করতে পারত। অবশ্য, তা করতে অস্বীকার করার কারণ হলো, মোদির কারছে দেশের জনসাধারণের কাছে মুখ রক্ষা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, এমনকি এর ফলে যদি চীনের সাথে বেহিসাবি যুদ্ধের বিপর্যয়ও সৃষ্টি হয়, তবুও।
শান্তির অমূল্য সুযোগ অগ্রাহ্য করেছে ভারত প্রায় অর্ধ শতক পর চলতি সপ্তাহের প্রথম দিকে গুলিবর্ষণের পর এলএসিতে ভারত ও চীনের মধ্যকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি দ্রুত অবনতিশীল হচ্ছে। পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) মুখপাত্র ঝাং শুইলির মতে, ভারতীয় বাহিনী আগ্রাসীভাবে সীমান্ত অতিক্রম করেছে, তারপর তারা চীনা সৈন্যদের দিকে সতর্কতামূলক গুলি বর্ষণ করেছে।
জবাবে ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সেজন্য তিনি অবিলম্বে বিপজ্জনক তৎপরতা বন্ধ করতে, অবিলম্বে ক্রস-লাইন সদস্যদের প্রত্যাহার করতে, কঠোর তদন্ত ও গুলিবর্ষণকারী সদস্যকে শাস্তি দেয়ার জন্য ভারতীয় পক্ষের প্রতি অনুরোধ করেন। এর ফলে নয়া দিল্লী এই বিপজ্জনক পরিস্থিতি প্রশমিত করে বেইজিংয়ের সামনে মুখ রক্ষা করার অমূল্য সুযোগ পেয়েছিল। উল্লেখ্য, উস্কানি দিয়ে এই পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য পুরোপুরি দায়ী ভারত। এটি হলো চীনকে সংযত করার কোয়াডের সমন্বিত প্রয়াস।
মোদির বার্তা
এলএসিতে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের বিষয়টি তদন্ত ও এ ব্যাপারে থাকা দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা লঙ্ঘনকারী ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়ার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত শান্তি প্রতিষ্ঠায় নতুন গতির সঞ্চার করা যেত। কিন্তু মোদি তা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। কারণ তার কাছে তার দেশের জনসাধারণের সামনে মুখ রক্ষা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে।
মোদি তার সামরিক বাহিনীর ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন কিনা (উগ্র দেশপ্রেমিক ফ্রন্টলাইন বাহিনী স্বাধীনভাবে উদ্যোগ নিয়ে সতর্কবার্তামূলক গুলি করে পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে উত্তেজিত করেছিলেন কিনা) বা সামরিক বাহিনী তা করতে বেসামরিক সরকারের কাছ থেকে আগে অনুমতি পেয়েছিল কিনা তা কোনো বিষয় নয়। বিতর্কহীন ফলাফল যা এসেছে তা হলো, ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী মানুষটি এই বার্তা পাঠিয়েছেন যে তিনি তাদের আগ্রাসী তৎপরতাকে সমর্থন করছেন তাদের কাজের সমালোচনা না করে বা তদন্ত না করে। তা করা হয়েছে যুদ্ধ করার জন্য জাতীয় ঐক্য জোরদার করার জন্য।
ভুল কৌশলগত হিসাব
১৯৬২ সালের পর যেকোনো সময়ের চেয়ে এখনই ভারত-চীন উত্তেজনা অনেক বেশি মারাত্মক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। এর কারণ হলো মোদির কৌশলগত হিসাব। এই হিসাব অনুযায়ী, বেসামরিক সামরিক ভাঙন (সত্য হোক বা না হোক) চীনের সাথে শান্তির পথ সৃষ্টি করলেও তা ক্ষমতাসীন বিজেপির জন্য অসুবিধাজনক। বরং অনিয়ন্ত্রিত সঙ্ঘাতই তাদের জন্য সুবিধাজনক।
এমনকি এমন হিসাবও করা হতে পারে যে ভারত যদি অনুমিতভাবে হেরেও যায়, তবুও চীনকে সংযত করার জন্য কোয়াডের পক্ষ থেকে সামরিক তৎপরতা চালিয়ে ভারত সাহসিতকার পরিচয় দিয়েছে। আর এর পুরস্কার হিসেবে ভারতে আরো বেশি বিনিয়োগ চলে আসতে পারে, বিশেষ করে চীন থেকে সরে যাওয়া কোম্পানিগুলো ভারতে চলে যেতে পারে।
সর্বোত্তম যা ঘটতে পারে
উত্তেজনা যদি বাড়তেই থাকে, তবে এর পরিণামে ব্রিকস, এসসিওর মতো সংগঠনগুলো নিশ্চিতভাবেই অকার্যকর হয়ে পড়বে। অবশ্য এর অনেক কিছু নির্ভর করবে রাশিয়ার ওপর। রাশিয়া যদি চীন ও ভারতের সাথে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে, তবে অন্তত তার স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
শেষ কথা!
এখন পরিস্থিতি যে দিকেই যাক না কেন, ভারত তার মুখ রক্ষার সুযোগ হাতছাড়া করেছে।
তদন্ত করার প্রস্তাব দেয়ার মাধ্যমে মোদিকে ওই সুযোগ দিয়েছিল চীন। এই সুযোগ হাতছাড়া করার পর এশিয়ার ভূরাজনীতি আর কখনো আগের মতো থাকবে না। ফলে সব বিশ্লেষকই এই ধারণা করতে পারেন যে ভারত-চীন বৈরিতা আগামীতে থাকবে এবং সম্ভবত আরো তীব্রই হবে।
2021-05-04 18:24:24
আপনার মতামত লিখুন :